সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
walton

আনন্দ ভ্রমণে সাইকেলে পাড়ি ৩০০ কি.মি

নতুনধারা
  ২০ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম রায়হান আবিদ

বিশ্ববিদ্যালয় মানেই পড়াশোনা আর তারই মাঝে নতুন এক জীবনযুদ্ধের প্রস্তুতি। করোনা মহামারির জন্য এই জীবনযুদ্ধের সময় যেমন কমে এসেছে তেমনি টানা ক্লাস আর পরীক্ষার মধ্যে একঘেয়েমি হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।

সারাদিনের একটানা ক্লাস শেষে বিকেলে শ্রাবণের দমকা হাওয়ায় চায়ের কাপে চুমুকে চুমুকে আড্ডার মাঝে হঠাৎ একটি ভিন্ন রকমের সিদ্ধান্ত আসে চার বন্ধুর মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকেলে চড়ে কতদূর যাওয়া যাবে এই আলোচনায় ৩০০ কিলোমিটার পথ সাইকেলে পাড়ি দিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের চার জন শিক্ষার্থী।

আনন্দভ্রমণের পরিকল্পনার নকশা আঁকতে লাগল তাদের মধ্যে। কথায় কথায় নিজেদের মধ্যে বড় একটি চ্যালেঞ্জ নিল। নিকলি হাওড়ের বিপুল জলরাশির মধ্যে সাইকেলে ভ্রমণে স্বপ্নের রাজ্যে বিলীন হওয়ার লোভ কেউ সামলাতে পারল না। বেরিয়ে পড়ল আরমান, সাদিক, মেহেদী আর বাঁধন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

পরিকল্পনা অনুসারে পরের দিন বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় থেকে রওনা দেয়। সামনের চ্যালেঞ্জটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। কারণ এত বড় সাইকেল টু্যরের অভিজ্ঞতাও ছিল না তাদের।

আনন্দঘন শুরুটা...

প্রথম ২০ কিলোমিটার সবার খুব আনন্দে অতিক্রম করেছে। কিন্তু ক্রমেই যাত্রাপথ দীর্ঘ হতে লাগল আর মনবলটাও দুর্বল হতে শুরু করে। চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে নান্দাইল চৌরাস্তা পার হওয়ার কিছুক্ষণ তাদের বন্ধু আরমানের সাইকেলে টিউব লিক হয় যায়। তখন রাত প্রায় ১টা। মাঝ রাস্তায় এমন সিচুয়েশন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে তাদের। মোবাইলের লাইটে তারা সাহায্যের জন্য গাড়িকে সিগন্যাল দিচ্ছিল কিন্তু কেউ দাঁড়াচ্ছিলনা। সেই অন্ধকার রাতে মাঝেমধ্যে  দুই-একটি গাড়ি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। পরিবেশটা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে  আসছিল। কোনো উপায় না পেয়ে তারা হাঁটা শুরু করে দিল। অনেকটা রাস্তা হেঁটে একটা বাজারে পৌঁছালো। কিন্তু বাজারে কেবল একটা চায়ের দোকান খোলা ছিল। তখন রাস্তার পাশে সকালের অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন  ছিল এ ক্ষেত্রে। একটা মটরচালিত রিকশা বাড়িতে ফেরার সময় তাদের অবস্থা দেখে সাহায্যের হাত বাড়ালো। রিকশার ভদ্র লোকটা চাকা লিক হওয়া সাইকেলটা কিশোরগঞ্জ পৌঁছে দিল। বলাবাহুল্য সেখান থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ছিল ১০ কিলোমিটার। কিশোরগঞ্জ পৌঁছাতে পৌঁছাতে তাদের রাত প্রায় ২টা বাজল। সেই রাতটা  তারা ওখানেই কাটিয়ে দিল। 

পরেরদিন খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই আগে লিক হয়ে যাওয়া সাইকেল ঠিক করে মিঠামইনের উদ্দেশে রওনা করে তরুণরা। কিশোরগঞ্জ থেকে বালিখোলাঘাট পর্যন্ত আবারও প্রায় ২২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে ট্রলারে করে মিঠামইন। সেদিনই দুপুর ২টায় তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছায়। মিঠামইনের ডাকবাংলোয় কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আবার তারা রওনা হয় ইটনা অষ্টগ্রামের দিকে।

সাইকেল রাইডিং....

সাইকেলে এত দূরত্ব ভ্রমণ নিয়ে জানতে চাইলে আরমান হাবীব বলেন, 'মিঠামইন থেকে ইটনা এবং অষ্টগ্রামের রাস্তাটা সাইকেল রাইডিং-এর জন্য স্বপ্নের রাস্তা। হাওড়ে পৌঁছার পর দুই পাশের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য দেখে সবারই সব ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম, রাষ্ট্রপতির বাড়ি, ইটনা-মিঠামইম, মিঠামইন-অষ্টগ্রাম রোড প্রত্যেকটা জায়গা সাইকেল রাইডারদের জন্য অসম্ভব পছন্দের। সারারাত হাওড়ের ধারে সে প্রশস্ত আর অপরূপ সুন্দর রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে মনে হচ্ছে আমরা জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছি।,

এবার ফেরার পালা....

রাত পেরিয়ে পরেরদিন সকালের নাশতা শেষে ১০টায় তারা ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা করে। সকাল থেকে দুপুর মাঝে বিরতি নিয়ে বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে যায় তারা দীর্ঘপথ সাইকেলে দাপিয়ে বেড়ায়। এতটা পথ পায়ে সাইকেলে প্যাডেল যতটা কষ্টের মনে হয় সেটা সাইক্লিস্টদের জন্য ততটাই উপভোগ্য। বিকেলের সূর্যাস্ত সাইকেলে বসে দিব্যি প্রশান্তির ছায়া পড়ে তাদের ক্লান্ত শরীরে। সে অনুভূতিগুলো হয়তো একজন প্রকৃতিপ্রেমিক কাব্যিক ভাষায় প্রকাশ করাতে পারবে। আর মাঝেমধ্যে ক্লান্ত শরীরকে বিশ্রাম দিতে রাস্তার ধারে সাইকেল থামিয়ে চায়ের কাপে আড্ডা দেওয়ার গল্পটা তো ছিল ভিন্ন এক কাব্য রচনা। রাত ১২টায় আবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছায় তরুণরা। ভবিষ্যতে আরও বড় ভ্রমণ করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ক্লান্ত-ঘামা শরীরে সমাপ্তি ঘটায় ৩০০ কিলোমিটার মিঠামইন আনন্দ সফর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে