শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চালাক শেয়াল

আশরাফ আলী চারু
নতুনধারা
  ১২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

এক চালাক শেয়াল ও এক বিড়ালের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। শেয়াল কী মনে করে বন্ধুত্ব করেছিল সেটা শেয়ালই ভালো জানে। তবে বিড়ালের বন্ধুত্ব করার পেছনে শুধু ভালোবাসাই অন্তর্নিহিত ছিল। শেয়ালের বেশ অভাব ছিল। তাই বিড়াল গৃহস্থ বাড়ি থেকে মাছ, গোস্ত সংগ্রহ করে শেয়ালকে খাওয়াত। বিড়াল তার সর্বোচ্চ যত্ন দিয়ে শেয়াল বন্ধুকে এই সেবা দিত। ভালোই যাচ্ছিল সময়। হঠাৎ একদিন শেয়ালের মনে কুবুদ্ধি এলো। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল নাদুসনুদুস বিড়ালটাকেই একদিন মজা করে খাবে। সুযোগ খুঁজতে থাকল। বন্ধু শেয়ালের হাবভাব দেখে সন্দেহ হলো বিড়ালের। তারপর থেকে নিজেকে সচেতন রেখে বন্ধুর মন রক্ষা করে চলতে থাকল।

পেটে অনেক খিদে। বিড়ালকে দূরে কোথাও নিয়ে ধরে খাবে ভেবে তার সঙ্গে শিকারে যাওয়ার প্রস্তাব দিল শেয়াল। শেয়ালের বন্ধুত্ব পরীক্ষা করতে চাইল বিড়াল। শরীর খারাপ লাগার অজুহাত দেখাল। সেইসঙ্গে যেতে পারবে না বলে জানাল। থলে হাতে নিয়ে শেয়াল বেরিয়ে পড়ল শিকার করতে। বিড়াল দ্রম্নত তার গায়ে সেগুন পাতার রস লাগিয়ে রং পরিবর্তন করে নিল। লুকিয়ে অতি দ্রম্নত সে শেয়ালের যাত্রা পথের এক জায়গায় পৌঁছাল। সেই সঙ্গে এক ঝিকর গাছের গোঁড়ায় মরার ভান করে শুইয়ে রইল। শেয়াল গাছের সামনে এলো। মৃত বিড়াল ভালো করে শুঁকে বলে উঠলো, খেতে চাইলাম জীবিত বিড়াল অথচ কৌশল করেও সঙ্গে আনতে পারলাম না। অবশ্য সেখানেই খেয়ে নিতে পারতাম লোকালয় বলে রক্ষা পেল। বিড়ালের চেঁচামেচিতে গাঁয়ের লোকজন জমা হওয়ার ভয় না থাকলে কখনই ছাড়তাম না তাকে। এই সাতদিনের বাসি মরা খাব না। থাক পড়ে। এই বলে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে শেয়াল আবার পথ ধরলো।

বিড়াল দ্রম্নত ওঠে গিয়ে পুকুরে দিল সাঁতার। তার গাঁয়ের রং ওঠে গেল। আবার সে লুকিয়ে দৌড় দিল। গিয়ে সামনের এক গাছতলায় শুইয়ে রইল।

শেয়াল পথ চলতে পেল এক ডুবা। ডুবা থেকে কিছু মাছ ধরে থলেতে ভরল। সামনে এগিয়ে গেল। আবার এই বিড়ালকে পেল সে। গা ভেজা থাকায় এটা যে তার বন্ধু চিনতে পারল না। ধরে খাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। তখন বিড়াল কণ্ঠ পরিবর্তন করে বলল- শেয়াল ভাইয়া, যে বিড়ালটাকে মরা মনে করে তুমি ফেলে আসলে সেই ছিল তোমার প্রকৃত বন্ধু।

-তার মানে?

-মানে হলো সে তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য অভিনয় করেছে। সে গাঁয়ে গিয়ে সবাইকে জানাবে সব ঘটনা। এখনো সময় আছে তাকে থামাও। না থামাতে পারলে তোমার রক্ষা নেই।

শেয়াল কথা না বাড়িয়ে দৌড় দিল পেছনের পথে। দ্রম্নত দৌড়ে এসে ঝিকর গাছের গোঁড়ায় সেই মৃত বিড়ালটাকে দেখতে না পেয়ে গাছের চারদিকে ঘুরতে লাগল। গাছের আঠা ছিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সেই আঠায় শেয়ালের শরীর গেল আটকে। ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই গাঁয়ের ছেলেরা দেখে ফেলল।

তারপর লাঠিসোটা নিয়ে গাঁয়ের ছেলেদের হিড়িক। ধাপুসধুপুস ঘা পড়ল শেয়ালের শরীরে। শেয়াল বুঝতে পারল তার বোকামি। বুঝতে পারল বন্ধুর সঙ্গে ঘাতকতা করার মনোভাবের ফল।

ওদিকে বিড়াল, বন্ধুরূপী শেয়ালের রেখে আসা মাছের থলে নিয়ে ফিরে এলো নিজের বাড়িতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে