শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শাটারে গল্প খোঁজেন আরিফুল আমিন

মো. আশরাফুল ইসলাম সুমন
  ০৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০
শাটারে গল্প খোঁজেন আরিফুল আমিন

এসএম আরিফুল আমিন একজন বাস্তববাদী তরুণ। ক্যামেরার পেছনের মানুষ। হাতে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলেন দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে। প্রকৃতি ও জীবনবোধকে ফ্রেমবন্দি করা তার নেশা। কাছে-দূরের সুজন ও স্বজনের কাছে পস্নাবন নামেই পরিচিত। একজন কবির যেমন অহর্নিশ ভাবনায় খেলে কবিতার শব্দ ছন্দের খেলা। তেমনি তার মস্তিষ্কে খেলে সৃষ্টিশীল ছবির নান্দনিক আইডিয়া। তিনি ছবি তুলতে ভালোবাসেন, ছবির গল্প বলতে ভালোবাসেন। ফটোগ্রাফির বিভিন্ন ধারায় তার সবচেয়ে প্রিয় স্ট্রিট ফটোগ্রাফি। দেশ এবং বিদেশি ফটোগ্রাফারের ছবি দেখেন নিয়মিত। ছোটবেলা থেকেই তার বন্ধুরা বিকালবেলা যখন খেলতে বের হতো তিনি তখন বের হতেন আপন মনে ছবি তুলতে। যদিও তখন তার নিজস্ব কোনো ক্যামেরা ছিল না। ধার করা ক্যামেরা ও মুঠোফোন ছিল একমাত্র ভরসা।

আরিফুল আমিন বলেন 'আমি খুব ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরা ও ছবির প্রতি অদ্ভুত এক টান অনুভব করি, বলতে পারেন এই একটি কাজ (ছবি তোলা) আমি মন থেকে যত্নের সঙ্গে করি। খুব ছোটবেলায় গ্রামের পাশে বিখ্যাত পরিচালক আবু সাঈদির শুটিং-এ গিয়ে ক্যামেরা লেন্স দেখতাম। পত্রিকায় পাতা থেকে সুন্দর ছবি কাঁচি দিয়ে কেটে ডায়রির মধ্যে সযত্নে আগলে রাখতাম। বন্ধুরা বিকালে যখন খেলায় মত্ত থাকত আর আমি ক্যামেরায় বুঁদ হয়ে থাকতাম।'

আরিফুল আমিনের পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার (যমুনা নদীভাঙন কবলিত) পুখরিয়া গ্রামে।

আরিফুল আমিন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গস্নাস অ্যান্ড সিরামিকসের গস্নাস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করেছেন।

আরিফুল আমিনের ছবি তোলার শুরুর গল্প কিছুটা ধূসর। মাত্র আট বছর বয়সে প্রথম ক্যামেরার প্রেমে পড়েন তিনি। শহর থেকে বেড়াতে আসা কাজিনের ক্যামেরা প্রথমবারের মতো হাতে নেওয়ার সৌভাগ্য হয়। সেই থেকেই ক্যামেরার প্রতি এক অদ্ভুত এক টান অনুভব করেন তিনি। এরপর নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফটোগ্রাফিতে প্রবেশ করেন তিনি। ছোটবেলায় বাটন ফোনের ক্যামেরায় ছবি তোলায় হাতেখড়ি। ফটোগ্রাফিতে আসার পেছনে মায়ের অবদান সব থেকে বেশি। আরিফুল আমিনের মা শিল্পমনা মানুষ। স্বামীকে বুঝিয়ে সন্তানের জন্য প্রথম ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। শিক্ষক পিতা সন্তানের শখের প্রতি সায় দিয়ে হাতে ধরে দিয়েছিলেন ক্যামেরা। তারপর থেকে ক্যামেরার নিয়নের আলোয় খুঁজে পেয়েছেন স্বপ্নের ঠিকানা। আরিফুল আমিন গর্ববোধ করেন যে তিনি একজন ফটোগ্রাফার। তার পরিচিত ব্যাপকতা পেয়েছে নবীন ফটোগ্রাফার হিসেবে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। দেশের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত ছাপা হচ্ছে তার তোলা নান্দনিক সব ছবি।

দেশের প্রথম সারির প্রায় সব পত্রিকায় তার তোলা অসংখ্য ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'ফটোগ্রাফি'তে তার করোনা মহামারি নিয়ে ছবি গল্প প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ তার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।

দিনে দিনে আরিফুল আমিন ফটোগ্রাফিতে ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। বর্তমানে তার সেরা অর্জনের মধ্যে রয়েছে-

সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রথম, হেল্প দ্যা ফিউচার ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রথম ও

বাংলাদেশে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আয়োজিত ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানসহ নানা পুরস্কার।

নিজ উপজেলা ধুনটে প্রতিষ্ঠা করেছেন ধুনট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। ধুনট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক তিনি। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের ইনস্টিটিউট অফ গস্নাস অ্যান্ড সিরামিকস ফটোগ্রাফি ক্লাবের সভাপতি হিসেবে।

তার চাওয়া ছবি হোক সমাজের আয়না। তার নিজ হাতে গড়ে তোলা সংগঠন ধুনট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি একদিন বিশ্বমানের একটি সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এটা তার প্রত্যাশা।

সেই সঙ্গে ছবি তোলার মাধ্যমে নিজেকে এবং নিজের দেশকে তুলে ধরতে চান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে