শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

ভূতের খপ্পরে

গাজী আরিফ মান্নান
  ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

শামীরা অজপাড়াগাঁয়ের একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে বাস করে। গ্রাম সন্ধ্যার পর পুরো সুনশান নীরব থাকে। গ্রামের এই পাড়াতে কারো ঘরে বিদু্যৎ নেই, একমাত্র ভরসা কুপি বাতি! সন্ধ্যা হতেই যেন রাত নেমে আসে পুরো পাড়ায়। সন্ধ্যার পরে সাধারণত কেউ ঘর থেকে বাহিরে বের হতে চায় না। এখানে আশপাশে অনেকগুলো বাঁশ বাগান আছে। সন্ধ্যার পরে ভূতেরা নাকি চারিদিকে ঘোরাঘুরি করে, ছোট বাচ্চাদের ভয় দেখায়। এ কারণে মা-বাবারা সন্ধ্যার পর বাচ্চাদের ঘরে বাহিরে যেতে দেন না। শামীর বাবা প্রতিদিন সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ফিরে আসেন। একদিন তখনো শামীর বাবা ঘরে ফিরে আসেনি, এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে ঘরে কেরোসিন তেলও নেই যে, মা কুপি বাতি জ্বালাবে। তখন মা শামীকে বলল মোড়ের দোকানটা থেকে এক পোয়া কেরোসিন তেল আনার জন্য এবং এটাও বলে দিলেন যে পথে কোথাও যাতে দেরি না করে। শামী মায়ের কথামতো কেরোসিন তেল আনতে বোতলটা নিয়ে দোকানের উদ্দেশ রওনা দিল।

দোকান থেকে তেল কিনে বাড়ির উদ্দেশ রওনা হলো শামী। সামনের একটা বাঁশ বাগান পার হয়ে বাড়িতে যেতে হয়। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ শামীর মনে পড়ছে বাঁশ বাগানের খারাপ ভূত-পেতনির কথা। তাই সে সতর্কতার সঙ্গে সাবধানে পা চালিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। বাঁশ বাগানের সামনে আসামাত্রই শামী একটি ভূত দেখতে পেল। ভূতটি অনেকটা বিশাল আকৃতির এবং একচোখ ট্যারা! ভূতটি তার দিকে তাকিয়ে খেক্‌ খেক্‌ করে হেসে উঠে। শামী ভূতটি দেখে দূত গতিতে এগিয়ে যেতে চাইল, তখনই ভূতটি বলল এই কোথায় যাচ্ছিস? দাঁড়া! এক পা-ও নড়বি না। এ কথা শুনে শামীর হার্টবিট বাড়তে থাকল। সামনেও হাঁটতে পারছে না আবার পেছনেও যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। ভয়ে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো সে। লম্বা একটি লাঠির ওপর ভর করে ধীরে ধীরে শামীর কাছে আসছে ট্যারা ভূতটি। ট্যারা ভূতটি হুঙ্কার দিতেই ভয়ে শামীর কলিজা একদম ঠান্ডা হয়ে আসে। ট্যারা ভূতটি কাছাকাছি আসতেই শামীর সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে। হঠাৎ ভূতটি এসে তার ঘাড়টি ছেপে ধরে, তখন সে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। একপর্যায়ে শামীকে ঘাড় ধরে বাঁশ বাগানের মধ্যে টানতে থাকে ট্যারা ভূতটি। বাঁশ বাগানে টেনে নেওয়ার আগেই শামী ভয়ে রাস্তার মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়, তখন ভূতটি তাকে ফেলে আবার বাঁশ বাগানে ফিরে যায়।

একটু পর শামীর বাবা বাড়িতে এলে তার মা বলল, ছেলেকেতো কেরোসিন তেল আনতে পাঠিয়েছিলাম, এখনো এলো না, আপনি একটু সামনে এগিয়ে দেখেনতো- শামী আসছে না কেন। তখন আবার তিনি হুড়মুড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন ছেলের খোঁজে। হাঁটতে হাঁটতে বাঁশ বাগানের কাছাকাছি পৌঁছাতেই তিনি দেখলেন যে শামী রাস্তার উপর পড়ে আছে। চিৎকার দিয়ে কাছাকাছি গিয়ে শামীকে কয়েকবার ডাকলেন কোনো সাড়া-শব্দ নেই! ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। এবার পাশের ডোবা থেকে একমুঠ পানি নিয়ে চোখের উপর ছিটে দিতেই শামী চোখ খুলে ভূত ভূত বলে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন তার বাবার আর বুঝতে বাকি রইলো না, ভূতের ভয়ে ছেলে জ্ঞান হারিয়েছে। এরপর বাবা ছেলেকে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে যান।

শামীকে যখন তার বাবার কোলের উপর দেখেন তখন তার মা চিৎকার দিয়ে উঠেন! এরপর ছেলেকে ধরে বিলাপ করে কান্না করতে থাকেন, এতে আশপাশের সবাই জড়ো হয়ে যায়। ছেলেকে ঘরের ভেতর নিয়ে এসে তার বাবা খাটের উপর শোয়ে দেন। পরে শামীর বাবা মসজিদের হুজুর ডেকে আনলে তিনি দোয়া দুরুদ পড়ে ফু দেন এবং একটু পানি ও তেল পড়া দিয়ে যান। শামীর মুখ হা করে কয়েক ঢোক পানি খাইয়ে দেন তার বাবা, অন্যদিকে, হুজুরের দেওয়া তেল মা ছেলের হাতে পায়ে মালিশ করতে থাকেন। একটু পরে সে সুস্থ হয়ে উঠলে মা তাকে শোয়া থেকে বসিয়ে কিছু খবার খেতে দেন। এরপর মা তাকে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে সে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা করতে থাকে। তুই আমাদের একমাত্র সন্তান তোর কিছু হলে আমরা কাকে নিয়ে বাঁচব, এই বলে তার মা শামীকে বুকের মাঝে ধরে মুখের মধ্যে চুমু দিতে থাকেন এবং বললেন আর কোনো দিন তোকে সন্ধ্যার পরে দোকানে যেতে বলব না বাবা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে