রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

প্রজাপতির ইশ্‌কুল

আবেদীন জনী
  ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অরণি যে পথে ইশ্‌কুলে যায়, সেই পথের পাশে একটি শিউলি ফুলের গাছ। গাছে অজস্র প্রজাপতি। শাখায় শাখায়, পাতায় পাতায় প্রজাপতি। গাছটির চারপাশে উড়ছে ঘুরছে প্রজাপতিরা। আরো অসংখ্য প্রজাপতি রূপঝলমল ডানা মেলে উড়ে আসছে গাছটির দিকে। এতগুলো প্রজাপতি একসাথে দেখে ভীষণ অবাক হয় অরণি। কী সুন্দর দৃশ্য! যেন শিউলি ফুলের গাছে ফুটে আছে রঙিন রঙিন প্রজাপতিফুল।

ইশ্‌কুলে যাওয়া-আসার সময় শিউলিগাছটির কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে অরণি। প্রজাপতিদের ওড়াউড়ি দেখে খুব মজা পায়। মনটা ভালো হয়ে যায়। কখনো বা দুহাত মেলে দেয় প্রজাপতিদের দিকে। উড়ে এসে অরণির হাতের তালুতে বসে কয়েকটা। মাথার চুলে বসে। কাঁধেও বসে। শরীরের এখানে-ওখানে কিছুক্ষণ বসে থেকে আবার উড়ে যায়। অরণি তখন ভাবে, প্রজাপতিরা ওর বন্ধু হয়ে গেছে। চলে আসার সময় বলে, ভালো থেকো বন্ধুরা। ভালো থেকো।

একটা বিষয় অরণির মাথায় ধরে না। প্রজাপতিরা শুধু ওই শিউলি গাছে এসে জড়ো হয় কেন? ওখানে তো আরো অনেক গাছ। অনেক রকমের ফুলের গাছ। ও ভাবে, হয়তো ওই শিউলি ফুলের গাছটা ওদের খুব পছন্দ। কিন্তু এখানেই রহস্যের শেষ নয়। আরো একটা ব্যাপার আছে। ইশ্‌কুলে যাওয়ার সময় অরণি দেখতে পায়, চারদিক থেকে প্রজাপতিগুলো উড়ে এসে শিউলিগাছে জড়ো হচ্ছে। আবার ইশ্‌কুল থেকে ফেরার সময় বিকেলবেলা দেখতে পায়, গাছটি থেকে উড়ে চলে যাচ্ছে প্রজাপতিরা। কিন্তু কারণটা কী?

একদিন অরণি ওর মাকে জিজ্ঞেস করল, বলো তো মা, পথের পাশে শিউলি ফুলের গাছে প্রজাপতিরা ভিড় করে কেন?

মা বললেন, হয়তো খাদ্যের খোঁজে আসে।

- কিন্ত ওখানে তো আরো ফুলের গাছ। সেসব গাছে তো যায় না।

- তাহলে ওটা প্রজাপতিদের মেলা। আমাদের যেমন আছে বোশেখমেলা, বিজয়মেলা, বইমেলা। প্রজাপতিদেরও আনন্দমেলা থাকতে পারে।

অরণি বলল, মেলা তো প্রতিদিন হয় না মা। ওরা তো প্রতিদিন আসে।

মা বললেন, এটাও তো ভাববার বিষয়। মেলা প্রতিদিন বসে না। তাহলে নিশ্চয় প্রজাপতিরা খেলতে আসে। তোমরা যেমন মাঠে গোলাছুট, কানামাছি, আরো কত কী খেলতে যাও।

এ যুক্তিটাও ঠিক মনে হয় না ওর। বলল, আমরা বিকেলে খেলতে যাই। সকালে তো যাই ইশকুলে। কিন্তু প্রজাপতিগুলো সকাল হলে শিউলিগাছে আসে। আবার দুপুরের পরই চলে যায়।

মা কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর বললেন, বিষয়টি তাহলে এই রকম, তোমাদের যখন ইশ্‌কুলের বেলা হতে থাকে, তখন প্রজাপতি খোকাখুকিরা ঝাঁকেঝাঁকে শিউলিগাছে আসতে থাকে। আবার তোমাদের যখন ইশ্‌কুল ছুটি হয়, তখন প্রজাপতিরাও গাছটি থেকে উড়ে উড়ে চলে যেতে থাকে। মাঝখানের সময়টুকু উড়ে বেড়ায় শিউলিগাছের ডালে ডালে। তাই তো?

মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলল অরণি।

মা বললেন, এখন বুঝতে পেরেছি। ওটা প্রজাপতিদের মেলা নয়। হাটবাজারও নয়। ওরা শুধু খেলতেও আসে না।

-তাহলে কেন আসে মা?

-প্রজাপতিরা পড়তে আসে। শিউলি ফুলের গাছটি হচ্ছে প্রজাপতিদের ইশ্‌কুল।

তাই বুঝি? দারুণ মজার ব্যাপার তো! ইশকুলে যায় মানুষ খোকাখুকিরা। প্রজাপতিরাও যায় নাকি?

বড্ড অবাক হয় অরণি।

মা বললেন, যেতেই পারে। ওদেরও অনেক কিছু শিখতে হয়। জানতে হয়। কেমন করে উড়বে। সাজগোজ করবে। কীভাবে খাবার সংগ্রহ করবে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে নিজেকে রক্ষা করার উপায়ও জানা প্রয়োজন। আরও কত কী জানতে হয়। তুমি যেমন ইশ্‌কুলে গিয়ে অনেক কিছু শেখো, ঠিক তেমন।

এসব কথা শুনে বিস্ময়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকল অরণি। তারপর বলল, শিউলি ফুলের গাছটা যদি প্রজাপতিদের ইশ্‌কুল হয়, তাহলে যতবেশি শিউলিগাছ থাকবে, ততবেশি ইশকুল হবে প্রজাপতিদের। যতবেশি ইশ্‌কুল হবে, ততবেশি প্রজাপতি পড়ার সুযোগ পাবে, তাই না মা?

- হঁ্যা, তাই-ই তো।

- তাহলে আমি বাবাকে অনেকগুলো শিউলিগাছের চারা কিনে আনতে বলব। আমাদের বাড়ির চারপাশে বুনে দেব চারাগুলো। অনেক শিউলি ফুলের ফুলের গাছ হবে। অনেক ইশ্‌কুল হবে। প্রতিদিন রঙিন রঙিন ডানা মেলে প্রজাপতি খোকাখুকিরা উড়ে আসবে ইশ্‌কুলে। গাছে গাছে, শাখায় শাখায় শিউলি ফুল হাসবে। ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় বসবে প্রজাপতি। এদিক ওদিক উড়বে। ঘুরবে। প্রজাপতিদের রূপের আলোয় ঝলমল করবে চারপাশ। তখন কী যে ভালো লাগবে!

হেসে হেসে মা বললেন, খুব সুন্দর একটা কথা বলেছ মামণি। তোমার বাবাকে তো শিউলিগাছের চারা আনতে বলবেই, সাথে থাকবে আরও অনেক ফুল-ফলের চারা। ওই গাছগুলোও প্রজাপতিদের ইশ্‌কুল হতে পারে।

বাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল অরণি। তিনি বাড়ি ফিরলেই বলবে শিউলিগাছের কথা। প্রজাপতিদের ইশ্‌কুলের কথা। ওর চোখের পাতায় এখন শুধু শিউলি ফুলের গাছ এবং প্রজাপতিদের ইশ্‌কুলের স্বপ্ন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে