শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছুটি শেষে আবার মুখরিত জবি ক্যাম্পাস...

ম মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  ৩০ জুলাই ২০২২, ০০:০০

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য জীবন মানেই ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর পড়াশোনার চাপে ক্লান্ত জীবন। যতক্ষণ ক্যাম্পাসে থাকে ততক্ষণ যেন দম ফেলার হুঁশ থাকে না। ক্লান্তিময় এ জীবনে যখন ঈদের মতো অত্যন্ত আনন্দের, উৎসবের, খুশির একটা মুহূর্ত আসে, সঙ্গে মোটামুটি বিরতির একটা ছুটি, তখন সেটা কতটা প্রশান্তির আর সুখের তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ঈদের ছুটি পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীরা ফিরে যায় পুরনো স্মৃতিঘেরা প্রিয়জন আর শৈশবে। শুরু হয় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা, প্রিয়জনদের সঙ্গে মধুর সেই সুখের মুহূর্তের জন্য ছুটে চলা। একটা সময় কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্তের দেখা মেলে, আবারও পুরনো সেই মুহূর্তের মতো কিছু সুন্দর মুহূর্ত আর মধুর সময় ফিরে আসে। শহরের ইট, পাথরের দেয়াল থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামের সবুজ, শ্যামল ভূমিতে জীবনটা বড়ই উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি শেষে আপনজনের মায়া ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা সবাই ফিরেছে আপন গন্তব্যে, আর যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সব আবেগ, অনুভূতি, মায়া বিসর্জন দিয়ে আবার ফিরে এসেছে বাস্তবতার সেই ব্যস্ত গন্তব্যে। বাংলাদেশের অন্যান্য ক্যাম্পাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠিক এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আড্ডার ছলে লেখাপড়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।

মোট বারো দিনের বিরতি শেষে অবশেষে শিক্ষা জীবনের ব্যস্ত দিনগুলোতে ফেরত আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের এই ফিরে আসা ক্যাম্পাসকে করে তুলেছে এক মোহনীয় অনন্য সুন্দর স্থানে। এই দিনগুলোতে জনমানবশূন্য ক্যাম্পাস এতদিন পরে আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা যে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণশক্তি, এখানকার শিক্ষার্থীদের প্রাণচঞ্চল পদচারণায় মুখর ক্যাম্পাস সেটা বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করে দেয়। সাড়ে সাত একরের মায়াভরা ক্যাম্পাসে হাজারো শিক্ষার্থীর ভিড় আবার ফিরিয়ে নিয়েছে সেই প্রাণশক্তি।

ঈদের পর প্রথম দুয়েকদিন সাধারণত পুরোদমে ক্লাস শুরু হয় না। কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের টিকিট বিড়ম্বনার কারণে আসতে একটু দেরি হয়। যার কারণে এ সময়টাতে বিভিন্ন ধরনের আড্ডা-গল্পেই মেতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট যেমন শান্ত চত্বর, টিএসসি, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কলা অনুষদ চত্বর, কাঁঠালতলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের বাইরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে, বিশ্ববিদ্যালয় বাসের ভেতরে, ক্যান্টিনে, ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে, অবকাশ ভবনে, শহীদ মিনারের সামনে, বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আড্ডা এবং খোশগল্পের মধ্যদিয়ে যেন হয়ে ওঠে বিনোদনের এক জীবন্ত উৎস।

বন্ধু-বান্ধবী, ভাইয়া-আপু কিংবা জুনিয়র; জন্মদিন উদযাপন আর কেক মাখামাখির পর ছোট-বড় ট্রিট; এ সব আনন্দ যেন পুনরায় জাগ্রত হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসে এসেই একে অন্যের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময়, কোলাকুলি করা, খোঁজ-খবর নেওয়া, ঈদের ছুটি কাটানোর গল্প শেয়ার করা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্যাম্পাসের প্রথম দিন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বরে আড্ডারত ফার্মেসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিন্স জানান, 'প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়িতে ছুটে যাই, তখন অনেক ভালো সময় কাটে কিন্তু তাদের ছেড়ে আসার সময় খুব কষ্ট হয়। তারপরও ছেড়ে আসতে হয় কিন্তু যখন ক্যাম্পাসে আসি তখন আর সেই কষ্ট থাকে না। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর ঘোরাঘুরি করে সময় কাটানোর মাধ্যমে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। সত্যিই ক্যাম্পাস আর বন্ধুরা ভালো থাকার এক অনন্য উপাদান।'

সাংবাদিক দেখে এগিয়ে এসে তারই আরেক সহপাঠী সুমা বলেন, 'সত্যিই বাড়ি ছেড়ে আসতে অনেক কষ্ট হয় কিন্তু ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দ একরকম আর ঈদে বাড়িতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ছুটি কাটানোর মজা আরেক রকম। একটার সঙ্গে আরেকটার তুলনা হয় না।'

ঈদের এই ছুটিতে পরিবারকে বেশি সময় দেওয়ার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। ঈদের ছুটি কেমন কেটেছে এবং ক্যাম্পাসের অনুভূতি কি রকম জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফারজানা ইয়াসমিন জীবন বলেন, এবারের ঈদটা অন্যরকম কেটেছে। মা-বাবার সঙ্গে ঈদের প্রথম দিন অতিবাহিত করেছি। তবে ক্যাম্পাসকে বড্ড মিস করেছি। তাই তো ঈদ শেষ হতেই ছুটে এসেছি প্রাণের ক্যাম্পাসে। চিরচেনা হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর ক্যাম্পাসের নীরবতা ভেঙেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল-নীল-সিলভার বাসগুলো আগমনের মধ্যদিয়ে।

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এনামুল হক বিজয় জানান, ঈদের ছুটির আগে কিছু বিষয়ের মিডটার্ম পরীক্ষা বাকি ছিল। এ ছাড়া ল্যাব, পরীক্ষা ও প্র্যাক্টিকাল থাকায় ফিরে এলাম, প্রস্তুত্মতি নিতে হবে। তবে ঈদের আমেজ এখনো কাটেনি। পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কিছু সময় পার করতে পেরেছি। আগে ফিরে আসায় মেসের বন্ধুদের সঙ্গেও ঈদের আনন্দটা ভাগ করতে পারছি। সব মিলিয়ে ভালোই লাগছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটোরিয়ায় খাবার খেতে খেতে আড্ডায় ব্যস্ত ছিল বিভিন্ন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। ঈদের শেষে ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে তারা জানান, বাড়ি থেকে আসার সময় মনে হচ্ছিল এরকমভাবে আনন্দ আর উপভোগ্য সময় কাটাতে হলে আবারও লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পর সেটা মনে হচ্ছে না। এখানে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, খোশগল্প, ঘোরাঘুরি, খেলাধুলা আর প্রাণচঞ্চল ক্যাম্পাস সব খারাপলাগা ভুলিয়ে দেয়।' একে একে ক্যাম্পাসের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের সবারই একই অভিমত, ক্যাম্পাস শুধু পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার স্থান নয় বরং পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খেলাধুলা, ঘোরাঘুরি ক্যাম্পাসে আমাদের ভালো থাকার এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের এরকম প্রাণচঞ্চল পরিবেশ নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত।

ঈদের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে যেন পুরনো আমেজ ফিরে এসেছে। ক্যাম্পাসে সবাই মেতে উঠেছে গান আড্ডায়। কেউ বা ব্যস্ত ক্লাস, পরীক্ষা কিংবা প্রেজেন্টেশন নিয়ে। আবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে