শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসে বৃষ্টিবিলাস

ম আশিক ইসলাম
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

চলছে শরৎকাল। নীলাভ আকাশজুড়ে সাদা মেঘের খুনসুটি। কখনো কখনো সেই আকাশে চোখ রাঙায় ঘন কালো মেঘ। হঠাৎ করেই মেঘের গুড়ুম গুড়ুম ডাক সঙ্গে ঝুম বৃষ্টি। শ্রাবণের এমন ধারায় কারণে অকারণে ভিজতে দেখা যায় তরুণদের।

বৃষ্টিভেজা তারুণ্যের দেখা বেশি মেলে কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। তা থেকে ব্যতিক্রম নয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বৃষ্টি এলেই এখনকার শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে মেতে ওঠেন খুনসুটি আর দুরন্তপনায়। তাদের এই দুরন্তপনা আর বৃষ্টিস্নাত সবুজ-সতেজ প্রকৃতি মূর্ত হয়ে ওঠে এক অপার সৌন্দর্যে। আর সে সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বর্ষায় ধারণ করে এক মোহময় রূপ। সৌন্দর্যে মাখামাখি হয়ে যায় চারদিক। যেন প্রতিটি জায়গা থেকে ঠিকরে বের হয় সে সৌন্দর্য। যার প্রেমে পড়ে যায়

বইয়ের ভেতরে সব সময় মুখ গুঁজে থাকা ক্লাস টপারও।

দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা ভিজতে নামেন বৃষ্টির ধারায়। গস্নানি মুছে আর জরা ঘুচিয়ে সে তারুণ্য মেতে থাকে প্রকৃতির টুপটাপ সুরে। সোঁদা গন্ধে দূরত্ব ঘোচায় মাটির সঙ্গে। হাতের মুঠোয় থাকা ক্যামেরায় সওয়ার হয়ে সে উচ্ছ্ব্বাসের ছিটে লাগে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও।

বৃষ্টিবিলাসী রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজশাহীতে বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির দেখা মেলে। সেদিন ক্লাসের ফাঁকে অনেকেই দেখলাম বৃষ্টিবিলাস করছে। তাই নিজেকে আর সংযত রাখতে পারলাম না। ব্যস্ত সময়, একাডেমিক প্রেশার আর মন খারাপকে বৃষ্টির জলে ধুয়ে একটুখানি শৈশবে ফিরে গেলাম। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গা শিক্ষার্থীদের ভালোবাসার জায়গা। এই প্রাঙ্গণের প্রতিটি ধূলিকণা খুব আপন। রাজশাহীতে ঝুম বৃষ্টি খুবই কমই দেখা যায়।

অনেকেই ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় থেকেছে কিন্তু প্যারিস রোডে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে প্যারিসের সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করার সৌভাগ্য সবার হয়নি। বহু বছর পরও হয়তো এই বৃষ্টিতে ভেজার অনুভূতি অন্য কোনো অনুভূতির সঙ্গে মিলবে না।

এছাড়া বৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের ভেতরে, ছাদে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। মেয়েরা পিছিয়ে নেই। তারাও বৃষ্টিতে হলের ভেতরে নেমে পড়েন ফুটবল নিয়ে। তাদেরই একজন জানান, শৈশবে বৃষ্টি হলেই বল নিয়ে মাঠে দৌড়ে যেতাম। বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলার মজাই আলাদা। এই বৃষ্টি আমাদের অল্প সময়ের জন্য হলেও সেই শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এদিকে বৃষ্টি থামার পর বৃষ্টিস্নাত প্যারিস রোড ধারণ করে এক অপরূপ সৌন্দর্য।

ক্যাম্পাসের পিচঢালা রাস্তাগুলোকে স্বচ্ছ আয়নার মতো মনে হয়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের

কাজলা গেট থেকে প্রশাসন ভবন হয়ে যে রাস্তাটি শেরে বাংলা হল পর্যন্ত গেছে তা নয়নাভিরাম দৃশ্য ধারণ করে। রাস্তার দুইপাশে সারি সারি গগনশিরীষ গাছগুলোর পাতা থেকে টুপটাপ পড়ে বৃষ্টির ফোঁটা, সত্যিই তা অসাধারণ লাগে।

বৃষ্টিতে প্রেম একটু গাঢ় হয় কিনা কে জানে! তবে প্রেয়সীর হাত ধরে একই ছাতার নিচে বৃষ্টির স্পর্শ নিতে দেখা যায় ক্যাম্পাসের প্রেমিক যুগলদের।

কখনো প্রেয়সীর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজে প্রেমিক। এমন সৌন্দর্য যেখানে বৃষ্টি নামলে, সেখানকার বাসিন্দাদের মন চনমনে হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। বৃষ্টিতে সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে ক্যাম্পাস। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, লতাপাতা,

পাখি আর প্রজাপতিরা হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত। একই সঙ্গে বৃষ্টিস্নাত রাস্তা, পুকুরে শাপলা, পদ্ম, বাগানে ফোটা বকুল, জুঁই, কেয়াফুলের আগমনে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে রঙিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে