বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তাক্ত জামা

এইচ এন মিজানুর রহমান
  ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

চারদিকে গুলির আওয়াজ শুনে নুহু আতঙ্কে কেঁপে উঠল। নুহুর বয়স তখন ছয় বছর। চুপটি মেরে সবাই ঘরের এক কোনে বসে আছে। নুহু একবার বাবার দিকে তাকায় আরেকবার মায়ের দিকে তাকায়। কিছুই বুঝতেছে না। রহস্যটা কী? নুহু বলল মা...মা...?? বাহিরে কিসের আওয়াজ? মা কিছুই বলছে না। হাতের ইশারা দিয়ে চুপ থাকতে বলে মা। নুহু বলল, বল না মা...? বল না মা..? কিসের আওয়াজ আসছে বাহির থেকে। তোমরাও দেখছি সবাই চুপ করে বসে আছ।

মা সাহেরা খাতুন মুখের উপর আঁচল দিয়ে মুখটি ঢেকে ফিসফিস করে নুহুকে বলল আস্তে কথা বল, পাক হানাদার আসছে। শুনতে পারলে সবাইকে মেরে ফেলবে। কেন মা আমরা কি দোষ করেছি? আমাদের কোনো দোষ নেই কিন্তু তারা চাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান ও তাদের পুরোটাই দখলে নিয়ে যাবে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে কোনো ধরনের অধিকার দেয়া হবে না। তাই আজকে ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে তারা বড় বড় স্থান, বাজারগুলো দখল করতে চায়।

রাত প্রায় শেষের দিকে। সাহেরা খাতুন আঁচলের তলে নুহু ও তার ছোট বোনকে নিয়ে রাত কাটিয়ে দিল। কোত্থেকে যেন মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ফজরের আজান ভেসে আসছে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুক্রবার রেডিও চালু করেই শুনে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।

নুহুর বাবা যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়লেন বাহিরে। দেশের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিলেন। নুহু.. মা? আব্বু কোথায়? তোমার আব্বু দেশ রক্ষা করতে গেছে। তাইলে মা আমিও যাব!

তুমি দোয়া দেও আমিও দেশ ও জাতির জন্য লড়ব। দেশকে স্বাধীন করেই ছাড়ব ইনশালস্নাহ। সাহেরা খাতুন মুসকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন নুহুকে। কিন্তু চোখে বিজয়ের অশ্রম্ন ঝরছে। নুহু হাত দিয়ে চোখের অশ্রম্ন মুছে দিল আর বলল তোমার ছেলে দেশকে বিজয় করে আবার ঘরে ফিরে আসবে। তুমি দরজার সামনে দাঁড়াও মা। এইতো আমি যাব আর আসবো।...

সাহেরা খাতুন গুলির আওয়াজ শুনলেই মনে হয় যেন নিজের কলিজার টুকরো সন্তানের বুকে লাগলো। আর চিৎকার করে উঠে সাহেরা খাতুন।

চারদিকে গুলির আওয়াজ। ধাওয়া পাল্টাধাওয়া চলছে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে। চোখের সামনেই লাশ আর লাশ। রক্তে নদী হয়ে যাচ্ছে। খোকা আসছে না সাহেরা খাতুনের বুক ছটফট করছে। এভাবেই নয় মাস যুদ্ধ চলার পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৩১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আবদুলস্নাহ খান নিয়াজী সই করেন। আত্মসমর্পণের দলিলের নাম ছিল '(ওঘঝঞজটগঊঘঞ ঙঋ ঝটজজঊঘউঊজ)'।

যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আর সাহেরা খাতুনের খোকা নুহু ফিরে আসেনি। খুঁজতে খুঁজতে দেখে বাড়ির পাশে তারকাঁটার উপরে রক্তাক্ত জামা ঝুলে আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে