শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তাজহাট জমিদারবাড়ি : প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন

মামুন মিসবাহ
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

নতুন কিছুর প্রতি সবসময় স্বভাবসুলভ আগ্রহ দেখায় মানুষ। তাই বলে, পুরনো জিনিসের প্রতি আগ্রহ কিন্তু কম নয়; যদি সেটা হয়ে থাকে অদেখা ও অজানা কিছু। তবে, কিছু কিছু পুরনো জিনিস বারবার দেখার পরেও সেটা নতুন-ই মনে হয়। মন ভরে না; আবারও দেখতে ইচ্ছে করে। তন্মধ্যে, 'প্রাচীন স্থাপত্য শিল্প' হলো অন্যতম। হাজার বছরের পুরনো স্থাপত্য পিরামিডসহ আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগের যে কোনো কারুকার্যপূর্ণ নির্মিত প্রাচীন স্থাপত্য দেখার ক্ষেত্রে মানুষের চাহিদা বিন্দুমাত্র কমেনি। আজ পর্যন্ত এসব প্রাচীন জায়গাগুলোতে দর্শনার্থীদের নজরকাড়া ভিড় দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নির্মিত পুরনো স্থাপত্যগুলোও পিছিয়ে নেই। অবসর সময় বা ছুটির দিনে মানুষ এসব জায়গাগুলো বরাবরের মতোই ঘুরে দেখে। রংপুরের 'তাজহাট জমিদারবাড়ি' সেই স্থানগুলোর মধ্যে একটি। নবাবী আমলের নির্মিত একটি প্রাচীন প্রাসাদ। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন মহারাজা কুমার গোপাল রায়। জনশ্রম্নতি রয়েছে, তার মুগ্ধকর তাজ বা মুকুটের কারণেই সেই এলাকাটিকে 'তাজহাট' নামে অভিহিত করা হয়েছিল। এককালে এটি রংপুর হাইকোর্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখন এটি একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা দেখার জন্য পর্যটকরা নিত্যদিনই সকাল থেকে ভিড় জমায়।

\হপুরনো প্রাসাদটি এখন আর পুরনো নেই। নানাভাবে সংস্কার হয়েছে তার। বিশাল জায়গাজুড়ে থাকা প্রাসাদটিকে নতুনরূপে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে প্রশাসন। গল্পে অঙ্কিত প্রাসাদটির বাইরের প্রাঙ্গণ এখন একটি নয়ারূপে সজ্জিত। মূল ফটক দিয়ে সীমানার ভেতর প্রবেশ করতেই ডানদিকে চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন পুষ্পকানন ও সারি সারি কারুকার্য করা নানাবিধ গাছের বর্ণিল সমাহার। দেখতে কোনো স্বপ্ননগরীর চেয়েও কম কীসে! বাগানের ভেতর ঘুরে দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট সরু পথ। পথের শুরুতে কোথাও কোথাও আবার বাঁকানো গাছের দরজা। প্রাসাদের দুইপাশে দুটি পুকুর। যাতে রয়েছে শাপলা ফুলের রাজ। দূর থেকে পানিতে ভেসে থাকা শাপলাগুলো যেন উদাসীন হৃদয়ের খোরাক। রাস্তার দু'পাশজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর মাঝ দিয়ে প্রাসাদটিকে দেখতে ভারী সুন্দর লাগে। বিশাল আকারের দেয়ালে বেষ্টিত প্রাসাদটি এখনো মজবুতের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে আপন মহিমায়। প্রাসাদের পেছনের চত্বরটাও দারুণ সুন্দর। বৈকালিক পরিবেশে তা আরও চমৎকার দেখায়; যদি সেথায় বসে জমানো যায় কোনো খোশগল্পের আড্ডা।

প্রাসাদের সম্মুখভাগে মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই চোখে পড়ে কয়েকটি প্রদর্শনী-কক্ষ; যা সাজানো দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্মে। যেখানে রাখা হয়েছে সংস্কৃত ও আরবি ভাষায় লিখিত বেশ কিছু পান্ডুলিপি। যার মধ্যে রয়েছে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলের পবিত্র আল-কোরআনসহ হিন্দুদের মহাভারত ও রামায়ণও। এ ছাড়া রয়েছে বেশকিছু প্রতিমাসহ মাটির শিল্পের কিছু পুরনো জিনিসপত্র। সব কক্ষের কাঠের দরজাগুলোও বেশ লম্বা। উপরের দিকে মাথা উঁচিয়ে দেখতে হয় তার উচ্চসীমা। কক্ষের বাইরে ব্যালকনিতে চোখের শান্তি পুরনো আমলের জানালা সব। সে সময়কার শিল্পকর্মগুলো বর্তমানের মতো ছিল না; আলাদা ও ভিন্ন ছিল। আবার তাতে কারুকার্য করা হতো। এ জন্যই মানুষ অবাক হয়ে দেখতে থাকে এই প্রাসাদের প্রতিটি স্থান। প্রাচীন এই প্রাসাদের সৌন্দর্য পর্যটকদের মন ছুয়ে দেয়। ভেসে নিয়ে বেড়ায় নবাবী আমলের সোনালী রাজ্যে। তাই, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা প্রাসাদের সামিয়ানায় সময় কাটায় মনের আনন্দে। তাই বলতেই হয়; 'তাজহাট জমিদারবাড়ি' বাংলার প্রাচীন স্থাপত্যের নয়নাভিরাম অনন্য নিদর্শন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে