সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বই পড়ি জীবন গড়ি

সাকী মাহবুব
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে আমাদের টিকে থাকতে হলে জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। আর জ্ঞান অর্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম বই।

বই জ্ঞানের আধার, চির যৌবনা, চির অমলিন আনন্দের উৎস। পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছেন, বিশ্বসেরা সফল মানুষ হয়েছেন, তারা সবাই বেশি বেশি জ্ঞান অন্বেষণে সময় দিয়েছেন। পৃথিবীর যে কোনো বরেণ্য মানুষের জীবন ইতিহাস ঘাঁটলেই এ কথার সত্যতা চোখে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বিশ্ববিখ্যাত পারস্যের মরমি কবি ওমর খৈয়াম জান্নাতের উপকরণের মধ্যে বইকে স্থান দিয়েছেন সবার আগে। কবির ভাষায়, 'রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে কিন্তু একখানা বই অনন্ত যৌবনা যদি তেমন হয়।' বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন, আমার মধ্যে উত্তম যদি কিছু থেকে থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী। পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক নরমাল মিলারের হৃদয়ের আর্তি হলো- আমি চাই, বই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃতু্য হয়। মানব জীবনে বইয়ের গুরুত্বের কথা স্মরণ করে টলস্টয় বলেছিলেন, জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। বই বই এবং বই। মিল্টনের ভাষায় অ মড়ড়ফ নড়ড়শ রং :যব ঢ়ৎবপরড়ঁং ষরভব নড়ড়শ ড়ভ ধ সধংঃবৎ ংঢ়ৎরঃ. একটি ভালো বই পাঠকদের বিবেককে জাগ্রত করে আলোকিত পথ দেখাতে পারে। জ্ঞান বুদ্ধিকে বাড়িয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারে। এ জন্যই থোরে বলতেন, উৎকৃষ্ট বইগুলোকে প্রথমেই পড়ে ফ্যালো, নতুবা তোমার আর সেই বইগুলো পড়ার সুযোগ হবে না। এডিসন তাই বলেছেন, ব্যায়ামের দ্বারা যেমন শরীরের উন্নতি হয় পড়াশোনার দ্বারা মনেরও তেমনি উন্নতি হয়ে থাকে। বিশ্ব কাঁপানো বীর যোদ্ধা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যুদ্ধে গেলেও বই নিয়ে যেতেন। তার শয়ন কক্ষের পাশেই থাকতো লাইব্রেরি। মজার বিষয় হলো এ মহান মনীষী বলেছেন, অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবনটাই অচল। টুপার বলেছেন, একটি ভালো বই হলো বর্তমান ও চিরকালের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বন্ধু। আলস্নামা শেখ সাদী বলেছেন, জ্ঞানের জন্য তুমি মোমের মতো গলে যাও, কারণ জ্ঞান ছাড়া তুমি আলস্নাহকে চিনতে পারবা না। সুতরাং, জ্ঞান অর্জন করতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে। আর এ জন্যই মহান মনীষী অলিভার গোল্ডস্মিথ বইয়ের গুরুত্ব চিত্রায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, উৎকৃষ্ট কিছু বই বেছে রেখ, এই বই হবে তোমার জীবনের নিত্যসহচর। মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো বই। কারণ বই হচ্ছে, দুটি মলাটে আবদ্ধ জ্ঞানের আলো। মানব জীবনকে বিকশিত করার জন্য বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। দেশে সুনাগরিক গড়ে তোলার প্রধান উপায় একটা আর তা হলো সুলিখিত, সৃষ্টিশীল এবং মননশীল বই। বই মনের জন্য একটি উন্নতমানের পস্ন্যাটফর্ম। বইয়ের চেয়ে উত্তম আসবাব পৃথিবীতে আর একটিও নেই। সুস্বাদু খাদ্যে যেমন মানুষের স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটায় তেমনি চিত্তের বিকাশ ঘটায় বই। প্রবাদে আছে- যে জাতির জ্ঞানের ভান্ডার শূন্য সে জাতির ধনের ভান্ডারও শূন্য। তাই জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে হলে আমাদের সবাইকে অবশ্যই বই পড়তে হবে। আমাদের অভিভাবক সমাজকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে, ভবিষ্যতের নাগরিকদের হাতে আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান ও নীতি নৈতিকতায় সমৃদ্ধ সুগ্রন্থ তুলে দিতে হবে। তারা যেন ক্লাসের বইয়ের পাশাপাশি বইয়ের রথে চড়ে বিশাল পৃথিবীর অজানাকে জানতে পারে। তাই আসুন, আমরা সবাই কণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে একটি স্স্নেস্নাগান তুলি, বই পড়ি জীবন গড়ি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে