নতুন বছরের শুরুতেই নিজেকে নতুনত্বর সঙ্গে পরিচয় করানোর প্রয়াস চলছে। তবে দিনগুলো কেমন ভালো কাটছে তা অনুমান করা দুষ্কর। রাতে ঘুম যাওয়ার আগে ফোন হাতে নিয়েই দেখি বন্ধুর ম্যাসেজ, 'আমরা কয়েকজন মিলে ভাবছি চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ঘুরতে যাবো তোর কি মতামত।' আগেও অনেকবার যাবো বলেও যাওয়া হয়নি। তাই বন্ধুর লোভনীয় প্রস্তাবে না রাজি হয়ে পারিনি। তাই সবাই মিলে পরিকল্পনা শুরু করলাম। আমরা ৬ জন মিলে ঠিক করলাম ভোর সকালে বের হবো। যেই কথা সেই কাজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবাই মিলে ভোর ৬টায় রওনা হলাম। ক্যাম্পাস থেকে বড় দীঘির পাড় হয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছলাম ভাটিয়ারী বাস স্টেশনে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ভাটিয়ারী। পাহাড়ের পর পাহাড় ঢেউ খেলানো রাস্তা যেন স্বর্গীয় এক ছোঁয়া পাওয়া যায় ভাটিয়ারীতে।
তারপর আমরা ভাটিয়ারী বাস স্টেশনে নাশতা করে সীতাকুন্ডের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। বরাবরই আমার বাস জার্নি ভালো লাগে না। তাই সবাই মিলে আড্ডা আর গানে নিজেদের সময়টাকে আনন্দময় করার চেষ্টা করলাম।
প্রায় ১ ঘণ্টার যাত্রার পর আমরা পৌঁছলাম সীতাকুন্ডে। ওখান থেকে সিএনজি করে পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। আমি আবার চলাফেরা করার সময় আমার ব্যাগ নিয়ে যাই ঠিক আজকেও ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যাগটা কাজে আসছিল অনেক- সবার বাড়তি কাপড়গুলো রাখছিলাম। সবাই একটু একটু করে বহন করছিলাম যাতে একজনের জন্য কষ্ট না হয়ে যায়। আমার এক বন্ধু বলছিল ওখানে যাওয়ার সময় পানি নিয়ে যাওয়া জরুরি। ঠিক তেমনি পানি নিয়ে গেলাম। পরে দেখলাম যদি সঙ্গে কিছু খাবার নিয়ে গেলে মন্দ হতো না। পাহাড়ের উঁচুতে সবকিছুর দাম একটু বেশিই। আর হবে নাই বা কেন? ৩১০ মিটার উঁচুতে খাবার নিয়ে বিক্রি করা তো কষ্টের বিষয় বটে। কিছুক্ষণ পরপর একটু বিশ্রাম নিয়েছি আর যতটুকু পেরেছি প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে গিয়েছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে যখন দেখলাম একটু বয়স্ক মহিলা-পুরুষরাও পুরোদমে পাহাড় জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও তাদের চেহারায় ছিল ক্লান্তির ছাপ সুস্পষ্ট। যতই উপরে উঠছি ততই যেন প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়তে লাগল পালস্না দিয়ে। অবশেষে উঠে পৌঁছলাম পাহাড়ের চূড়ায়।
ক্লান্তিগুলো যেন সৌন্দর্যের কাছে হার মেনে গেল। সবার মুখে ক্লান্তির ছাপ যেন নিমিষেই মুছে যেতে লাগল। কেউ বা এক কোণে গিয়ে একা বসে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে লাগল। দেখে মনে হলো সে যেন কথা বলছে প্রকৃতির সঙ্গে। কেউ বা দেরি না করে ফোনে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে গেল নিজের স্মৃতির পাতাকে সমৃদ্ধ করার জন্য। তবে ওখানে থাকা বানরগুলো নজর কেড়েছে বেশ। তারা যেন সক্রিয় পাহারাদারের মতো সবার পদক্ষেপগুলো নোট করছে। তবে অতি উৎসাহী হতে হাত বাড়ালে বিপাকে পড়তে হবে। বানরের ছবি তোলার জন্য ফোন বাড়াতেই একজন হারাতে বসছিল নিজের ফোনটা। কিছু ছবি তোলার পর এককোণে বসে দেখতে লাগলাম অপরূপ সৌন্দর্য। মনে হলো মেঘের রাজ্যে বসে আছি। দেখছি পাহাড়ের পর পাহাড়। শুনছি নাম না জানা পাখির ডাক। অনুভব করছি উষ্ণ হাওয়া। যে হাওয়ার অন্যতম কাজ ছিল যেন শরীরের ক্লান্তিগুলো ভুলিয়ে দেওয়া। এভাবেই অনেকটা সময় মনের অজান্তেই কেটে গেল। কেন জানিনা মন চাচ্ছিল না মানার জন্য। অবশেষে সবার সঙ্গে নামা শুরু করলাম। এই সফরটা আসলেই অনেক মনোমুগ্ধকর ছিল। বুঝতে পেরেছি, এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। পরিচিত হতে হবে নতুনত্বের সঙ্গে, চিনতে হবে বিশ্বকে।