শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাব্যবস্থা হোক কর্মমুখী ও শিক্ষার্থীবান্ধব

শিক্ষা মানুষকে আলোর পথ দেখায়। আলোকিত মানুষ গড়তে সুশিক্ষার প্রয়োজন অপরিসীম। শিক্ষা মানুষকে সৎ, যোগ্য ও কর্মমুখী হিসেবে গড়ে তোলে। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেও অনেককে সনদের ফাইল নিয়ে ঘুরতে হয় দ্বারে দ্বারে। যেন একটা চাকরি সোনার হরিণ। শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মমুখী ও শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। শিক্ষার্থীদের মতামত জানার চেষ্টা করেছেন- মারুফ হোসেন
নতুনধারা
  ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন

নেজাম উদ্দিন

ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নিউইয়র্কভিত্তিক সিইও-ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন (ঈঊঙ ডঙজখউ গঅএঅতওঘঊ) ২০২০ সালে সেরা শিক্ষাপদ্ধতির দেশগুলোর একটা তালিকা তৈরি করে। এ তালিকার ৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো স্থান নেই। এতে সহজেই বলে দেওয়া যায় আমরা কোন ধরনের শিক্ষানীতি অনুসরণ করে চলছি?

বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ তৈরির একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয়েছে একটি গণসুযোগ। প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এতে লাভের বিপরীতে বাড়ছে উচ্চশিক্ষিত বেকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তার মূল লক্ষ্য গবেষণা ও উদ্ভাবন থেকে সরে গিয়ে হয়ে উঠেছে রাজনীতির আখড়া। উচ্চশিক্ষা মূলত গবেষণাধর্মী শিক্ষা। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় গবেষণা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের শিক্ষাকে সঠিক পথে রাখতে আইন এবং সেই আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দরকার ছিল। অথচ স্বাধীনতার অর্ধশতক পরও শিক্ষার কোনো সুগঠিত আইনী কাঠামো তৈরি হয়নি।

শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় প্রয়োজন

আতিয়া ফাইরুজ ঐশী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা মানুষের মধ্যে যান্ত্রিকতা পরিহার করে বাস্তবিক জীবনকে সচল রাখার এক অভূতপূর্ব কার্যকরী মাধ্যম যার প্রতিটি লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। একটি সুশিক্ষিত জাতি পরবর্তী প্রজন্মের পথনির্দেশক এবং সুশিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলার প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে সুপরিকল্পিত শিক্ষা কার্যক্রম যা হবে পরিবর্তনশীল কিন্তু সময়োপযোগী। শিক্ষাক্ষেত্রে নৈপুণ্যতা আনয়ন প্রকল্পে শিক্ষণ-শিখন উভয়ক্ষেত্রে পরিকল্পিত রূপরেখা প্রণয়ন এবং পাঠ্যবইকেন্দ্রিকতা পরিহার করে জীবনমুখী হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিক্ষা পাঠ্যক্রম যাচাইকরণ, মূল্যায়নে স্বচ্ছতা এবং যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ মেধাকে বহির্বিশ্বে উৎসর্গ হওয়া থেকে রক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন এখন সময়ের চাহিদা।

কচ্ছপের মতো শিক্ষাব্যবস্থা চাই না আমরা

ফারহানা ইয়াসমিন

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের আনাচে-কানাচে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে, সে হারে বাড়ছে না ক্লাস রুম, শিক্ষকের সংখ্যা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। ফলেশ্রম্নতিতে খরগোশের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে এবং কচ্ছপের মতো চলছে শিক্ষার মান। তবে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সচল করতে হবে। তবেই না দিন শেষে উচ্চশিক্ষার মান বাড়বে, কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ তৈরি হবে এবং টেকসই উন্নয়নও নিশ্চিত হবে। এমন বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হলেই শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে, একই সঙ্গে কচ্ছপ নয়, খরগোশের মতো গতিশীলতা ফিরে আসবে।

শিক্ষার্থীদের মানসপটে শিক্ষাব্যবস্থার একাল-সেকাল

ফারহানা সুলতানা তাপসী

আইন বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা ঠিক এমন পর্যায়ে রয়েছে যে 'ভাঙা কলসি বাজে বেশি।' অর্থাৎ শুধু জিপিএ-৫ পাওয়াকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছেও, আদৌ সনদের সে জিপিএ-ফাইভ শিক্ষার্থীদের কতটুকু শেখাচ্ছে, সেদিকটাই ভাবার বিষয়। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীদের কিছুদিন আগে একটি টকশোতে প্রশ্ন করা হয়েছিল, '২৬ মার্চ কি দিবস?' এবং তারা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উত্তর দিয়েছিল 'মার্চের ২৬ তারিখই তো'! এই হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থার রূপ, যে রূপকে বদলাতে গেলে, বদলাতে হবে শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো। মুখস্থবিদ্যা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবমুখী এবং কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

নেই মাল্টিমিডিয়া সুযোগ-সুবিধা ও ট্রেনিং

মুসাররাত তাসমিয়া রহীম

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

২০০৯ সালের শিক্ষানীতিই এখন পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি তার আগেই ২০২৩ সালে নতুন একটা শিক্ষানীতি প্রস্তাবিত হয়। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, 'বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা' হলেও ২০২৩ সালে প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থা হলো 'একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা'। মনে করা হচ্ছে মাদ্রাসা, কওমি, কারিগরি, স্কুলের কারিকুলাম আলাদা হওয়ায় চিন্তা বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং নবম শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থী বুঝে উঠতে পারে না, সে মানবিক, বিজ্ঞান নাকি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জন্য উপযুক্ত। পূর্ববর্তী ক্লাসে এসব বিষয়ের গভীরতা সম্পর্কে ধারণা না থাকায়, অনেক শিক্ষার্থী ভুল বিভাগে পড়াশোনা করে অকালে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ছে। তাই নতুন শিক্ষানীতিতে একাদশ শ্রেণির আগে সব বোর্ডের পাঠ্যবই একরকম থাকবে। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে তারা মানবিক, বিজ্ঞান নাকি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জন্য উপযুক্ত। চিন্তার বিভাজন থেকে মুক্ত হয়ে জাতিগতভাবে যেন সব শিক্ষার্থী এক ধরনের চিন্তা করতে পারে তাই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। নতুন কারিকুলামে প্রত্যেকটা স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং কম্পিউটার ট্রেনিং দেওয়া হবে এমন তথ্য থাকলেও আদতে বাংলাদেশের সব স্কুল-কলেজে এরূপ সুযোগ-সুবিধা নেই।

দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হতে হবে আগে

আজহার মাহমুদ

শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

একটি জাতি বিনির্মাণে শিক্ষা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা যে কোনো জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও তেমন যেমন আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি। এই দায় আমাদের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তাদের নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজটের পর সেশনজট আর ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনেক আগেই দুর্বল করে তুলেছে। সুতরাং এই জাতিকে সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দিতে হলে, সেশনজট দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় থাকতে হবে গণমুখী শিক্ষানীতি, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। তবেই আমরা একটা সুন্দর শিক্ষিত জাতি পাবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে