শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে রঙিন বসন্ত

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ফাগুন শুরুর মধ্যদিয়ে এসেছে বসন্ত। প্রকৃতিতে লেগেছে রং, চারপাশে যেন উৎসবের ছোঁয়া। আর সেই উৎসবের রং লেগেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। একদিকে বাসন্তী রং, অন্যদিকে ভালোবাসার রঙের জোয়ার বইছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এবারের ফাল্গুনে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতেছে তরুণ প্রাণ। পুরান ঢাকার একখন্ড সবুজের সমারোহে তরুণ-তরুণীরা মেতেছিল দীপ্ত প্রাণের উচ্ছলতায়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন আগে থেকেই ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেওয়া শুরু হয়। চারুকলা অনুষদের আয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে নেচে-গেয়ে 'বসন্তবরণ ও ভর্তা উৎসব' উদযাপিত হয়। চারুকলার ছাদে সূর্যমুখী ফুলে মঞ্চ সাজানো হয়। দখিনা হাওয়ায় উড়ছে কাগুজে সাজানো ফুল। হলুদ, গোলাপি, নীল, লাল শাড়িতে মেতে ওঠে তরুণীরা। সবার মাথায় বসন্তের আগমনী ফুলের মালা। ছেলেরা পড়েছে হরেক রকমের পাঞ্জাবি। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছবি-সেলফি তোলাসহ খোশগল্পে মেতে ওঠে। অনুষ্ঠান শেষে আনন্দঘন পরিবেশে ভাতে ভর্তা সবাইকে করা হচ্ছে আপ্যায়ন।

এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বসন্তবরণ উদযাপন করে। এ ছাড়া মার্কেটিং বিভাগেও শিক্ষার্থীরা বসন্তবরণ উৎসব করে। বসন্তের প্রথম দিন থেকেই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নানা রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে আসতে শুরু করেন। এ সময় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

পহেলা ফাল্গুন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় একদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সঙ্গীত বিভাগ, শান্ত চত্বরে নাট্যকলা বিভাগ ও ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নীচতলা ও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলা বিভাগের উদ্যোগে বসন্তকে বরণ করে নেওয়া হয়। পরদিন কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, এরপর অর্থনীতি বিভাগসহ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগেও বসন্তবরণ উৎসব উদযাপন করা হয়।

ক্যাম্পাস জীবনের ফাগুনগুলো একটু বেশিই বসন্তময় হয়। হলুদে হলুদে ছেয়ে যায় ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রান্তর। তেমনি করে লাল, হলুদ, বাসন্তী রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীরা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বসন্তকে রঙিন করে তুলেছে। মাথায় ফুলের মুকুট ও হাতে ফুল নিয়ে অনেকে হেঁটেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে করে, কেউবা আবার বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। অনেকেই নিজের প্রেয়সীর লাল শাড়ির সঙ্গে লাল পাঞ্জাবি পরে ক্যাম্পাসের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কেউ বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে, কেউবা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে উৎসবে মেতেছিলেন। সবাই একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করছেন বসন্তের শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে সেলফি তো আছেই। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বসন্তবরণে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন স্থানগুলোতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখা মেলে। মাথায় ফুলের মুকুট ও হাতে ফুল নিয়ে অনেকে হেঁটেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে করে, কেউবা আবার বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছিল উৎফুলস্নতা।

তরুণদের গায়ে বাহারি রঙের পাঞ্জাবি, বাসন্তী রাঙা শাড়ি আর খোঁপায় ফুল গুঁজে তরুণীরা বসন্তকে বরণ করতে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, শান্ত চত্বর, কলা ভবন ও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। বসন্তবরণে ক্যাম্পাসে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, আশপাশের স্কুল-কলেজ থেকেও অনেকে এসে ভিড় জমিয়েছে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, 'বসন্তবরণে ক্যাম্পাসে ঘুরতে খুব ভালো লাগছে। ক্যাম্পাসে আজকে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব ভালো লাগছে।'

ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা নুসরাত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আবহমান বাঙালির সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে বসন্তবরণ উৎসব। প্রকৃতির মতোই নতুনরূপে সেজেছে ক্যাম্পাস। বিভিন্ন বিভাগের আয়োজন আমাকে মুগ্ধ করেছে।'

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিদুয়ান ইসলাম বলেন, 'ঋতুরাজ বসন্ত ক্যাম্পাসে উৎসব নিয়ে এসেছে। চারদিকে প্রাণের ঝংকার, আনন্দের সুবাতাস। ক্যাম্পাসের নানা আয়োজন দিনটিকে সুন্দর করেছে।'

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা বলেন, 'বসন্তে ক্যাম্পাসে এসে খুব ভালো লেগেছে। আমরা বন্ধুরা মিলে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরেছি, ছবি তুলেছি। বসন্তের রং সবার জীবনকে রাঙিয়ে তুলুক।'

বসন্তবরণ উৎসবে আসা পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাওজিয়া আফিয়া জিনিয়া বলেন, 'বসন্ত আমাদের সবার উৎসব। বসন্ত ঋতুতে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা শীতের জীর্ণতাকে মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয়। প্রতিটি মানুষের উচিত বছরের শেষ ঋতুতে নতুনরূপে সজ্জিত প্রকৃতিকে সানন্দে বরণ করে নেওয়া।'

উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিথী রানী মন্ডল বলেন, বসন্ত হচ্ছে রং, বসন্ত হচ্ছে উজ্জীবিত শক্তি, বসন্ত মানে আনন্দ-উলস্নাস, বসন্ত মানে মানব মনে প্রকৃতির নতুন হাসি। বসন্ত আমাদের দুয়ারে এলে আমরা বসন্তকে বরণ করতে নানান আয়োজন করি। প্রকৃতির যেমন নবরূপে সাজে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও সাজি। একইসঙ্গে বসন্তকে বরণ করে নিই।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ঝুমু আক্তার বলেন, 'বাঙালি মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে বাসন্তী আমেজ খুবই সমাদৃত। বসন্ত আমাদের জীবন রাঙিয়ে দিয়ে যায়। বসন্তের চমৎকার আবহাওয়া ও প্রকৃতির নব সাজ আমাদের উলস্নসিত ও উৎফুলস্ন করে তোলে। বসন্তের মধ্যদিয়ে আমরা যেন জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করি। বসন্তের ফুল ফোটে বনে তার শিহরণ লাগে আমাদের মনে। বসন্ত এমনই এক সুন্দর ও সৌন্দর্যমন্ডিত ঋতু'।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. ইমদাদুল হক বলেন, 'আমাদের বাঙালি জাতির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকি, যে যেই ধর্মেরই হই না কেন উৎসব একসঙ্গে উদযাপন করি, ঈদ বা পূজা যেটাই হোক সবাই একসঙ্গে পালন করি। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে থাকি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকটা উৎসব একেকটা বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে করেছে। এখন বিভিন্ন বিভাগ এসব অনুষ্ঠান আলাদা আলাদাভাবে করছে। এমন আয়োজন বাঙালির সংস্কৃতিকে ধারণ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিকচর্চাকেও গতিশীল করছে।'

ষড়ঋতুর এ দেশে প্রতিটি ঋতুই নতুন নতুন রূপের পরসা নিয়ে আসে। তবে বসন্ত আসে ভিন্নভাবে, একদম ভিন্ন আঙ্গিকে। প্রকৃতিপ্রেমী নয়, এমন মানুষও বসন্তের প্রেমে পড়বেনই। পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম সাজে প্রকৃতি নিজেকে সাজায় আপন হস্তে। তাই তো প্রকৃতির এমন অপরূপ প্রাকৃতিক লীলা দেখে বারবার বলতে ইচ্ছা করে বসন্ত এসে গেছে রঙিন ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে