বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভাবনা

'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' উপলক্ষে ৫ জুন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিবেশ রক্ষায় তাদের ভাবনা জানার চেষ্টা করেছেন তরুণ লেখক ও পরিবেশকর্মী- সাধন সরকার
নতুনধারা
  ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পরিবেশ রক্ষা

বন্ধন চক্রবর্তী

দ্বিতীয় বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পরিবেশ রক্ষার প্রশ্ন সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই পৃথিবীর প্রতি দায়িত্বশীল। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবারই অংশ নেওয়া প্রয়োজন। আমরা পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি, বিদু্যৎ ও পানি সংরক্ষণ করতে পারি, জীবন্ত বাগান সৃষ্টি করতে পারি ও শিল্প-কারখানায় পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে পারি। 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' উপলক্ষে শুধু নয়, সর্বদা প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার প্রতি সচেতনতা তৈরির গুরুদায়িত্ব সবার আগে পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই পালন করে যেতে হবে বলে আমি মনে করি। টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পরিবেশ রক্ষা করতেই হবে।

পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নতুন প্রযুক্তি

মিতু

মাস্টার্স, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পরিবেশ সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দিনে দিনে পরিবেশের ক্ষতি করছি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার করছি। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বৃক্ষরোপণ, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ কমানো, পস্নাস্টিকের ব্যবহার কমানো, পানি ও প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহার ও এ সম্পর্কে জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা দরকার। পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির আয়োজন করা প্রয়োজন। যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নতুন প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো আমলে এনে আলোচনা ও প্রচারণা করা উচিত বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া জনসচেতনতা সৃষ্টি, পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারি।

নিও ডিটারমিনিজম ধারণার আলোকে আমাদের আগামী দিনের পরিকল্পনা

তানভীর মোর্শেদ তামীম

দ্বিতীয় বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সময়ের কালাতিক্রমে পরিবেশের ক্রমাগত বিপর্যয়ের কারণে আজ আমাদের মাতৃসম পৃথিবী নরক যন্ত্রণায় ভুগছে! পরিবেশের আজকের এই বিপর্যয় আমাদের সামনে হঠাৎ করে দৃশ্যমান হয়নি। এটি শত শত বছরের আমাদের সামষ্টিক নারকীয় পরিবেশ হত্যাযজ্ঞের ফসল। কাজেই, এখন আমাদের ভাবতে হবে পরিবেশ এবং মানুষের কর্মকান্ডের মধ্যে কোন উপায় অবলম্বন করলে দুটো উপাদান কোনো রকমের বিপর্যয় ছাড়া সামনের দিকে এগোতে পারবে। এটিকে ম্যান-এনভায়রনমেন্ট রিলেশনশিপ ধারণায় 'নিও ডিটারমিনিজম থিওরি' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ই নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে কাজ করার সিদ্ধান্তে বদ্ধপরিকর। আর কাজগুলো এমন হবে যেখানে মানুষ এবং প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে তেমন বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না। কাজেই, আমরা যদি নিও ডিটারমিনিজম ধারণার আলোকে আমাদের আগামী দিনের পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করতে পারি তাহলে পরিবেশ যেমন একদিকে বিপর্যস্ত হবে না, অন্যদিকে মানুষও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।

গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান

রাইহান

তৃতীয় বর্ষ, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

পরিবেশর রক্ষা নিয়ে কিছু বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে একটা সেস্নাগানের কথা- 'গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান'। কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি রয়েছে কম। ইউরোপ-আমেরিকার কোনো কোনো দেশ থেকে বনভূমি আমাদের দেশে বেশি থাকলেও বাংলাদেশের পরিবেশ ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে ভালো নয়। দিন দিন নদ-নদী, খাল-বিল ভরাট হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েই চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে উপকূলজুড়ে। আমার মনে হচ্ছে পরিবেশ রক্ষার জন্য গাছপালা লাগানো একটা উপায় এটা ঠিক, তবে জনসংখ্যা অবশ্যই কমাতে হবে। অন্যথায় মানুষজনকে আদিবাসীদের মতো বসবাস করতে হবে তাহলে যদি পরিবেশ রক্ষা পায়!

পরিবেশ সুরক্ষায় নাগরিক সচেতনতাও জরুরি

রায়হান রিয়াজ

মাস্টার্স, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও বিশ্বজুড়ে প্রতিবেশ বিনষ্ট এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের বিলুপ্তির মূলে রয়েছে মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকান্ড। বায়ু, শব্দ, মাটি, নদী ও সাগরদূষণ রোধ বা পরিবেশ সুরক্ষার বিষয় অনুধাবনে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এই ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার শর্টকাট কোনো উপায় এখন নেই। আমাদের গ্রহের সম্পদ এবং ইকোসিস্টেমকে টেকসইভাবে পরিচালনার জন্য এর গুরুত্ব বুঝতে হবে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে মানবজীবনের সমৃদ্ধি লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক ব্যবস্থার ওপর। পরিবেশ দূষণ রোধ করতেই হবে- এই নীতিতে অটল থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ সংরক্ষণে সমন্বিত কর্মকৌশল, সবুজ টেকসই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। অন্যদিকে শুধু আইন করলেই হবে না, পরিবেশ সুরক্ষায় নাগরিক সচেতনতাও জরুরি। দেশের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী রাখা সম্ভব।

পরিবেশকে প্রায়োরিটি দিয়ে সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট

মো. মনির হোসেন

চতুর্থ বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ নদীমাতৃক ও কৃষিপ্রধান দেশ। সজীব কৃষির জন্য যেমন নদীশাসন বন্ধ করা জরুরি তেমনি এর পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বও কম নয়। সেই সঙ্গে হাওড়াঞ্চলকে রক্ষা করতে হবে। হাওড়ে আধুনিক উন্নয়ন প্রকল্পের নামে হাওড়কে ধ্বংস করা যাবে না। সর্বক্ষেত্রে পরিবেশকে প্রায়োরিটি দিয়ে সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের যুগে কার্বন নির্গমন হ্রাস ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিরাট চ্যালেঞ্জ। পরিবেশের প্রতি বিরূপ আচরণের ফলাফল হিসেবে এসেছে 'করোনা মহামারি'! ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর পৃথিবী উপহার দেওয়া ও নিজেদের স্বার্থে পরিবেশ রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

পরিবেশের খেয়াল রাখো, তাহলে সে তোমার খেয়াল রাখবে

মো. মোস্তাকিন ফুয়াদ প্রধান

তৃতীয় বর্ষ, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

একটা কথা প্রচলিত আছে- 'পরিবেশের খেয়াল রাখো, তাহলে সে তোমার খেয়াল রাখবে'। প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার মাধ্যম। প্রকৃতি তার সাধ্যমতো সবটুকুই আমাদের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত সেই প্রকৃতি-পরিবেশের ক্ষতি করে যাচ্ছি! আজ পরিবেশ দূষণের চূড়ান্ত ফল হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সামনে এসেছে। এষড়নধষ ঈষরসধঃব ওহফবী- এর প্রতিবেদন অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম। এই সংকট মোকাবিলার জন্য পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই। পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য আমরা বৈদু্যতিক যানবাহন, বৈদু্যতিক তৈজসপত্রের ব্যবহার বাড়াতে পারি। এটি কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পরিকল্পনামাফিক বৃক্ষরোপণ করতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।

মানুষই পারে পরিবেশ রক্ষা করতে

নাদিরুজ্জামান নান্নু

প্রথম বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, নওগাঁ সরকারি কলেজ।

পরিবেশ রক্ষা করতে হলে প্রথমেই সচেতন হতে হবে মানুষকে। কারণ একমাত্র মানুষই পারে পরিবেশ রক্ষা করতে। এবার কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক। কৃষিজমিতে কীটনাশক দিচ্ছে কে? ইটের অবৈধ ভাটা তৈরি করছে কে? যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলছে কে? শিল্প-কারখানার ক্ষতিকর রাসায়নিক নদীতে ফেলছে কে? সব প্রশ্নের উত্তর একটাই আর তা হলো এর জন্য মানুষই দায়ী। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে অতিরিক্ত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ফলে যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ পরিবেশে ছড়াচ্ছে এর জন্য কে দায়ী? উত্তর হলো- মানুষ। সুতরাং মানুষই পারে পরিবেশ রক্ষা করতে। পরিবেশ রক্ষায় মানুষকে সচেতন হতে হবে। তা না হলে একসময় মানুষকে এর চরম মূল্য দিতে হবে বলে মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে