শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনার পাড়ে এক বিকেল

প্রথমে মেঘনা রিসোর্টটি পরিদর্শন করলাম। রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্টটির পরিবেশটা খুবই মনোরম ছিল। দেশি ও চাইনিজসহ বিভিন্ন খাবারের সমাহার রয়েছে। খাবারগুলো বেশ সুস্বাদু আর মজাদার তবে মূল্যটা একটু বেশি
ম মো. ওসমান গনি
  ২৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ঈদের সন্ধ্যায় ভোলা সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে আনমনা মনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে হলো রাসেলকে ফোন দিই। এক সঙ্গে আড্ডা দেবো। ফোন দেওয়ার পর ও বলল আজ সম্ভব না কাল আসব এবং তামিম, জিহাদসহ সবাইকে ফোন দিয়ে নিয়ে আসব জমিয়ে ঘোরাফেরা ও আড্ডা হবে। এর কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল জিহাদের সঙ্গে। ওরে এই বিষয়ে বলার পর আগ্রহ দেখিয়ে বলল বিশ-পঁচিশ জন রেডি কর।

যথারীতি রাসেল ও জিহাদ সবাইকে জানালো। আছরের সময় রাসেল কল দিল বের হওয়ার জন্য। দ্রম্নত প্রস্তুত হয়ে বাসা থেকে বের হলাম। সবাই সদর থেকে এসে আমার বাসার কাছে থামল। সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে পরাণগঞ্জ বাজার থেকে রওনা হলাম গন্তব্যে। ধারণা ছিল সদরের কোথাও এই মেলবন্ধনটা হবে। তখন জানতে পারলাম মূলত সদর না আজকের গন্তব্য হলো ইলিশা মেঘনার পাড় ও মেঘনা রিসোর্ট। ভোলা আলিয়ার ক্লাসমেট ছাড়াও আরও কয়েকজন ছিল। তাদের সঙ্গে পরিচিত হলাম। চেনা-জানা সড়ক পেরিয়ে গাড়ি পৌঁছাল গন্তব্যে।

জিহাদ, আরিফ, রাসেলসহ কয়েকজনের মূলত মেঘনা রিসোর্টটি দেখার আশাটাই বেশি ছিল। প্রথমে মেঘনা রিসোর্টটি পরিদর্শন করলাম। রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্টটির পরিবেশটা খুবই মনোরম ছিল। দেশি ও চাইনিজসহ বিভিন্ন খাবারের সমাহার রয়েছে। খাবারগুলো বেশ সুস্বাদু আর মজাদার তবে মূল্যটা একটু বেশি। মাচাংয়ে তৈরি করা হয়েছে এটি। ছোট ছোট কটেজ করে মাঝখানে একটি গোল?টেবিল ও চারপাশে কয়েকটি চেয়ার দিয়ে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে মানুষ খেতে খেতে বিস্তৃত মেঘনার লাবণ্যতা অবলোকন করতে পারবে। এ ছাড়া একটি লাভ ফটোফ্রেম রয়েছে। সবমিলিয়ে নদীর পাড়ে খুবই সুন্দর একটি রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট এটি। তামিমের বাসা ইলিশা হওয়ায় ও আমাদের জন্য আগে থেকেই ঘাটে অপেক্ষা করছিল। অতঃপর আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে নদীর পাড় হয়ে সামনে এগোতে থাকলাম। অপরূপ মেঘনার সৌন্দর্য বর্ণনায় শেষ হওয়ার মতো নয়। দেশের সর্ব বৃহৎ নদী হলো মেঘনা। বিস্তৃত মেঘনার ওপাড় দেখা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল এটা নদী নয় কোনো সাগর। পানির স্রোত ছিল ভয়ানক। লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযানগুলো স্রোতের তেজস্বীতায় প্রতিকূলে এগোতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সঙ্গে ছিল সমুদ্রের মতো ঢেউয়ের গর্জন। ঢেউয়ের শোঁ শোঁ গর্জন কানে বেশ? মধুরই লাগছিল। দুপুরের শেষ ভাগের রৌদ্রের তেজস্ক্রিয়তা ও বাতাসের তীব্রতা দুটোই ছিল। রৌদ্রের ঝলকানিতে থাকলেও বাতাসের কারণে তার প্রভাব পড়েনি শরীরে।

এরই মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম অনেক দূরে। সেখানে মানুষের সমাগম ছিল না। সবাই উৎফুলস্নতার সঙ্গে এ পর্যন্ত হেঁটে আসতে পারলেও যথেষ্ট বেগ পোহাতে হয়েছে জিহাদকে। ফটো তোলা নিয়ে রাসেল আর জিহাদের শুরু হলো সাপে নেউলে লড়াই। দুজনের কেউই কাউকে ফটো তুলতে দেবে না। দীর্ঘক্ষণ ফটোশুট চলছিল। এরই মধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি। সবাই ভোঁ দৌড়। এর মধ্যখানে ঘটে গেল এক অপ্রীতিকর ঘটনা। কিশোর গ্যাং-এর দুই গ্রম্নপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বৃষ্টি থামতে থামতে মাগরিব হয়ে গেল। মাগরিবের পর আবার নদীর পাড়ে গেলাম। জিহাদের কথা অনুযায়ী পস্ন্যান? হলো সবাই ১০০ টাকা করে দেবে এটা দিয়ে কিছু খাওয়া হবে। আর এটা জমা রাখা হবে আরিফের কাছে। টাকা সবাই দিল তবে জমা আরিফের কাছে নয় আমি নিজের কাছে রেখেছিলাম। এইখানে কিছুটা কূটচালের আশ্রয় নিতে চেয়েছিল জিহাদ। টাকা আমার কাছে নয় আরিফের কাছেই থাকবে এই দাবির উপর পুরোপুরি জোর দিল জিহাদ। প্রায় ঘণ্টাখানেক সবার মধ্যে বাকযুদ্ধ হলো। অবশেষে শর্তারোপ করে আরিফের কাছেই দেওয়া হলো। অতঃপর সবাই চিকেন নিলাম। মেঘ ও চাঁদের এক ফালি আলোয় মিশ্রিত খোলা আকাশের নিচে ও বিস্তর মেঘনার ঢেউয়ের গর্জন মিশ্রিত অপরূপ সৌন্দর্যের সম্মিলনে ঝড়ো হাওয়ায় সবাই কিছু খুনসুটি ও গল্পের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করলাম। থিওরি অফ রিলেটিভিটির সময় পরিবর্তনের তত্ত্ব নিয়ে আরিফের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ তর্ক হয়ে গেল। গল্পে আড্ডায় জমে থাকার ফলে সময়ের দিকে তাকানোর ফুরসত পাইনি। সময় অনেক হয়ে গিয়েছিল। সবার থেকে সবাই বিদায় নিয়ে রওনা হলাম আপন নীড়ের উদ্দেশে।

রক্তের সম্পর্কের বাইরে অন্যতম প্রিয় আরেকটি সম্পর্ক হলো বন্ধুত্ব। কালের অববাহিকায় বিভিন্ন জন বিভিন্ন কাজ ও পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে গেছে। চলে গেছে অনেক দূরে। সব ব্যস্ততার মধ্যে ঈদের এই ছুটিতে এক অফুরন্ত মজাদার সময় কাটালাম আমরা সবাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে