শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কান পাতলেই ভেসে আসছে ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি

আশিক ইসলাম
  ১৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

বসন্তের দখিনা বাতাসে ঝরে পড়ছে শুকনো পাতা। কান পাতলেই ভেসে আসছে ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি। সবুজ ঘাসের ওপর শুকনো পাতার স্তূপ তৈরি করেছে সোনালি গালিচা। হাঁটার সময় পায়ে পায়ে মাড়িয়ে গেলে ভেসে আসছে মর্মর ধ্বনি। আর সেই ধ্বনি পৌঁছে দিচ্ছে তন্ত্রমূলে বিষাদ বেদনার গল্প। ঝরে পড়া পাতার এরূপ দৃশ্য বিষণ্ন করলেও ডুবিয়ে দেয় মায়ায়। নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে।

কবি আবুল হাসানের কবিতা ও জলের গানের ভাষায়- 'ও ঝরা পাতা ও ঝরা পাতা গো, তোমার সাথে আমার রাত পোহানো কথা গো, তোমার সাথে আমার দিন কাটানো কথা।' রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ঝরে পড়া পাতাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কও ঠিক এমনই। তাদের বিষাদ আর বেদনার গল্পের নিত্যদিনের সঙ্গী তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই সারি সারি দেবদারু গাছের ঝরাপাতা অভিবাদন জানায়। প্রশাসন ভবন পেরিয়ে প্যারিস রোড ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন রাস্তার ঝরাপাতার এমন নজরকাড়া সৌন্দর্য মুহূর্তেই পুলকিত করে। চোখ মেললেই দেখা যায়, ঝরাপাতার আদি-অন্তহীন ধূসর বিস্তার।

শুকনো পাতায় জমে থাকা শিশিরের কণা যেন প্রেয়সীর নিষ্প্রাণ দেহের কপালে প্রেমিকের শেষ চুম্বন চিহ্ন।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর, লিপু চত্বর,

প্রেমবঞ্চিত চত্বর, আমতলা, শেখ রাসেল চত্বরসহ আশপাশের মেহগনি বাগানের গাছগুলো প্রায় পাতাশূন্য। গাছের নিচে পাতা পড়ে সৃষ্টি করেছে সোনালি গালিচা। জারুল, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, গগণ শিরিষ, আকাশমণি, বহেরা, আমলকী, বন কাঁঠালি, তমাল, হিজল, কামরাঙা, জলপাই, পলাশ, জামরুল, কামিনী, নাশপাতি, আমড়া, শিশুগাছ, দেবদারু, আকন্দ, অশ্বত্থসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো এখন পাতাশূন্য। কঙ্কালসার এসব গাছে আসতে শুরু করেছে সবুজের কুঁড়ি। স্বগর্বে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তারা। গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে সবুজ পাতায়। আবার কোনো কোনো গাছে শোভা পাচ্ছে নানা ফুল।

বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, রাকসু ভবন, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পাতাবিহীন

শিমুল, পলাশ গাছগুলো রঙিন বর্ণ ধারণ করেছে। ঝরেপড়া ফুলগুলো গাছের নিচে তৈরি করছে পুষ্পশয্যার। বাহারি রঙের ফুল আর ঝরেপড়া পাতায় সেলফি তুলতে ব্যস্ত অনেকে। কেউবা আবার ঝরাপাতাময় বসন্তকে স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন ঢঙে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে, বসে শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে ছবি তুলছে।

ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসে দর্শনার্থীরা। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিব বলেন, বসন্তে প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে গেছে। গাছগুলোর পাতা ঝরে একদম শূন্য হয়ে গেছে। গাছের নিচে হলুদ রঙের পাতায় ছেঁয়ে গেছে। রাস্তার দুই পাশের ঝরাপাতা যেন বরণ করছে অতিথিকে। যা আলাদা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে।

আরেক শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বলেন, হালকা বাতাসে পাতার ঝরেপড়ার দৃশ্য ভালো লাগে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের রাস্তাটা দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয় দুইপাশের গাছগুলো স্বাগত জানাতে হলুদ গালিচা তৈরি করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে