শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মায়া

মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন
  ১৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

বাসার সামনে ছোট্ট একটা লন। সবুজ ঘাসে ভরা। বাসার সবাই যখন বিকালে সেখানটায় বসত, ছোট্ট শিশুটির জন্য একটি পাটি পেতে খেলতে দেওয়া হতো। সেই ছোট্ট শিশুটির নাম শেখ রাসেল।

শেখ রাসেল ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে। ছেলেটি চলাফেরায় খুব সাবধানী, কিন্তু সাহসী ছিল। সহসা কোনো কিছুতে ভয় পেত না। একদিন একটা ওলা (বড় কালো পিঁপড়া) হাত দিয়ে ধরে ফেলল, আর সঙ্গে সঙ্গেই কামড় খেল। ছোট্ট আঙুল কেটে রক্ত বের হলো, আঙুলটা বেশ ফুলেও গেল। ও যদি কখনো একটু ব্যথা পেত, সে ব্যথা যেন পরিবারের সবারই লাগত। সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ দেয়া হলো। কামড় খাওয়ার পর থেকেই কালো বড় পিঁপড়া দেখে বলত 'ভুট্টো'। শেখ রাসেল নিজ থেকেই নামটা দিয়েছিল।

তাদের বাসায় অনেক কবুতর ছিল, রাসেল যখন হাঁটতে শেখে, তখন নিজেই কবুতরের পেছনে ছুটত, নিজ হাতে খাবার দিত। বাড়ির সবাই কবুতরের মাংস খেলেও, রাসেলকে শত চেষ্টা করেও কেউ কোনো দিন কবুতরের মাংস খাওয়াতে পারেনি। কারণ একটাই। সে কবুতর ভালোবাসে। যাকে ভালোবাসে তার মাংস কি খাওয়া যায়!

রাসেল লাল ফুল আঁকা থালায় করে পিঁড়ি পেতে বসে কাজের লোকদের সঙ্গে ভাত খেতে খুব পছন্দ করত।

একদিন, ওর পোষা কুকুর টমি যার সঙ্গে রাসেল খেলা করত। হঠাৎ টমি ঘেউ ঘেউ করে ডেকে ওঠে, রাসেল ভয় পেয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে বোনের কাছে গিয়ে বলে, টমি আমাকে বকা দিয়েছে। তার কথা শুনে বাসার সবাই তো হেসেই মরে। টমি আবার কীভাবে বকা দিল! কিন্তু রাসেল খুব সিরিয়াস। টমি তাকে বকা দিয়েছে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, কারণ টমিকে সে খুবই ভালোবাসে। হাতে করে খাবার দিত। নিজের পছন্দ মতো খাবারগুলো টমিকে ভাগ দেবেই, কাজেই সেই টমি বকা দিলে রাসেল তো দুঃখ পাবেই।

রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। রাসেলকে বাসায় যে শিক্ষিকা পড়াত প্রতিদিন তাকে দুটো করে মিষ্টি খেতেই হতো- যদি না খেতো রাসেল বলতো সে পড়বে না। মানুষকে আপ্যায়ন করতে রাসেল খুব পছন্দ করত।

রাসেল টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাড়িতে গেলে তার খেলাধুলার অনেক সঙ্গী ছিল। গ্রামের ছোট ছোট অনেক বাচ্চাদের জড়ো করত। তাদের জন্য ডামি বন্দুক বানিয়ে দিয়েছিল। সেই বন্দুক হাতে তাদের প্যারেড করাত। প্রত্যেকের জন্য খাবার কিনে দিত। রাসেলকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত, বড় হলে তুমি কী হবে? তাহলে বলত, আর্মি অফিসার হবো।

যে ছেলেটিকে সব ভাইবোন সব সময় চোখে চোখে রাখত, যেন তার গায়ে এতটুকু আঁচড় ও না লাগে। যার মায়াবী মুখ দেখলেই মনে হতো গালটা টিপে আদর করি, তাকেই কিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম লোকগুলো নির্মমভাবে হত্যা করল। যাদের স্নেহ আদরে, মায়া মমতায় রাসেল হেসে খেলে বড় হয়েছে তাদের নিথর দেহের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার শেষে নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা হয়। মায়ের কাছে যাওয়ার আকুতিও সেই নির্মম ঘাতকদের একটুও টলাতে পারেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে