শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

আনিসুর রহমান
  ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

ভোরের নতুন সূর্য মানেই নতুন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার আরও একটা অপার সম্ভাবনা। ৭ হাজারেরও অধিক এমন স্বপ্নকে ঠাঁই দিয়ে তাদের জীবনকে রঙিন করে তোলার তীর্থভূমিই হচ্ছে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়। ছোট্ট চারাগাছ থেকে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন লালনের মহীরুহ বৃক্ষ হয়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয় ২০০৬ সালের ২৮ মে। শালবন বিহারের পাদদেশে সবুজে ঘেরা মধ্য-পূর্বাঞ্চলে সর্বোচ্চ ও দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে মাত্র ৩০০ জন শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২৮ মে-কে 'কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গৌরব ও সাফল্যের ১৭ বছরে ক্যাম্পাসের অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় এক অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাবনা, অনুভূতি, আশা-প্রত্যাশা নিয়ে আজকের আয়োজন।

একটু বেশিই ভালোবাসি তোমায় কুবি

প্রিয় কুবি, জানিনা কীভাবে আমি তোমার সবুজের মায়ায় জড়িয়ে গেলাম। নইলে ঘরকুনো এই আমি কেন অবিরাম ছুটে যাই তোমার পানে। তুমি স্নিগ্ধ, চিরসবুজ, প্রাণবন্ত ও চিরযুবা। তোমায় নিয়ে কোনো এক স্তব্ধ বিকেলে কিংবা নিঝুম সন্ধ্যায়, কুয়াশা ভেজা সকালে কিংবা ঝুম বৃষ্টির দিনে, তোমায় নিয়ে লিখব একশো একটা কবিতা। কিন্তু শ্রাবণ মেঘের দিনে তোমার যে শুদ্ধতা তা কি আমি ফুটিয়ে তুলতে পারব? কিংবা গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে জারুল, সোনালু কিংবা কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভায় তোমার যে অনিন্দ্য সৌন্দর্য তা কি আমি কবিতার সুরে আঁকতে পারব? হয়তো না। তোমার সৌন্দর্য হয়তো তাতেও ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। আজ নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় তোমায় বলতে চাই,

'সবাই পড়েছে প্রেমে,

আমি সকলের চেয়ে কিছু বেশি...... '

আজ এই অচেনা প্রহরের ক্লান্ত দুপুরে তোমায় জানাই- 'শুভ জন্মদিন প্রাণের কুবি।' ফুল ফুটুক তোমার বুকে। এক পশলা বৃষ্টি নামুক। ক্লান্তি ও অপূর্ণতা মুছে দিয়ে পূর্ণ হও শুদ্ধতমরূপে। শত শতাব্দীর সাক্ষী হও।

ফাতেহা আক্তার

অসঙ্গতির সংস্পর্শে হারিয়ে না যাক প্রত্যাশা

বিশ্ববিদ্যালয় মানে বিশ্বের সমগ্র চিন্তাদর্শন, মতামত একজায়গায় এসে মিলিত হওয়া এবং ছাত্ররা জ্ঞানের এই স্রোতধারায় যুক্ত হয়ে নিজেদের বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। পুরাতন জ্ঞানের সাথে নতুন জ্ঞানের সংযোগ তৈরি হয়ে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মানুষ এগিয়ে যায়। আবিষ্কারের নেশায় মত্ত হয়ে মানুষ সভ্যতাকে গড়ে তোলে। জ্ঞানসাধনা করতে হয় কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় সে জায়গায় অনন্য। স্নিগ্ধ মন মাতানো প্রকৃতি ও বিশুদ্ধ বাতাস শিক্ষার্থীদের সেই মনন তৈরিতে সহায়তা করছে। হাজার বছরের জ্ঞানচর্চার আঁতুড়ঘর ঐতিহ্য শালবনের বিহারের পাশে অবস্থিত হওয়ায় জ্ঞান তৈরির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে বিশ্বাস করি। বিশ্ববিদ্যালয় ১৮তম বর্ষে পর্দাপণ উপলক্ষে প্রশাসনের নিকট গবেষণায় বাজেট বৃদ্ধি করা, গবেষকদের প্রণোদনা ও উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে উৎসাহিত করা, স্বতন্ত্র লাইব্রেরি তৈরি ও বইয়ের সংগ্রহ বৃদ্ধি করা, পেইড বিভিন্ন বই ও জার্নালে ফ্রি এক্সেসের ব্যবস্থা করা এবং গবেষণায় শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করার আবেদন জানাই। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খাবারে ভর্তুকি প্রদান ও খাবারের মান বৃদ্ধি করা, হলে থাকা ও পড়ার পরিবেশ উন্নত করলে আশা করি আমাদের ভোগান্তি কমে যাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় তার কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছতে পারবে। একদিন একাডেমিক নৈপুণ্যের মধ্যদিয়ে দাপুটে একাডেমিয়া হিসেবে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় আবির্ভূত হবে। তাই সর্বাগ্রে চাই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক। ভালো থাকুক কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়।

মামুন চৌধুরী

কুবিয়ান আমার পরিচয়

অস্তিত্ববাদ দর্শনে উপজীব্য হলো আইডেন্টিটি ফরমেশন তথা পরিচয় গঠন। ব্যক্তি পরিচয়ের নির্মাণ নির্ভর করে এক্সটার্নাল ওয়ার্ল্ডের ওপর। আমাদের জন্মস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রসহ বিবিধ বাহ্যিক বিষয়ের মিশ্রণে আমাদের পরিচয় গঠিত হয়। আর আমার পরিচয়ে প্রিভ্যালেন্ট পরিচিতি হচ্ছে আমি কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই পরিচয় আমার জন্য মোর দ্যান স্পেশাল কারণ- ইটস আ পেস্নস আই গট মাই সেকেন্ড চান্স; আ পেস্নস হোয়ার আই ক্যান প্রম্নভ মাই মেটাল অ্যাগেইন। এটা সত্য যে অনেকের মতন আমারও কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা প্রথম লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু আমি অনুভব করি- ইটস নট এন আইডেন্টিটি আই ওয়ান্টেড, ইটস এন আইডেন্টিটি আই নিডেড। টকমিষ্টি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গোধূলিলগ্নে কৃতজ্ঞ থাকব এই ক্যাম্পাসের কাছে যেটি আমাকে আমার চেয়েও আপন করে নিয়েছে। আজকের এই বিশেষ দিনে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে একটি প্রতিশ্রম্নতিও পেশ করি- ওয়ান ডে আই উইল মেইক দিস পেস্নস প্রাউড অফ মি, ইনশালস্নাহ। হোপফুলি উই উইল গ্রো বেটার; উই উইল গ্রো টুগেদার।

নাফিস আহমেদ ভূঁইয়া

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলুক কুবি

প্রতি বছর শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রবেশ প্রস্থানের মধ্যদিয়ে আজ আমাদের ৫০ একর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। আয়তনে ছোট হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়টির অগণিত অর্জন বিশ্বমঞ্চে চোখে পড়ার মতো। বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও গবেষণা খাতে আর্থিক অনুদানসহ শিক্ষকদের সহায়তা বিশ্ববিদ্যালয়কে এনে দিতে পারে অভাবনীয় সাফল্য। একটি সনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাইব্রেরির উন্নয়ন অপরিহার্য। অপর্যাপ্ত রিডিং রুম বইয়ের স্বল্পতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরির প্রতি অনীহার কারণ। কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম না থাকার কারণে বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলো কেন্দ্রীয় ক্যাফেটোরিয়ায় করতে হয়। সর্বোপরি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ বছর পূর্তিতে প্রত্যাশা এই যে আধুনিকায়নের পাশাপাশি গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবাই সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসবে।

মাইমুনা আফরোজ উর্মি

হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন কুবি

'কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম জন্মদিন'-এ যেন হাজারো প্রাণের বেড়ে ওঠার একটি দিন। এ বছর আবারও দিনটি উদযাপিত হবে নানা উৎসবের আমেজে, নিত্য-নতুন নান্দনিকতায় বা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সঙ্গী করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রতিটা শিক্ষার্থীদের জন্য এক আনন্দ ও প্রত্যাশাময় দিবস। ভালোবাসার আরেক নাম হলো কুবি। ভাবতেই আবেগে আপস্নুত হই আমি একজন গর্বিত কুবিয়ান। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আজ আমাদের বিদ্যাপীঠ দেশের প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি, যেখানে আমরা হাজার হাজার শিক্ষার্থী বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে পা রেখেছি। এই শিক্ষাঙ্গনকে আঁকড়ে ধরেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখি। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে হাজারো বছর সগৌরবে টিকে থাকবে আমাদের প্রাণের শিক্ষাঙ্গন এবং সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যাবে এই প্রত্যাশা। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটানোর সুযোগ হোক আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে।

সাদিয়া আক্তার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে