বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে ভাবনা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ দিবসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এ বিশ্বকে বাঁচিয়ে পরিবেশকে সংরক্ষণ করার অঙ্গীকার নিয়ে জনসচেতনতার মাধ্যমে প্রকৃতি সংরক্ষণের সচেতনতার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৮ জুলাই দিবসটি বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আর বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন
মোহাম্মদ এনামুল হক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ চট্টগ্রাম কলেজ
  ২৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০

'প্রকৃতিকে ধ্বংসের মুখ থেকে রক্ষা করতে হবে'

আফরোজা আক্তার পপি

শিক্ষার্থী, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ

যে ব্যক্তি প্রকৃতিকে ভালোবাসতে জানে না,

সে কখনো প্রকৃতির সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না!

প্রকৃতি আলস্নাহর অপরূপ সৃষ্টি। গাছ-পালা, বন-জঙ্গল, আলো, পানি, বাতাস, পাহাড় ইত্যাদি এ সব প্রকৃতির দান। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির খুব প্রয়োজন।

অথচ মানুষ তা বুঝতেই পারে না! গাছ, পাহাড় কেটে নিজেদের মতো করে বড় অট্টালিকা, দোকান, শপিংমল, রাস্তা-ঘাট তৈরি করে। গাছ, পাহাড় কেটে নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে তার বোধ নেই; কারণ একটাই তা হলো- 'চাহিদা'! চাহিদার কখনো শেষ নেই, তাই মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য বিলীন করে, চাকচিক্যের সৌন্দর্য গড়ে তোলে। আমরা কি পারি না প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বাঁচিয়ে রাখতে?

২৮ জুলাই বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। চলুন প্রকৃতি যেমন আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, আমরাও তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করি! মনে রাখতে হবে আমাদের-

গাছের তরে ছায়া, তা হলো প্রকৃতির মায়া-

অক্সিজেন দেয় বাতাস, ছড়ায় স্নিগ্ধতার সুবাস।

'সচেতনতার মাধ্যমেই প্রকৃতিকে রক্ষা করা সম্ভব'

তামান্না সুলতানা নিশি

শিক্ষার্থী, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা

প্রকৃতি আলস্নাহ সবচেয়ে বড় নিয়ামত। সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত স্বাভাবিক ও নৈসর্গিক বস্তুতে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। জীব বেঁচে থাকার জন্য ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকৃতি বিশাল ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক পরিবেশে নিবিড় বন্ধনেই গড়ে ওঠে মানবসভ্যতা। সৃষ্টিকর্তার দান এই সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, গাছপালা, আলো, বাতাস, নদী, পাখি ইত্যাদি না থাকলে মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত। প্রকৃতির প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে জীবনের সঙ্গে জড়িত এবং নির্ভরশীল। প্রকৃতি ছাড়া জীবন কল্পনা করা অসম্ভব। তাই প্রকৃতি রক্ষা করা ও জনসচেতনতা আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

প্রতিনিয়তই মানুষ জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হচ্ছে, নানা ধরনের চাহিদা বাড়ছে। দেশ উন্নয়ন করছে সাথে প্রকৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ দূষণ, নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে মানুষ। অন্যদিকে বনাঞ্চল কমে আসায় বনের পাখি ও প্রাণী সাথে সাথে ভারসাম্য, সৌন্দর্য কমে আসছে। প্রকৃতি সংরক্ষণের উপাদান ও গুণগত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাথে মানবজাতির বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহার করতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, সম্পদের পূর্ণব্যবহার ও সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে। তাই মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলেও প্রকৃতি সংরক্ষণ করতে হবে। এই কাজ শুধু সরকারের না আমাদের সবার। সবাই মিলে সচেতন হলে দেশের প্রকৃতিকে রক্ষা করা কঠিন কোনো কাজ নয়।

'প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার'

সাইদুন্নিছা তোহ্‌ফা

শিক্ষার্থ, চট্টগ্রাম কলেজ

তথ্য-বিজ্ঞানের এই যুগে আজ সর্বত্রই নগরায়ণের ছোঁয়া। যার প্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রার মান, বাড়ছে মানুষের নানামুখী চাহিদা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা প্রতিনিয়ত জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রকৃতি ধ্বংস করে চলছি। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। ইতোমধ্যেই পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে অনেক বিরল প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সময়মতো রোদ নেই, বৃষ্টি নেই। বর্তমান সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা, প্রকৃতির উপর অত্যাচার, অবিচার ও যথাযথ সংরক্ষণ না নেওয়ার ফল। বনজঙ্গল নিধনের ফলে আমরা শুধু আমাদের সবুজ, সতেজ প্রকৃতিকে হারিয়ে ফেলছি না, হারিয়ে ফেলছি পৃথিবীতে আমাদের টিকে থাকার অস্তিত্বকে। কিন্তু প্রশ্ন যখন নিজেদের অস্তিত্বের, সে ক্ষেত্রে প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়-দায়িত্ব কার উপর বর্তায়? সে ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে প্রকৃতি সংরক্ষণের এই গুরুদায়িত্ব আমার, আপনার, সবার। পৃথিবীর সাড়ে সাত বিলিয়ন মানুষ যদি একটি করে গাছ লাগায়, তবে কয়েক দশকের মধ্যেই আমরা প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারি। সবুজ প্রকৃতি সুরক্ষিত থাকলে, অনায়াসেই সংরক্ষিত থাকবে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও প্রকৃতি। তাই প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যাপকভাবে বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকারি, বেসরকারিভাবে ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধান চালাতে হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের উদাসীনতাগুলো উদ্যমে পরিণত হোক-বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে এটাই হোক সবার প্রত্যাশা।

'প্রকৃতি সংরক্ষণে আইনের কঠোরতা প্রয়োজন'

নুসরাত জাহান মিশমা

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

বতর্মানে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয় প্রকৃতি সংরক্ষণ। প্রতিটি মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পরিবেশের প্রয়োজন। সুস্থ পরিবেশের মধ্যদিয়ে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়; কিন্তু আমাদের অসচেতনতার কারণে নানাভাবে প্রকৃতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। প্রকৃতির ক্রমবর্ধমান দূষণ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা চিন্তিত।

যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপন, বৃক্ষ নিধন, রাসায়নিক গ্যাসের অপব্যবহার ইত্যাদির প্রভাবে কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়াও অনেক ক্ষতিকারক গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ওজোন স্তর ক্ষয় হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের দেশগুলো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর নিম্নাঞ্চলের দেশগুলো সমুদের নিচে তলিয়ে যাবে। প্রতি বছর প্রকৃতি সংরক্ষণের প্রতি সচেতনতার উদ্দেশ্যে ২৮ জুলাই 'বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস' উদযাপন হয়। নানাবিধ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এই দিবসটি উদযাপিত হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণের সবচেয়ে বড় উপায় হলো ব্যক্তি সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের কঠোরতা প্রয়োগ।

'গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান' এই স্স্নোগানকে সামনে রেখে প্রকৃতি সংরক্ষণে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়।

'নিজের স্বার্থে প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করুন'

নাম-তাহুরা ফেরদৌসী

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

আজ বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। সৃষ্টিকর্তা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য আর সুস্থ, সুন্দর জীবনযাপনের জন্যই প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। বেঁচে থাকার জন্য আমরা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল আর প্রকৃতি সংরক্ষণ প্রতিটি ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু কিছু মানুষের অসচেতনতা, অদূরদর্শিতা আর অমানবিক আচরণের কারণে সুন্দর এ পৃথিবী যেন প্রাণিজগতের বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে। প্রকৃতিতে তৈরি হচ্ছে ভারসাম্যহীনতা। প্রতিবছর বায়ুদূষণ, পরিবেশদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা, দাবানলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন আমরা হই। ফলে অকালে মৃতু্য, বাস্তচু্যত ও বিভিন্ন রোগাক্রান্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা মূলত বৃক্ষনিধন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রভৃতি মনুষ্যসৃষ্ট কার্যকলাপের ফল।

আসুন আমরা নিজেদের স্বার্থেই প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করি। বৃক্ষ রোপণ বৃদ্ধি, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, ভূমি ক্ষয়রোধ, সর্বোপরি প্রকৃতি সংরক্ষণে সচেতন মনোভাব তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে আগামী দিনে এই পৃথিবী মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বাসযোগ্য হবে কিনা তা নির্ভর করবে প্রকৃতিকে আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করতে পেরেছি তার উপর। তাই বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস হোক পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার সচেতন মনোভাব।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে

মরিয়ম খানম সেতু

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

মানুষ ও প্রকৃতি এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ, কেবল মানুষ বললে বিস্তারিত অনুধাবনটা সুন্দর হবে না, তাই বলি মানব মনের সঙ্গে প্রকৃতির রয়েছে এক অকৃত্রিম সখ্যতা। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির কী অপার মেলবন্ধন প্রকৃতি ও মানব সম্পর্কের। প্রকৃতি-পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে ভারসাম্যতাই আমাদের দান করে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপন পদ্ধতি। এ ছাড়া বৃক্ষ তার ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটিয়ে তোলে মানবের তরে ফুল-ফলাদি দানের মাঝে।

নানারকম পুষ্টিকর খাদ্য পেয়ে থাকি আমরা বৃক্ষ থেকে, এ ছাড়া ঘরের আসবাবপত্রসহ প্রায় মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রয়েছে প্রকৃতি। সর্বোপরি সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের দেয় প্রশান্তির তৃপ্তি, মানসিক শান্তি। সুন্দর প্রকৃতি নিমিষেই দূর করে তোলে মানসিক অবসাদ, ফিরিয়ে দেয় আপন সজীবতা। এতসত্ত্বেও বড়ই আফসোস, যে প্রকৃতি মানুষের কল্যাণের তরে কাজ করে যায় সেই প্রকৃতিকে মানবসমাজ প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে যায়, এর চেয়ে বড় অজ্ঞতা আর কিছু নয়! প্রতিনিয়ত বৃক্ষ নিধন, ফসলের জমিতে অতিরিক্ত সারের ব্যবহার, পাহাড় কাটা, কল-কারখানার কালো ধোঁয়া আমাদের নিয়ে যাচ্ছে হুমকির দিকে। এ সব কারণে একদিকে পৃথিবীতে বাড়ছে তাপমাত্রা, সেই সঙ্গে বিষাক্ত খাবার গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে, এ ছাড়া নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রাণভরে নির্মল বায়ু নিতে পারছিনা। সবমিলিয়ে জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে