বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুশৃঙ্খল জীবন গড়তে স্কাউটিং

স্কাউট সদস্যরা মানব কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। স্কাউটিং বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত একটি আন্দোলনের নাম। যার সদস্য সংখ্যা বেড়েই চলছে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি কিংবা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে স্কাউট সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে দেখা যায়। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে সেবার জন্য আত্মত্যাগের যে শিক্ষা তরুণরা লাভ করে, তা তাদের পরবর্তী জীবনে একজন আত্মনিবেদিত, সৎ ও যোগ্য তথা সুনাগরিক হতে সাহায্য করে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন : মারুফ হোসেন
মারুফ হোসেন
  ১৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

সুস্থ জীবন গড়তে স্কাউটিং

মো. মওদুদ আহম্মেদ

রোভার স্কাউট গ্রম্নপ, সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড- ২০১৮ প্রাপ্ত, বর্তমানে কর্মরত এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ার, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর

স্কাউটিং একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন যা যুব সম্প্রদায়ের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিয়ে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে সৎ, সুন্দর, দক্ষ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। রোভার স্কাউটিং তরুণ প্রাপ্ত বয়স্কদের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের অংশ; যা উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। স্কাউটরা বিভিন্ন বহিরাঙ্গন ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করে যেমন- ক্যাম্পিং, হাইকিং যা তাদের চরিত্র গঠন, আত্মবিশ্বাস এবং গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা তৈরি করতে সহায়তা করে।

সাবেক রোভার মেট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সমাজ গঠনে স্কাউট আন্দোলন

মো. জাহানুর ইসলাম

সাবেক রোভার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে যেসব সামাজিক প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে স্কাউটিং অন্যতম। স্কাউটিং যেমন- স্বেচ্ছাসেবী, দেশপ্রেমিক, যোগ্য ও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে কাজ করছেন, তেমনি শিশু-কিশোর ও যুবকদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক গুণাবলির বিকাশ ঘটাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সমাজ গঠনে স্কাউটিংয়ের অবদান অনেক।

স্কাউট শিক্ষামূলক ও গতিশীল আন্দোলন

মো. আমিনুল ইসলাম

সাবেক রোভার সদস্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

স্কাউটিং যুবসম্প্রদায়েরের জন্য শিক্ষামূলক গতিশীল আন্দোলন। যাতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সবার জন্য উন্মুক্ত বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন।

স্কাউটিং মুলত তরুণ সমাজকে শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আধ্যাত্মিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তৃণমূল, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যক্তিগতভাবে সৎ, সুন্দর, দক্ষ, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

সৃজনশীল শক্তি বিকাশ সাধনকল্পে নেতৃত্বগুণ ও জাতীয় জাগরণের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া স্বনির্ভরতা, আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মনির্ভরশীলতা, বিনয়ী হিসাবে গড়ে তোলে।

সুন্দর জীবনের জন্য স্কাউটিং

আখতার হোসেন আজাদ

সাবেক সিনিয়র রোভার মেট, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ।

ব্যবহারিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে বিশ্বের যুবসমাজের মানসিক, শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিভা বিকাশের একমাত্র পস্ন্যাটফর্ম স্কাউটিং। ব্যাডেন পাওয়েলের গড়ে তোলা সংগঠনটির মাধ্যমে স্কাউট সদস্যরা যোগ্যতাসম্পন্ন বিশ্বনাগরিক হিসেবে নিজেদের বিকশিত করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্কাউট আন্দোলনের সর্বস্তরে বিস্তৃতি করা এখন সময়ের দাবি। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কাউটিং কার্যক্রম চালু বাধ্যতামূলক করা উচিত। স্কাউটিং নিয়ে উচ্চতর গবেষণা এবং এর বিস্তার ঘটানোর জন্য অনতিবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল, আদর্শবান, সৎ ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে কেন সম্পৃক্ত হওয়া উচিত?

নিগার সুলতানা সুপ্তি

প্রাক্তন সিনিয়র রোভার মেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ

আমার বিশ্বাস একজন ব্যক্তি যদি তার জীবনে স্কাউট আইন এবং প্রতিজ্ঞাকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে পারে তাহলে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে আর কোনো বাধা থাকবে না। মাত্র ২০ জন স্কাউট নিয়ে শুরু হয়েছিল স্কাউট আন্দোলনের যাত্রা। আজ সারা বিশ্বে প্রায় ৪০ মিলিয়নের কাছাকাছি সদস্যের এক বিশাল পরিবার এবং সংখ্যাটা ক্রমাগত চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। বিশ্ব স্কাউট দিবসে প্রত্যেক স্কাউটের কাছে আমার আহ্বান থাকবে- আমরা যেন দেশ, মাটি ও মানুষকে ভালোবাসা ও সেবাদানের মাধ্যমে এক উন্নত ও সমৃদ্ধশীল পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি।

বৈশ্বিক ও জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাড়াতে হবে স্কাউটিং কার্যক্রম

মুসা হাশেমী

সিনিয়র রোভার মেট ও ইউনিট কাউন্সিল সভাপতি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং নতুন প্রজন্মকে দক্ষ, নৈতিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে স্কাউটিং কার্যক্রমের বিকল্প কিছু হতে পারে না। জলবায়ুর পরিবর্তন, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার ও মাদকের সহজলভ্যতার মতো বড় বড় চ্যালেঞ্জগুলোর সামনে এই প্রজন্মের বৃহদাংশ যখন নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছে ঠিক সেখানে স্কাউটরা ব্যতিক্রম। তারা নবযুগের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং জাতিকে তার নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে নিজেদের দিনে দিনে প্রস্তুত করে চলেছে? সুতরাং জাতির কল্যাণে দেশ গড়ার এই কারিগরদের সংখ্যা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

তরুণদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে স্কাউটিং

\হ

শ্যামলী খাতুন

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদিকা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ

স্কাউটিং-এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিশু, কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক গুণাবলি উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের পরিবার, সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। স্কাউট কার্যক্রমে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে : হাতে কলমে কাজ শেখা, ছোট দল পদ্ধতিতে কাজ করা, ব্যাজ পদ্ধতির মাধ্যমে কাজের স্বীকৃতি প্রদান, মুক্তাঙ্গনে কাজ সম্পাদন, তিন আঙ্গুলে সালাম ও ডান হাত করমর্দন, স্কাউট পোশাক, স্কার্ফ ও ব্যাজ পরিধান এবং সর্বদা স্কাউট আইন ও প্রতিজ্ঞা মেনে চলা। স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলের নির্দেশিত নিয়মানুসারে অনুশীলন, প্রতিজ্ঞাপাঠ ও দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলনের সদস্য হতে হয়।

সুনাগরিক হতে স্কাউটিং

রাজিয়া সুলতানা মীম

সদস্য স্তর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ।

স্কাউটিং এমন একটি শিক্ষামূলক, অরাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক আন্দোলন- যার মাধ্যমে শিশু-কিশোর ও যুবকদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, বুদ্ধিভিত্তিক ও আধ্যাত্মিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়। এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে অপার আনন্দ। যার স্বাদ নিতে হলে অবশ্যই স্কাউটিং আন্দোলনে যোগদান করতে হবে। এটি বিশ্বের একমাত্র সংগঠন, যেখানে যোগদান করতে হলে আত্মশুদ্ধি পালন করতে হয়। স্কাউটের প্রতিজ্ঞা, আইন ও মূলনীতি সঠিকভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে স্কাউটিংয়ের মূলমন্ত্র- সেবা প্রদানই হলো স্কাউটিংয়ের উদ্দেশ্য। স্কাউটের মাধ্যমে নিজেদের শানিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রয়াস থাকবে আমাদের।

সুশৃঙ্খল জীবন গড়তে স্কাউটিয়ে বিকল্প নেই

রোভার-জান্নাতুল মাওয়া দিবা

সদস্য স্তর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ

বিভিন্ন জাতীয় দিবস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে সেবা প্রদান এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ নানা সমাজসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার একজন স্কাউট সদস্য হিসেবে। নিজেদের আত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাবান, সৎ, চরিত্রবান, সমাজসেবা, অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে স্কাউট থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো। এ ছাড়া স্কাউটের কিছু আউটিং কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে হাইকিং, অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পিং এগুলোর মাধ্যমে নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নিদর্শন উপভোগের সুযোগ থাকে।

স্কাউট দিবস ও কিছু কথা

মোহাম্মদ নাদের হোসেন ভূঁইয়া

রোভার সদস্য, ফেনী সরকারি কলেজ

রবার্ট ব্যাডেন পাওয়েল ১৯০৭ সালে ব্রাউনসি আইল্যান্ডের তার প্রথম স্কাউট নিবেশ থেকে ফেরার কয়েক মাস পর ১৯০৮ সালে একটি সংস্থা হিসেবে বালক স্কাউট প্রতিষ্ঠা করেন। তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত স্কাউট আজ প্রতিটি দেশে সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যে কোনো দুর্যোগে, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে স্কাউট সদা প্রস্তুত নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো- সরকার স্কাউট খাতে বিনিয়োগ করলেও তা খুবই সামান্য। আর স্কাউটদের চাকরিতেও তেমন কোনো আলাদা সুযোগ-সুবিধা নেই। যেখানে প্রতিটি স্কাউট নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে, নিজ অর্থ ব্যয় করে দেশের জন্য কাজ করে তাদের জন্য কি আমরা এতটুকু সদয় হতে পারি না!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে