সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নানা রঙে সন্ধ্যামালতী

নূরজাহান নীরা
  ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে মানুষের মন যতটা ভালো থাকে, যতটা উৎফুলস্ন হয় তা হয়তো আর কোথাও হয় না। আর এই প্রকৃতিকে সৌন্দর্যের রূপ দিতে সবচে' বেশি অবদান রাখে বিভিন্ন ধরনের ফুল। ফুলের সংস্পর্শে এসে মনে দোলা জাগে না এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই আছে। আর সে ভালোলাগা ফুলের একটি হচ্ছে সন্ধ্যামালতী। দিনের ক্লান্তি শেষে পড়ন্ত সূর্যের গা যখন এলিয়ে পড়ে সন্ধ্যার কোলে ঠিক সে সময়ে মনের ক্লান্তি দূর করতে ধরণির বুকে হেসে ওঠে সন্ধ্যামালতী। সন্ধ্যার বাতাসটা ভরে ওঠে সন্ধ্যামালতীর মৃদু মিষ্টি গন্ধে। এ সময়ের ঝিরঝিরে বাতাসটা মনমাতানো হয়। মনকে উড়িয়ে নিয়ে যায় এক অজানা ভালোলাগার রাজ্যে। শুধু মিষ্টি গন্ধই না, এই ফুলগুলো দেখতেও খুব সুন্দর হয়। ঝোপঝাড় বিশেষ উদ্ভিদ হওয়ায় একসঙ্গে অনেক ফুল ফোটে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বিভিন্ন রঙের হয় এ ফুল। লাল, সাদা, কাঁচাহলুদ, গাড়গোলাপি। এ ফুলের একটা মজার ব্যাপারও আছে তা হলো, এক গাছে দু'তিন রকম ফুল ফোটে- এমনকি এক ফুলেও দু'রকম রং থাকে। যেমন- সাদালাল, সাদাহলুদ, সাদাগোলাপি। অসাধারণ সৌন্দর্যের এ ফুল খুব সহজেই বারান্দায়, ছাদে, বাগানে যে কোনো জায়গায় লাগানো যায়। অনেকেই বাড়ির সদর দরজায় লাগিয়ে থাকেন শোভাবর্ধনের জন্য। সারা বছর এ ফুল ফোটে তবে বর্ষা ও শরতে বেশি ফোটে। অল্প একটু মাটিতেই বড় হয় এ গাছ। নরম কান্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদ এটি। পানি জমে থাকলে যেমন মারা যায় আবার বেশি তাপেও মারা যায়। এ দিক থেকে যথেষ্ঠ সৌখিন এ উদ্ভিদটি। বিকাল ৪টা থেকে ফুটতে শুরু হয় বলে সময়টা এসেছে, ফোর-এ ক্লোক বা ৪টার ফুল। বৈজ্ঞানিক নাম: গরৎধনরষরং লধষধঢ়ধ। ঘুপঃধমরহধপবধব পরিবারের গরৎধনরষরং গণের ভেষজ গুল্ম। এটি বহুবর্ষজীবী, গুল্মজাতীয়, ঝোপঝাড় উদ্ভিদ। ডালপালায় ভরে যায়। এর বীজযুক্ত ফলগুলি গোলাকার, কুঁচকানো এবং পরিপক্ব হওয়ার পরে কালো রঙের হয়, প্রথমে সবুজ-হলুদ থাকে কিছুদিন পরে রং বদলায়। কান্ডগুলো ঘন, পূর্ণ, চতুর্ভুজাকার এবং বহু খাঁজযুক্ত। পাতা অনেকটা পানের মতো। অনেক দেশে এটি ভেষজ হিসেবে চাষ হলেও আমাদের দেশে শুধু বাগান সাজানো বা বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য লাগানো হয়। গ্রামাঞ্চলে শিশু কিশোররা এ ফুলটি রঙের কাজে ব্যবহার করে। সাদা কাগজে বিভিন্ন ছবি এঁকে যেমন শিউলিফুলের হলুদ অংশ দিয়ে রং করে তেমন এই সন্ধ্যামালতী দিয়েও তারা রং করে। লাল, গোলাপি বা হলুদ রঙে ভরে দেয় তাদের ছবির খাতা। অনেকেই মালাগাঁথে এ ফুল দিয়ে।

এছাড়া বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ তৈরিতে এর ফুল ও শিকড় ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এর পাতার রসও ক্ষত সারানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। এই উদ্ভিদটি ক্যাডমিয়ামের মতো কিছু ভারী ধাতুর মাঝারি ঘনত্বের দূষিত মাটির দূষণ কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ উদ্ভিদ চাষ করলে মাটি ভালো থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে