খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলামের মুখোমুখি হয়েছিলেন শিশুসাহিত্যিক মোস্তাফিজুল হক। গুরুত্বপূর্ণ আলাপচারিতার চুম্বকীয় অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-
মোস্তাফিজুল হক: লেখালেখিতে কীভাবে এলেন?
আমীরুল ইসলাম: খুব ছোট বেলায় গল্পের বই পড়তাম। তখন হাতের কাছে যা পেতাম তার বেশির ভাগই গল্পের বই। ছড়ার বই খুব কমই পেতাম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলে স্যার আমাকে সহপাঠীদের নামের তালিকা তৈরি করতে বললেন। হাতের লেখা সুন্দর বলেই স্যার আমাকে দায়িত্ব দেন। হাতের লেখা যেহেতু সুন্দর, তাহলে আমি তো কিছু লিখতেই পারি। সে ভাবনা থেকেই ছড়া দিয়ে লেখালেখির শুরু। প্রথম প্রথম ছড়া লিখে কাউকে দেখাতাম না। ১৯৭৭ সাল। তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। স্যারের পরামর্শে ১২ লাইনের একটা ছড়া দৈনিক বাংলার 'সাতভাই চম্পা' বিভাগে পাঠাই। পত্রিকা ৪ লাইন কেটে ৮ লাইন ছাপে। ছড়াটা প্রকাশ করে ১০ টাকা সম্মানীও দেয়। তারপর অন্যান্য পত্রিকাতেও নিয়মিত লেখা দিতে থাকলাম। সেই থেকেই লেখালেখির শুরু। আমার এ অগ্রযাত্রায় আমার শিক্ষকের অবদানকে আমি ভুলতে পারি না। এজন্য আমি শিক্ষক সমাজকে বেশি সম্মান করি।
মোস্তাফিজুল হক : সাহিত্যের অন্যান্য শাখা রেখে সমস্ত ধ্যানজ্ঞান শিশুসাহিত্য নিয়ে কেন, তা বলবেন কী?
আমীরুল ইসলাম : শিশুদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। সবাই একসঙ্গে স্কুলে যায়, খেলে। ওদের একটা আলাদা জগৎ আছে। সে জগৎ রঙিন এবং স্বপ্নময়। শিশুদের নিষ্পাপ মনে কোনো লোভ নেই। ওরা ফুল হয়ে ফুটতে চায়, প্রজাপতি আর পাখির মতো ডানা মেলে চারপাশকে দেখতে চায়। খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতেও জানে। বড়রা কিন্তু সেরকম না। আমারও একটা সুন্দর শৈশব ছিল। হাফপ্যান্ট পরে স্কুলে যেতাম। ফেরার পথে পত্রিকা অফিসে গিয়ে ছড়া দিয়ে আসতাম। এক সময় ইত্তেফাক পত্রিকায় লেখা পাঠানো শুরু করি। তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। এ বছরই রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের দেখা পাই। তাছাড়া পল্টনে বসত অনুশীলন সংঘের সাহিত্য আসর। এটি পরিচালনা করতেন শেখ তোফাজ্জল হোসেন। সবাই সে আসরে যেত। লেখা নিয়ে কথা হতো। পরে রফিকুল হক দাদু ভাইয়ের সম্পাদিত 'সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা'য় লেখা শুরু করলাম। এভাবেই শুরু এবং থেকে যাওয়া।
মোস্তাফিজুল হক : নতুনদের নিয়ে আপনার অভিব্যক্তি কী?
আমীরুল ইসলাম : যে যার মতো লিখছে, লিখুক। লেখালেখিই তো করছে; খারাপ কিছু তো করছে না। তরুণরা নতুন সাহিত্য করবে- এই পরিবর্তনটা দেখার জন্যই বসে আছি।
মোস্তাফিজুল হক : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সম্পাদনার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
আমীরুল ইসলাম : ১৯৮৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুক্ত হই এবং ১৯৮৯ সালে উৎকর্ষধর্মী পত্রিকা 'আসন্ন'র সম্পাদক হই। আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ স্যারের কল্যাণেই এ সুযোগ ঘটে। তার পরামর্শেই কেন্দ্রের প্রকাশনাটা শুরু করি। তারপর পত্রিকা, পত্রিকা থেকে চ্যানেল আই-তে জড়িয়ে পড়ি। অনেক কথা হলো। পাঁচটা প্রশ্ন করতে চেয়েছিলে। আমার একটু তাড়া আছে। আরেকটা প্রশ্নেই আলাপচারিতা শেষ করতে চাই।
মোস্তাফিজুল হক: আপনার বিশেষ কোনো লেখা বা বই- যা নিজের কাছে ভালো লাগে, তা নিয়ে কিছু বলবেন কী?
আমীরুল ইসলাম : না, আমার নিজের লেখা নিয়ে বিশেষ কোনো ভালোলাগা নেই। আমি প্রতিদিনই হতাশ হই। মনে হয়- যা লিখতে চেয়েছি, তা লিখতেই পারিনি। আমি আবারও বলছি, সাহিত্যে তারুণ্যের শক্তি দেখে যেতে চাই। নতুনরা ভালো সাহিত্য করবে; আমি তা দেখে যেতে চাই।
মোস্তাফিজুল হক : অসুস্থ শরীর এবং শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে মূল্যবান সময় দেওয়ায় অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভালো থাকুন সব সময়।
আমীরুল ইসলাম : ধন্যবাদ মোস্তাফিজ। বেঁচে থাকলে আবারও কথা হবে। ভালো থেকো।