শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় যেন বৃক্ষের জাদুঘর

মো. আনোয়ার হোসেন
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় যেন বৃক্ষের জাদুঘর

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জানা-অজানা হাজারও বৃক্ষের সমারোহ দেখে মনে হয় যেন, এ এক বৃক্ষের জাদুঘর। ৭৫ একর ক্যাম্পাসে রয়েছে ৪০০ প্রজাতিরও বেশি প্রায় ৩৭ হাজার গাছ। গাছগুলো ক্রমশই বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন ছায়া সুনিবিড় সবুজে ভোরে উঠেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ, প্রাণ জুড়ানো দখিনা বাতাস, স্নিগ্ধ হাওয়া আর প্রকৃতির কোমল মায়ার চাদরে জড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি জারুলগাছ। ক্যাম্পাসের প্রথম গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে দেবদারু সুশোভিত সড়ক। ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ সুন্দরতম সড়ক হল বিজয় সড়ক, যা কৃষ্ণচূড়া ও দেবদারু সড়কে সংযোগ করে থাকে। প্রতি বিকালে বিজয় সড়ক যেন সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের ছবি তোলার হটস্পট হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের তৃতীয় ও চতুর্থ গেট পেরিয়ে দেখা যাবে বকুল ও শিউলি ফুলের সমারোহ। প্রতিদিন সকালে ফুল কুড়াতে আসে অনেকেই। আর সন্ধ্যা হলেই শিউলি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ ছাড়া গ্রীস্মে সোনালু ফুলের ঝলকে মেতে উঠে ক্যাম্পাস।

প্রতিটি অ্যাকাডেমিক ভবন সবুজে ঘেরা। যেন ছায়াঘেরা এক সবুজ উদ্যান। চারদিকে সবুজের আলোছায়া। বিচিত্র গাছের সমাহার। সবুজের ছায়ায় এক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আরেকটা ভবন দেখা যায় না। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।

এমনকি ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি, মসজিদ, হল, মিডিয়া চত্বর, ডরমেটরি, স্বাধীনতা স্মারক, শহীদ মিনার, খেলার মাঠসহ যে কোনো জায়গায় দাঁড়ানো হোক না কেন, মুহূর্তেই যেন সবুজের নির্মল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ত এতসব গাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে পরিচিত গাছের পাশাপাশি পরিচয় মিলবে বিভিন্ন অপরিচিত গাছেরও। কোনোটা পরিণত, কোনোটা চারা অবস্থা থেকে মাত্রই ছোট ডাল মেলে, কোনোটা আবার শরীরভর্তি সবুজ-কোমল-কচি পাতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। ক্যাম্পাসে ফল-ফুল, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছও রয়েছে। যেমন- শাল, দেবদারু, পলাশ, কাউফল, আঁশফল, সফেদা, আলুবোখারা, আমলকী, বট, পাকুড়, হরিতকি, বহেরা, অর্জুন, কাইজেলিয়া, রাবার, সোনালু, বিলাতি গাব, জাত, নিম, বুদ্ধ নারিকেল ও কাঠবাদাম। ফুলগাছের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য রয়েছে- নীলমণি লতা, ঝুমকো লতা, লাল কাঞ্চন, শ্বেত কাঞ্চন, কাঠগোলাপ, চেরি, জবা, রজনিগন্ধা ও মাধবীলতা।

ক্যাম্পাসে দেখা মিলবে পৃথিবীর অতি দুর্লভ কিছু গাছ। ছায়া সুনিবিড় এই ক্যাম্পাসে বেড়ে উঠা এসব গাছ দেখতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ প্রতিদিনই বাড়ছে। ক্যাম্পাসে শতাধিক দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ঘোড়া চাবুক এবং ব্রেডফ্‌রুট অর্থাৎ রুটি ফল গাছ অন্যতম। ঘোড়া চাবুক গাছকে বিনুনি নামেও ডাকা হয়। অনেক দুর্লভ গাছের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো : গিস্নরিসিডিয়া, জয়তুন, পারুল, হৈমন্তী, জয়ত্রি, ঢাক, তেলসুর, পুত্রঞ্জীব, কানাইডিঙা, হলদু, দইবোটা, পুমুর, মহুয়া, পানিয়াল, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম এবং নাগেশ্বর গাছ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে