বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

সারস ও কাঁকড়া

কানিজ ফাতেমা খুশী
  ১২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

এক বনে একটি অলস সারস বাস করত। সে এত অলস যে, কোনো কাজই করতে চাইতো না। নিজের জন্য খাবার খুঁজে পেতে খুব অলসতা তার। এই অলসতার কারণে তাকে সারাদিন অনেকবার ক্ষুধার্ত থাকতে হয়। নদীর তীরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে সারাদিন পরিশ্রম না করে খাবার পাওয়ার উপায় নিয়ে ভাবতে থাকে সে।

একদিন সারস গভীর চিন্তা করে একটি বুদ্ধি পেল সে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের বুদ্ধি সফল করতে কাজ শুরু করল। সে নদীর তীরে এক কোণে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগল। তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে একটি কাঁকড়া কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, সারস ভাই, ও সারস ভাই ব্যাপারটা কী? তুমি কেন কাঁদছো?

একথা শুনে সারস আরও বেশি জোড়ে কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, কাঁকড়া ভাইয়া, আমি কি বলব, আমি আমার কর্মের জন্য খুবই অনুতপ্ত। আমার ক্ষুধা মেটাতে আমি আজ পর্যন্ত অনেক মাছ মেরেছি। আমি কতটা স্বার্থপর ছিলাম, কিন্তু আজ আমি একটা ব্যাপার উপলব্ধি করেছি, আর আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে, এখন আমি একটি মাছও শিকার করব না।

সারসের কথা শুনে কাঁকড়া বলল, ওহ্‌! এমনটা করলে তুমি ক্ষুধায় মারা যাবে।

এর উত্তরে সারস উত্তর দিল, অন্য কারোর জীবন নিয়ে নিজের পেট ভরার চেয়ে ক্ষুধায় মারা যাওয়াই ভালো- তাই না ভাই। যাই হোক, আমি কাল ঈগল চাচার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, আগামী এগারো বছর খরা হবে, যার কারণে সবাই মারা যাবে।

কাঁকড়া গিয়ে নদীর সব প্রাণীকে একথা বলল। নদীতে বসবাসকারী কচ্ছপ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, তাহলে সমাধান কী?

সারস বলল, এখান থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি বড় নদী আছে। আমরা সবাই সেই নদীতে গিয়ে বসবাস করতে পারি। সেখানকার পানি কখনো শুকায় না। আমি প্রত্যেককে আমার পিঠে রেখে সেখানে নিয়ে যেতে পারব।

একথা শুনে সমস্ত প্রাণী খুশি হলো। পরের দিন। সারস প্রতিটি প্রাণীকে তার পিঠে বহন করতে শুরু করল। সে তাদের নদী থেকে কিছু দূরে নিয়ে গিয়ে একটি পাথরের কাছে হত্যা করল। কখনো কখনো সে একসঙ্গে দুইটি জীবিত প্রাণী দিয়ে পেট ভরে খেলো। সেই প্রাণীদের হাড়গুলি পাথরের উপর জমাতে লাগল। সারস মনে মনে ভাবল, পৃথিবীর প্রাণীগুলো কত বোকা। খুব সহজেই আমার কথা বিশ্বাস করে নিল।

এভাবে চলল বেশ কিছু দিন। একদিন কাঁকড়া সারসকে বলল, সারস ভাইয়া, তুমি প্রতিদিন কাউকে না কাউকে নিয়ে যাচ্ছ। আমার নাম্বার কখন আসবে?

সারস বলল, ঠিক আছে, আজ তোমাকে নিয়ে যাই।

এই বলে সারস কাঁকড়াকে তার পিঠে রাখল। তারপর উড়ে গেল। যখন তারা দুজনে সেই পাথরের কাছে পৌঁছাল, কাঁকড়াটি সেখানে অন্যান্য প্রাণীর হাড় দেখে ভয় পেল। তার মন ভীষণ ঘাবড়ে গেল। সে তৎক্ষণাৎ সারসকে জিজ্ঞেস করল, কাদের হাড় এগুলো? আর জলাশয় কতদূর?

একথা শুনে সারস জোরে হেসে বলল, কোনো জলাশয় নেই। এগুলো সব তোমার সঙ্গীদের হাড়- যা আমি খেয়েছি। তোমার হাড়গুলোও এই সমস্ত হাড়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে।

একথা শুনে কাঁকড়াটি তার নখ দিয়ে সারসের গলা চেপে ধরল। কিছুক্ষণের মধ্যে সারস মারা গেল। এর পরে, কাঁকড়াটি নদীতে ফিরে এলো। তার বাকি সঙ্গীদের পুরো ঘটনা বলল। তারা সবাই কাঁকড়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা আর অশেষ ধন্যবাদ জানাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে