বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এই স্মৃতি থেকেই যাবে

সাইফুর রহমান ফাহিম
  ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

জ্ঞান আহরণের যেই কয়েকটি মাধ্যম আছে তার মধ্যে শিক্ষাসফর অন্যতম। আর সেই সফর যদি হয় কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, কলামিস্টসহ জ্ঞানী-গুণীদের সাথে তাহলে জ্ঞান অর্জনে কোনো কমতি থাকার কথা নয়। বলছিলাম বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম ইবি শাখা কর্তৃক আয়োজিত ২০২৩ শিক্ষা সফরের কথা। দক্ষিণবঙ্গের মানুষ হিসেবে উত্তরবঙ্গে সফরের প্রতি মনের দিক থেকে কৌতূহল একটু বেশিই কাজ করে আমার। সবার সম্মতিক্রমে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফেব্রম্নয়ারির দুই তারিখ ভোর ফজরের নামাজের পর সবাই ক্যাম্পাসে উপস্থিত হলেও ভ্রমণের বাস আসে সকাল ৭টায়। বেশকিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর শুরু হলো গল্প, গান, মাস্তি এবং আনন্দ-উলস্নাসে মেতে উঠল সবাই। একপর্যায়ে গাড়িতেই নাশতা করে নিলাম আমরা। উদ্দেশ্য যদিও বগুড়া সফর তবুও পথিমধ্যে যেহেতু নাটোরের বিখ্যাত 'উত্তরা গণভবন' পথে আছে তাই তা মিস করা হয়নি। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন হৃদয়কাড়া কারুকার্যে সাজানো ভবনের প্রধান ফটক। ঢুকতেই লম্বা একটি পথ; যার দু'পাশে পানির ফোয়ারা তার একটু সামনেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুটন্ত ফুলের বাগান ও দর্শনার্থীদের জন্য বৈঠকখানা। তার একটু সামনে দু'কদম আগালে পড়বে একটি ছোট্ট সংগ্রহশালা জাদুঘর। লেখক আনিসুজ্জামান লিখিত 'জাদুঘরে কেন যাবো' রচনা পড়ার পর থেকেই আর ছোট-বড় বাছবিচার না করেই জাদুঘরে যাই। সেজন্য কোনো দ্বিধা ছাড়াই টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম আমরা কয়েকজন। আর অনেকেই বাইরের দৃশ্য ঘুরে-ঘুরে দেখছিলেন। জাদুঘরে ভেতরে দিঘাপাতিয়া রাজদরবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক দারুণ সংগ্রহশালা। বিশেষ করে রাজা প্রমদানাথ রায় ও সস্ত্রীক রাজা দয়ারাম রায়ের বড় আকৃতির ছবি আর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া। এ ছাড়া রাজাদের ব্যবহৃত পালংক, চেয়ার, রাজসিংহাসন, মার্বেল পাথরের থালা, বাটি, পিতলের জলদানি, চিনামাটির তৈজসপত্রসহ ব্যবহৃত আসবাবপত্রের সমাহার। এভাবে ঘুরে দেখার পর আর কিছুক্ষণ বাইরে ঘোরাঘুরি করে ছবি তুলে সবাই গাড়িতে ফিরে আসি। সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করে আবারও গাড়ি ছুটে চলে মূল গন্তব্যের পানে। দুপুর একটার দিকে আমরা বগুড়া শহরে পৌঁছে যাই। সেখান থেকে খাবার-দাবার নিয়ে চলে আসি মহাস্থানগড়ে। গাড়ি থেকে নেমে সবাই ফ্রেশ হয়ে, জোহরের নামাজ আদায় করে মধ্যাহ্নভোজের কাজটি সম্পূর্ণ করে নিই। মুরগির রোস্ট, বিরিয়ানি, সালাদ, আর ঠান্ডা'য় বেশ জমেছিল। খাওয়া পর্ব শেষ করে নতুন উদ্যমে দলবেঁধে সবাই বেরিয়ে পড়ছিল মহাস্থানগড়কে নতুনভাবে উন্মোচন করবে বলে। এক নিমিষের জন্য মনে হলো আজকের দিনটি শুধুই আমাদের। প্রথমে মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে অবস্থান করি। এখানেও জাদুঘরের বাইরে বাহারি রঙের ফুলের বাগান ও ভেতরে পাথরে খোদাইকৃত মূর্তি, নকশা করা ইট-পাথরের টুকরো এবং পুরনো অলংকার সারি সারি সাজানো ছিল। জাদুঘর থেকে বের হয়ে কাঙ্ক্ষিত মহাস্থানগড় ঘুরে দেখেছিলাম। পূর্বে এই স্থানটি পুন্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। গুপ্ত, পাল ও সেন বংশের শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল এই মহাস্থানগড়। বিশাল বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পুরনো ভাঙা ও খন্ডাংশ প্রাচীরের অংশবিশেষ আবিষ্ট করবে যে কোনো ঐতিহ্যপ্রেমীকে। তার একটু অদূরেই হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র.)-এর মাজার। মাজার জিয়ারতের পর পার্শ্ববর্তী বাজারে বিখ্যাত দই, গুড় ও ক্ষীরের সংমিশ্রণে তৈরি কটকটি নিয়ে সবার হুমড়ি খাওয়া ছিল যথেষ্ট উপভোগ্য। তারপর বেহুলার বাসরঘরে ঘুরে দেখে রাতের খাবার খেয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। দিনের বেলায় গাড়িতে নানাবেশে-নানা সুরে লটারি বিক্রি করেছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্ধুরা। রাতে লটারির্ যাফেল ড্র করে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। এভাবে হাসতে-গাইতে একটা সময়ে রাতের মধ্যাংশে নিরাপদ ঠিকানা ক্যাম্পাসে সবাই ফিরে আসি। বিদায়ে বলতে থাকি এই স্মৃতি থেকেই যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে