শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বন্যার্তদের সেবায় 'সেবা ফাউন্ডেশন'-এর সঙ্গে যুগলবন্দি 'হৃদয় ফাউন্ডেশন'

ম জান্নাতুল ফেরদৌস আঁখি
  ১৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০
বন্যার্তদের সেবায় 'সেবা ফাউন্ডেশন'-এর সঙ্গে যুগলবন্দি 'হৃদয় ফাউন্ডেশন'

'মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য'' ভূপেন হাজারিকার লেখা এই গানের সার্থকতার জ্বলন্ত প্রমাণরূপে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যারা এই বন্যায় দিন-রাত এক করে ছুটে চলছে পানিবন্দি মানুষের দুঃখভার লাঘব করতে। সিলেটের জাফলং-এ পানি যখন বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে এবং একই সঙ্গে প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে ঘর-বাড়িসহ পশু-পাখি তখন সবকিছু উপেক্ষা করে বন্যার্তদের মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'সেবা ফাউন্ডেশন'। দানবীর মানুষের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে নৌকা করে পৌঁছে দিয়েছে এ পাড়া থেকে ও পাড়ায়। সে সময় যখন 'সেবা ফাউন্ডেশন' ত্রাণদাতা খোঁজ করছিল তখনই ঢাকার 'হৃদয় ফাউন্ডেশন' তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

'হৃদয় ফাউন্ডেশন'-এর প্রতিষ্ঠাতা আল আনসার হৃদয়, তার সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে ত্রাণসহকারে ছুটে আসে জাফলং-এ এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে সেবা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে। উভয় সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা সেবাদানের উদ্দেশ্যে হাতে হাত রেখে কাঁধে ত্রাণের বস্তা নিয়ে ছুটে চলে অসহায় মানুষের কাছে। নিজেদের শত ব্যস্ততার মধ্যেও সবকিছুকে উপেক্ষা করে ছুটে চলে ত্রাণ হাতে পানিবন্দি মানুষের দুঃখ লাঘব করতে। তারা নিজ হাতে ত্রাণ বহন, প্যাকিং ও বিতরণ করেছেন। দেশের দুই প্রান্তে থাকা দুদল মানুষ, যাদের একে অপরের সঙ্গে কখনো সাক্ষাৎ কিংবা পরিচয় হয়নি, তারা অল্প সময়েই একে অপরের ভরসা এবং বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন। যার সেতুবন্ধন হলো মানবতা।

এ সম্পর্কে আল আনসার হৃদয় জানান 'আমরা যতটা করতে পেরেছি, তার অংশীদার যদি করতে হয়, তবে সেবা ফাউন্ডেশনই ৫০% অংশীদার। কারণ, অচেনা জায়গায় যেখানে আমরা সন্দিহান ছিলাম, আমরা ঠিকঠাক ত্রাণ পৌঁছাতে পারব কিনা সেখানে ওনাদের সহযোগিতায়, আমরা এমনসব জায়গায় ত্রাণ সহায়তা দিতে পেরেছি যেখানে কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। তাছাড়া তাদের আপ্যায়ন, আর সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখে সত্যিই মুগ্ধ না হওয়ার উপায় নেই।'

মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ত্রাণ বিতরণ শেষে উভয় ফাউন্ডেশন ছুটে চলে ঘর হারানো মানুষের দ্বারে দ্বারে। কোথাও বন্যার হিংস্র কবলে চালা ভেসে গিয়েছে, কোথাও বা ঘরের অর্ধেকটা গর্ত হয়ে গিয়েছে। মানুষের শেষ সম্বল হারানোর এই আহাজারি কড়া নাড়ে উভয় সংগঠনের সদস্যদের মনে। স্বেচ্ছাসেবীরা চেষ্টা চালিয়ে যায় যে কোনো উপায়ে তাদের ঘর মেরামতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। আজ পর্যন্ত তারা ১টি ঘর মেরামত ও ১টি নতুন ঘর বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চোখে বান থাকলেও ওই সংগঠন দুটির অবদানে হাসির ঝিলিক পরিলক্ষিত হচ্ছে বন্যার্তদের চোখে-মুখে।

সততার সঙ্গে মানুষকে ভালোবেসে যারা ছুটে চলে তারাই হৃদয় ছোঁয়া বন্ধনের উদ্ভাবন করতে পারে। মানুষ সন্ধান পায় জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং দেশের প্রতি ভালোবাসার। যা উঠে আসে 'সেবা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন আজাদের বক্তব্যে। তিনি বলেন, 'একজন সংগঠক হিসেবে যদি বলি, হৃদয় ফাউন্ডেশন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং সৎ একটি সংগঠন। ওনাদের সব স্বেচ্ছাসেবকরা খুবই পরিশ্রমী এবং আন্তরিক। ওনাদের কাজ দেখে প্রত্যেককেই একেকজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক বলে মনে হয়েছে। আলস্নাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিক।'

ক্ষুধার হাহাকারে পেট যখন মরুভূমির মতো তখন এই সংগ্রামী সেবকদের উপহার দেওয়া দু'মুঠো খাবার যেন এক পসরা বৃষ্টি। এই তরুণদের থেকে পাওয়া ভালোবাসা এবং মানবিকতা বানভাসিদের পেট না ভরলেও মন ভরে গিয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ঢাকা থেকে ছুটে আসা সেবকদের সেবা কখনই ভুলবে না জাফলংবাসী। তারা স্থান করে নিয়েছে হৃদয়ের গহিনে। সেই সঙ্গে সেবা ফাউন্ডেশন বিপদ-আপদে সব দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকবে এই আস্থায় আশ্বস্ত এলাকাবাসী সবাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে