শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিজ্ঞান কল্পগল্প

বৃক্ষকন্যা

আশরাফ পিন্টু
  ০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

এক দেশে ছিল এক রাজপুত্র। নাম তার আমির শাহ। শাহজাদার মতো তার শানশওকত নেই। সে ডাক্তারিতে বড় বড় ডিগ্রি নিয়েছে। তার পেশা গবেষণা ও শখ- দেশভ্রমণ করা। একদিন আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে দেখা হলো স্কুল জীবনের এক বন্ধুর সঙ্গে। কুশলাদি বিনিময়ের পর বলল, বন্ধু, তুমি এখনো বিয়ে করনি?

আমির শাহ বলল, ভালো মনের সুন্দরী মেয়ে পাচ্ছি না বলে এখনো বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি।

-তুমি সত্যিই ভালো মনের সুন্দরী মেয়ে চাও?

- হঁ্যা। বন্ধুর কথায় আমির শাহ মাথানেড়ে জবাব দিল।

-তাহলে শোনো; আমাজন বনের অভ্যন্তরে 'মাজম' নামে একটি দেশ আছে। সেই দেশে সুন্দরী এক রমণী আছে- বেলকুমারী তার নাম।

-বেলকুমারী!

-হঁ্যা, তার চেহারা দেখতে বেলের মতো গোলগাল এবং সারাশরীর দিয়ে পাকাবেলের সুগন্ধি বের হয়; এজন্য তার এমন নামকরণ হয়েছে। তবে অনেকে তাকে বৃক্ষকন্যা বলেও ডাকে।

-বৃক্ষকন্যা!

-হঁ্যা, বৃক্ষ বা বেলগাছের বেল থেকে ওর জন্ম হয়েছে বলে এমন নামে ডাকে।

-মানুষের গুণাবলি আছে ওর মধ্যে?

-মানুষ ও গাছ উভয়ের গুণাবলিই রয়েছে ওর মধ্যে। তবে মানুষেরই বেশি।

আমির শাহ মনে মনে চিন্তা করতে থাকে- গবেষণার জন্য এমন মেয়েই তো খুঁজছিল সে। বন্ধুর কাছে থেকে ঠিকানা নিয়ে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে সে বৃক্ষকন্যার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে।

আমাজন পৃথিবীর বিশাল বনভূমি। এর ভেতরে অচেনা এক ছোট্ট দেশ 'মাজম'। ইতোপূর্বে এ দেশের নামই শোনেনি আমির শাহ। মাজম দেশে পৌঁছে মুগ্ধ হয়ে যায় সে। দেশটা যেন এক স্বর্গপুরী। বাতাসে বাতাসে যেন মধু ভেসে বেড়াচ্ছে।

চারিদিকে মৌ মৌ গন্ধ। গাছে গাছে হরেক রকমের ফল, হাজার রঙের ফুল। পথে-প্রান্তরে রং-বেরঙের ফুল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে- সেসব ফুল যেন রোশনাই ছড়াচ্ছে। হরিণেরা ছুটে চলছে ঝরনার পানে, পাখিরা ডালে ডালে গান গাইছে। মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য দেখে আমির শাহ একদম ভুলেই গিয়েছিল বৃক্ষকন্যা বেলকুমারীর কথা। একটা বেলগাছের দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়ে যায়। দেখে সারি সারি বেলগাছের মধ্য দিয়ে একটি সরু পথ চলে গেছে। বন্ধু বলেছে বেলগাছের বাগানের মধ্যে বেলকুমারী থাকে।

আমির শাহ কিছু দূর এগুতেই একটি সুন্দর ছোট্ট ঘর দেখতে পায়। ঘরের সামনে বন আলোকিত করে বসে আছে পরমা সুন্দরী এক নারী। নিশ্চয়ই এই সেই বৃক্ষকন্যা বেলকুমারী! আমির শাহ একটু অন্যমনস্ক হতেই লতায় পা জড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিল। এ দৃশ্য দেখে বেলকুমরাী ছুটে আসে আমির শাহের কাছে। লতাগুলোকে সে দু'হাত দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়।

আমির শাহ নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, আমি তোমাকে নিতে এসেছি। কিন্তু বেলকুমারী কোনো জবাব দেয় না। আমির শাহ বুঝতে পারে বেলকুমারী বোবা। মনে মনে বলে, তোমাকে লন্ডনে নিয়ে গিয়ে পুরোপুরি মানুষ করে তুলব আমি।

বেলকুমারীকে নিয়ে আমির শাহ বাড়িতে পৌঁছিতেই চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। বেলকুমারীর রূপের রোশনাইতে সারাবাড়ি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বাড়ির সবাই ধন্য ধন্য করতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন যেতেই সবার মন খারাপ হয়ে যায়। বেলকুমারী সুন্দরী হলে কি হবে, সে তো কথা বলতে পারে না। তাছাড়া তার মাথায় গাছের শেকড়ের মতো চুল।

বেলকুমারীকে পুরোপুরি মানুষ করতে আমির শাহকে অনেক ঘাম ফেলতে হয়। অনেক গবেষণার পর ধীরে ধীরে সফলতার মুখ দেখে। প্রথমে সার্জারি করে তার মাথার শেকড় ফেলে দিয়ে চুল বসিয়ে দেয়। ঔষধের পর ঔষধ খাওয়ার পর ধীরে ধীরে বেলকুমারী কথা বলতে শুরু করে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে বেলকুমারী পুরোপুরি মানুষে পরিণত হয়।

এরপর এক শুভক্ষণে মহাধুমধামের সঙ্গে রাজপুত্র আমির শাহের সঙ্গে বেলকুমারীর বিয়ে হয়ে যায়।

(রূপকথা 'বেলকুমারী' থেকে সায়েন্সফিকশন 'বৃক্ষকন্যা'য় রূপান্তর)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে