সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিকড়ের টানে বাড়ি ফেরা তারুণ্যের ভাবনা

পশ্চিম আকাশে উঁকি দিয়েছে জিলহজ মাসের চাঁদ। জানান দিচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহার উপস্থিতি। ঈদ অর্থ পরম মমতায় মায়ের কাছে গাঁয়ে ফিরে যাওয়া। শেকড়ের সন্ধানে ফিকে হয়ে যাওয়া শৈশব-কৈশোর উজ্জ্বল হয়ে উদ্ভাসিত হওয়া। সব ভেদাভেদ ভুলে সব মুসলমান এক কাতারে শামিল হওয়া। তারুণ্যের সেই ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী- মোহাম্মদ এনামুল হক
নতুনধারা
  ২৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

স্বপ্নগুলো যেন নিরাপদে বাড়ি পৌঁছায় ফারহানা আফসার মৌরী শিক্ষার্থী, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। লাল রঙের নোটিশ বোর্ডে এক টুকরো চিঠি; যেখানে লেখা ছুটি! ঈদ উপলক্ষে ছুটির নোটিশ। মনের অজান্তেই গেয়ে উঠে, 'স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার'। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আপনজনদের হাজার হাজার ক্রোশ দূরে ফেলে রেখে আসে শিক্ষার্থীরা। মাসের পর মাস চলে যায়, চাতকের মতো বাড়ি যাওয়ার আকুতি নিয়ে বসে থাকে এসব শিক্ষার্থী। কখন একটা ছুটির নোটিশ আসবে, কখন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, ল্যাব, এক্সাম এসবের প্যারাকে ছুটি দিয়ে বাড়ি যাবে। ঠিক সে সময় যদি আসে ঈদ উপলক্ষে ছুটির নোটিশ; শিক্ষার্থীদের আনন্দের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়। বাড়ি যাওয়ার জন্য শুরু হয় প্রস্তুতি নেওয়া। হাজারো স্বপ্নপিপাসু তরুণের কাছে তখন টিকিটের বিশাল লম্বা লাইনও বিরক্তির কারণ হয় না। তবে ঈদের ছুটিতে ভিড়ের কারণে রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনার সংবাদ নতুন কিছু না। অনেক তরুণের বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায় মুহূর্তেই। এবারের ঈদে একটাই প্রত্যাশা স্বপ্নগুলো যেন নিরাপদে বাড়ি পৌঁছায়। ঈদের আনন্দে মেতে উঠুক প্রতিটি স্বপ্নপিপাসু ঘর। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ মো. আকিব হোসাইন শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ ও তরুণ লেখক ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে সাম্যের সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়। আর সেটা যদি হয় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে তাহলে তো কথাই নেই। মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে বছরের দু'টি ঈদ উৎসব আমাদের মধ্যে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে। এই আনন্দে নিজেকে শামিল করতে মানুষ ছুটে আসে বিভিন্ন শহর কিংবা প্রবাস থেকে। লক্ষ্য হচ্ছে পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা। গ্রাম ও শহরে ঈদের আনন্দে ভিন্নতা রয়েছে। যারা শহরে থাকেন তারা শহরেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন কিন্তু ওইভাবে আনন্দ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে গ্রামের অনেকে জীবনের তাগিদে পড়াশোনা কিংবা চাকরির উদ্দেশ্যে শহরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করলেও ঈদকে ঘিরে সবার লক্ষ্য থাকে গ্রামে সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করা। তাই ঈদে বাড়ি ফেরার মধ্যে এক ভিন্ন স্বাদ লুপ্ত থাকে। এ স্বাদকে আস্বাদন করার জন্য আমরা শহর ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। ছুটে চলি প্রিয় জন্মস্থানের সম্মুখে। গ্রামে পরিবার বা পাড়া-মহলস্নার সবার সঙ্গে ঈদের দিন একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া, পরস্পর কোলাকুলি করা, একসঙ্গে ভোজন করার চিত্র দৃশ্যমান হয়। প্রকৃত অর্থে, ঈদে বাড়িতে যাওয়া, গ্রামের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার মজাই আলাদা। ঈদ শুধু উৎসবের নয় শিক্ষারও রুবেল আহমেদ আলিফ গ্রাফিক্স ডিজাইনার ঈদ দুই অক্ষরের শব্দ কিন্তু, এর অনুভূতি প্রকাশ করতে গেলে দু'হাজার শব্দও কম পড়বে। ঈদকে ঘিরে থাকে হাজারও মানুষের হাজার রকমের পরিকল্পনা। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে। মানুষের ক্ষেত্রে ঈদ মানেই বাড়ি ফেরার আনন্দ, নববিবাহিতা স্ত্রীর কাছে বহুদিন পর প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাওয়া। হলের খাবার খেতে খেতে বিরক্ত হওয়া ছেলেটির কাছে মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার আনন্দ, পথশিশুদের কাছে লাল জামাটা নিজের করে পাওয়া। তবে, কোরবানির উপযুক্ত পশুর কাছে ঈদ মানে ভয়ার্ত আর্তনাদ। ঝুলে থাকা বেঁচে থাকার সৌভাগ্য। জীবনাবসানের অতৃপ্ত কঠিন স্বাদ। আলস্নাহর সন্তুষ্টির জন্য অনেকেই ত্যাগ করেন নিজের প্রিয় পশুটিকে। তাই বলা যায় কোরবানির ঈদ শুধু আনন্দের নয় এটা অনেক বড় মহিমার, ত্যাগের, শিক্ষার। বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে ঈদ আনন্দও কতটা বৈচিত্র্যময়। সৃষ্টিকর্তা বৈচিত্র্যময় রঙিন এই পৃথিবীতে ঈদের আনন্দকে আরও বৈচিত্র্যময় তুলুক এই আমার প্রত্যাশা। ঈদে বাড়ি ফেরায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে মোহাম্মদ নাদের হোসেন ভূঁইয়া ফেনী সরকারি কলেজ বছর ঘুরে আবার প্রতিটি মুসলিমদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। সব সামর্থ্যবান মুসলিম এই দিন ঈদের নামাজ শেষ করে পশু কোরবানির মাধ্যমে অন্তরে যে পশুত্ব বিরাজমান তা ধ্বংস করে। ধ্বংস করে সব অহংকার, ক্রোধ হিংসা। পরিণত হয় একজন খাঁটি ইমানদার ব্যক্তিতে। ঈদ আর গ্রাম যেন একই সুতায় বাঁধা, এটা বাঙালির হাজার বছরের লালিত ঐতিহ্য। প্রতি বছর ২টি ঈদকে কেন্দ্র করে সব মুসলিম ব্যস্তনগরী ঢাকা ছেড়ে আগমন করে প্রাণের শেকড় গ্রামে। এই ঈদ যাত্রায় অনেক সময় আমাদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই সময়ে বেড়ে যায় ছিনতাইকারী বা অসৎ ব্যক্তিদের অসৎ কর্ম তৎপরতা। এর ফাঁদে পড়ে অনেকে হারায় কষ্টে অর্জিত অর্থ সম্পদ। এ ছাড়া এই সময় রাস্তায় বেড়ে যায় জ্যাম, আছে টিকিট ভোগান্তি, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ, সবচেয়ে বড় বিষয় এই সময় সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে বাইক দুর্ঘটনা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই আমরা যারা ঈদে বাড়ি যাবো তাদের অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আর তাহলে আপনার অপেক্ষায় থাকা আপনার পরিবারের এবং আপনার ঈদ আনন্দ যথাযথ উদ্‌যাপন সম্ভব হবে। \হ ঈদের উচ্ছ্বাস থাকুক সকলকে ঘিরে জাবিন তাসনীম খান রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশের বাড়ি বা শিকড়ের টানে গ্রামে ফিরে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ কাটাবো- এই কথাটা ভেবেই চোখেমুখে বেশ আনন্দ ঝলক দেখা যায়। তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির পর টিউশনির তিলে তিলে সঞ্চিত টাকা দিয়ে মায়ের জন্য হয়তো একটা সুতি শাড়ি, বাবার জন্য একটা লুঙ্গি, ছোট বোনের জন্য সাধ্যের মধ্যে একটা থ্রিপিস কিনে শিকড়ের উদ্দেশে রওনা দিয়ে থাকি আর পথে কল্পনা করতে থাকি, পরিবারের সবার সঙ্গে যখন দেখা হবে, সবার যখন স্নেহ ভাজন উষ্ণতা পাবো, তখন কত আনন্দ লাগবে। তারপর গন্তব্যে পৌঁছে বাবা-মা, ছোট বোন সবার সঙ্গে সেই আনন্দের পুনর্মিলন। স্বহস্তে লাগানো প্রিয় ফুল গাছটির খোঁজ। ঈদের দিন পশু কোরবানির পর আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে গোশত দিতে যাওয়ার যে আনন্দ, তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা সবই তো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সত্যি বলতে কি কোরবানি ঈদের সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হলো গরিব দুঃখীদের মধ্যে গোশত বিতরণ আর গোশত পেয়ে তাদের চোখেমুখে যে আনন্দ তা সত্যিই স্বর্গীয়। তারপর ঈদের ছুটি শেষ করে আবার শিকড় ছাড়া হয়ে শহরে ফিরে আসা, কিন্তু এখানেই তো আমাদের ঈদ আনন্দ শেষ হয় না, মেসে বা হোস্টেলে আমরা আমাদের বাড়ির কোরবানি করা পশুর গোশত আমাদের রুমমেটের সঙ্গে শেয়ার করি, কে কত ভালো গোশত রান্না করতে পারি এ নিয়ে খুনসুটি -এও তো আমাদের কোরবানি ঈদের আনন্দের উৎস। ঈদ যে বার্তা রেখে যায় তা ধারণ করতে হবে মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম শিক্ষার্থী: ইংরেজি বিভাগ; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় 'ঈদ মানে হলো আনন্দ, খুশির দিন। সবার সঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে দূর-দূরান্ত থেকে সবাই শিকড়ের টানে চলে আসে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে। সবাই একসঙ্গে পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ পায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে এবারের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবে অনেকেই। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রধান উৎসব হচ্ছে ঈদুল আজহা। সারা বছরে মুসলমানরা অপেক্ষায় থাকে- তাদের প্রাণের উৎসব ঈদুল ফিতর আর ঈদুল-আজহার। তবে, ঈদ দুটি আনন্দের হলেও কিছু বার্তা ও শিক্ষা রেখে যায়। একটি মানুষকে সংযমী হতে শেখায় অন্যটি ত্যাগী। তাই, শুধু আনন্দ নয় ঈদ আমাদের মধ্যে যে বার্তাগুলো রেখে যায় সেগুলো ধারণও করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আবারও আনন্দমুখর হয়ে উঠবে সবার ঈদ আনন্দ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে