শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বসন্তের সাজে ভালোবাসার রং

আশিক ইসলাম
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

শুষ্ক শীতের আড়মোড়া ভেঙে নতুন একটি দিনের শুরু। সকালের কুয়াশা সরিয়ে প্রকৃতি হেসে উঠেছে ধীরে ধীরে। নির্ঝরের স্বপ্ন ভেঙে গাছে গাছে, পত্র-পলস্নবে ছড়িয়ে পড়েছে সে হাসির রঙের রোশনাই। বন-বনান্তে কাননে কাননে

কোলাহলে ভরে উঠেছে। কোকিলের কুহুতান, দক্ষিনা হাওয়া, ঝড়ো বাতাস আর শুকনো পাতায় নূপুরের নিক্কন প্রকৃতির মিলন ঘটিয়েছে। এভাবেই শীতের

জীর্ণতা ছাপিয়ে বর্ণিল ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের ছোঁয়া লেগেছে

প্রকৃতিতে। আর তা থেকে বাদ যায়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

কারও পরনে বাসন্তী, লাল, হলুদ রঙের শাড়ি। মাথায় ফুলের টায়রা, খোঁপায় হলুদ

গাঁদা ফুল। হাতে রেশমি চুড়ি, কপালে লাল টিপ জানান দিচ্ছে আগুন রাঙা ফাগুনের।

পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একসঙ্গে হওয়ায় উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ

করেছে। ফাল্গুনের বাসন্তী আবহ আর ভালোবাসা দিবসের লাল মিলেমিশে যোগ

করছে এবারের বসন্তবরণ। এক কথায় ভালোবাসাময় বসন্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড, ইবলিশ চত্বর, পশ্চিমপাড়া,

চারুকলা, টুকিটাকি চত্বর, শহীদ মিনার, আমতলায়, জোহা চত্বর, শাবাশ

বাংলাদেশ মাঠ, বধ্যভূমিতে শিক্ষার্থীদের সমাগম চোখে পড়ার মতো। নানা রঙের

নিজেদের সাজিয়েছে তারা। দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে বসেছে

ফুলের স্টল।

লাল আর বাসন্তী রঙে রঙিন ক্যাম্পাস। মৌমাছির গুঞ্জন আর কোকিলের কুহুতানে

জেগে উঠেছে প্রকৃতি, দোলা লেগেছে প্রেমিক হৃদয়ে। ঝরাপাতার মাঝেও রং

ছড়াচ্ছে শিমুল, পলাশসহ বর্ণিল সব ফুল। বসন্তকে বরণ করে নিতে ফাগুনের প্রথম

প্রহরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বসন্তবরণ ও পিঠা

উৎসব। থরে থরে সাজানো নানা রঙ্গের নানা স্বাদের পিঠে-পুলি। বসন্তবরণে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা বের করে চারুকলা অনুষদ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ বসন্তবরণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরে বসন্তবরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না কোনো আয়োজন। তাই তো এবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস। বসন্তের প্রথম দিনের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া লেগেছে ক্যাম্পাসের কপোত-কপোতিদের হৃদয়ে। লাল আর হলুদে নিজেকে সাজিয়েছেন তারা। গত বছরের মতো এবারও পহেলা ফাল্গুনে বাড়তি রং এনে দিয়েছে ভালোবাসা দিবস। বাসন্তী আর লাল রঙের টেউয়ে দুলছে ক্যাম্পাস। কেউ বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে, কেউবা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে, আবার কেউবা পরিবারের সঙ্গে মেতে উঠেছেন উৎসবে। একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করছেন বসন্তের শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে সেলফি তো আছেই। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বসন্তবরণে উৎসবমুখর পরিবেশ।

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন একটি শিক্ষাবর্ষের আগমন ঘটেছে। তাদের

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বসন্তবরণ উদযাপন। বন্ধু-বান্ধবী মিলে দাপিয়ে

বেড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাস। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল

রাহাত বলেন, ক্যাম্পাসের প্রথম বসন্তবরণ। নতুন ক্যাম্পাসে, নতুন বন্ধদের সঙ্গে

বসন্তবরণ। অন্যরকম অনুভূতি। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নূর আহসান মৃদুল বলেন, প্রত্যেক বছরের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। রঙিন বসন্ত

দেখা আমাদের জন্য আসলে একটা বিরাট উপহার। আমাদের মনে বসন্ত

থাকুক আজীবন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী নাজনীন আক্তার মিম বলেন, বসন্তবরণ আর

ভালোবাসা দিবস দুই দিনে হলে আনন্দটা একদিন বেশি উপভোগ করা যেত। কিন্তু

গত কয়েক বছর ধরে পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে হচ্ছে। একটা

দিন কমে গেলেও আনন্দ কিন্তু কমেনি।

বসন্তবরণ অনুষ্ঠান সবার জন্য আনন্দের হলেও কারও মনে বেদনা বাসা বেঁধেছে।

কারণ কারও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বসন্তবরণ। তাই যতটুকু পারা যায় তারা

প্রাণ ভরে নিচ্ছেন বসন্তের স্বাদ। পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইমন বলেন,

মতিহারের সবুজ চত্বরে আর পহেলা ফাল্গুন পালন করা হবে না, ভেবে খুব খারাপ

লাগছে। ক্যাম্পাসের শেষ বসন্তকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ফ্রেমে বন্দি করে রাখলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে