শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পাড়জুড়ে সবুজ ঘাস আর সারিবদ্ধ গাছের সমাহার

আশিক ইসলাম
  ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

বিশাল পুকুর। তার পাড়জুড়ে সবুজ ঘাস আর সারিবদ্ধ গাছের সমাহার। বসন্তে গাছগুলো প্রায় পাতাশূন্য। গাছে গাছে ফুটে আছে রঙিন ফুল। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন কোনো লাল বৃক্ষ। ঘ্রাণহীন ফুলের রঙিন পাপড়ি সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে। বলছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রহমতুন্নেসা হল সংলগ্ন পুকুরপাড়ে ফোটা দুর্লভ রক্তকাঞ্চনের কথা। ফুলগুলো বসন্তে স্বাপ্নিক আমেজ নিয়ে আসছে। বসন্তের পরিপূর্ণতা দান করেছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মণিহারের সবুজ চত্বরে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। চিরসবুজের সমারোহ, পাখির কলতান আর বিভিন্ন ঋতুর আলাদা বৈচিত্র্যে ভরপুর এই কম্পাউন্ট। এক এক ঋতুতে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে তোলে ব্যতিক্রমী সাজে। তেমনিভাবে বসন্তে এখানকার প্রকৃতিতে ঘটেছে বিভিন্ন ফুলের আগমন। এসব ফুলের মধ্যে রক্তকাঞ্চন অন্যতম। অন্য অনেক ফুলের তুলনায় রক্তকাঞ্চন দুর্লভ। যখন ফোটে, গাছ ভরে যায়। আবার ঝরেও পড়ে নিয়মিত।

গাছগুলো চারদিকে ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছে। দেখতে কিছুটা ঝোপের মতো।

বিস্তৃত শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল আর ফুল। নিচের দিকে ঝুলতে থাকা সরু ডালেও ফুল উঁকি দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পূর্বপাশে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে দেখা যাবে আরও দুটি গাছ। সরু গাছ দুটির উপরে অজস্র ফুল ফুটে আছে।

রক্তকাঞ্চন নাম শুনে মনে হয় ফুলের রং রক্তের মতো লাল। আসলে তা নয় ফিকে লাল বলা যায়।

অনেকটা ম্যাজেন্ডা রঙের। 'ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চনফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল। চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জুরি গায় বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণাবায়।'-

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই কাঞ্চনফুলের বন্দনা করেছেন। এ ছাড়া আরও অনেক কবি-সাহিত্যিক কাঞ্চনফুলের সৌন্দর্য তাদের সাহিত্যকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও রহমতুন্নেসা হল সংলগ্ন পুকুরপাড়ে সারিবদ্ধ কাঞ্চনগাছ। সেখানে প্রতিটি গাছ লাল রঙে সাজিয়েছে নিজেদের। ফুলের মধ্যে উড়ে বেড়ানো মৌমাছি ও পাখিদের মিতালী। এ যেন প্রকৃতি তার সৌন্দর্য উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে উপভোগের জন্য। গাছের নিচে সবুজ ঘাসে ঝরে পড়ছে পাপড়ি। আর সেখানে বসে গল্প আড্ডায় মেতেছেন প্রেমিক জুটি।

ফুলের মধ্যে প্রজাপতি, ছোট পাখিসহ নানান পতঙ্গের ছোটাছুটি। ফুল থেকে

মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। মধ্য দুপুরে রক্তরাঙা ফুলের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। যেন ফুল আর সূর্য লুকোচুরি খেলায় মেতেছে। মাঝেমধ্যে একটু বাতাস এলেই ঝরে পড়ছে ফুল। ফুলের রঙে প্রকৃতি যেন তার সব রং আর রূপ ঢেলে দিয়েছে।

প্রকৃতির এই রূপ দেখতে প্রতিদিন এখানে আসেন শিক্ষার্থীরা। ক্যামেরা অথবা মুঠোফোনে ছবি তুলে বন্দি করছে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যকে। সেগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

আইন বিভাগের শিক্ষাবর্ষের আশেকা খাতুন বলেন, কাঞ্চন এশিয়ার সুন্দর ও ভেষজ গুণসমৃদ্ধ একটি ফুল। কাঞ্চন ফুলের প্রজাতিগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে রক্তকাঞ্চনই সুন্দর। ফুলের নাম থেকেই অনুমান করা যায় এর রং কেমন। বসন্তের শুরুতে অল্প কিছু পাতাকে ছাপিয়ে শাখাগুলো ভরে ওঠে সুগন্ধি ফুলে। বসন্তে প্রায় নিষ্পত্র গাছ বেগুনি রঙের ফুলে ভরে যায়। পাঁচ পাপড়ির মধ্যে একটি বড় ও গাঢ় রঙের তাতে কারুকার্য। রাস্তার পাশে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ছায়াদানকারী গাছ হিসেবে রক্তকাঞ্চন রোপণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ শিক্ষার্থী।

ফিসারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরা আক্তার বলেন, রক্তকাঞ্চন গাছের তিনটি প্রজাতি আছে। শ্বেতকাঞ্চন, দেবকাঞ্চন এবং রক্তকাঞ্চন। তবে সবচেয়ে সুন্দর রক্তকাঞ্চন। বসন্তকালে এই গাছের সব পাতা ঝরে যাওয়ার পর পুরো গাছ বেগুনি রঙের ফুলে ছেয়ে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে