মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নদীমাতৃক একটি দেশ 'বাংলাদেশ'

শওকত এয়াকুব
  ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত বাংলাদেশ নদীমাতৃক একটি দেশ। 'নদীমাতৃক' শব্দটিকে ভাঙালে হয় নদী মাতা যাহার/যার। সত্যিই ছোট, মাঝারি ও বড় নদীকে ধরলে, বাংলাদেশে নদীর অন্ত নেই। নদীগুলোই এ দেশের প্রাণ। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী হচ্ছে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ও কর্ণফুলী- তবে এর মধ্যে যমুনা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় নদী। নদীগুলো জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ দেশজুড়ে। নদীর দু'পাশেই গড়ে উঠেছে নগর ও বন্দর। নদীগুলো কোনোটি ছোট আবার কোনোটি বড়। প্রতিটি নদীই নির্দিষ্ট অঞ্চলে তার নিজস্ব অবদানের ক্ষেত্রে স্বীকৃত।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে বাংলাদেশে শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৭০০টি নদনদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২২,১৫৫ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৩ সালে বাংলাদেশের নদনদীর সংখ্যা ছিল ৩১০টি। বর্তমানে বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা প্রায় ৭০০টি এ নদনদীগুলোর উপনদী ও শাখানদী রয়েছে। উপনদী শাখানদীসহ বাংলাদেশের নদীর মোট দৈর্ঘ্য হলো প্রায় ২২,১৫৫ কিলোমিটার। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গত ৫০ বছরে আমাদের দেশে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার নদীপথ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অথচ নদীপথ বাংলাদেশের পরিবহণব্যবস্থার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। দেশের অনেক নদীতে বর্ষাকাল ব্যতীত বছরের অন্য কোনো মৌসুমে পানি থাকে না। আর কিছু কিছু জায়গায় পানি থাকলেও সেটা খুব অল্প পরিমাণে- যা নদীর প্রবহমানতাকে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। আবার কোথাও কোথাও পানি শুকিয়ে চর জেগে ওঠার দৃশ্যও চোখে পড়ে। যেখানে পানির অভাবে চারিদিক খাঁ খাঁ করে। প্রাকৃতিকভাবে সময়ের ব্যবধানে নদীতে পলি পড়ে। এতে নদীর বিরাট অংশ ভরাট হয়ে যায়। অনেক নদী পাদদেশে অবস্থিত হওয়ার কারণে উজানে নদীবাহিত পলিগুলো ধারণ করতে হয়। যার ফলশ্রম্নতিতে নদীর বিস্তৃতি ও প্রশস্থতা আরও কমে যায়। নাব্যতাও হ্রাস পায় চরম আকারে। একটা সময় ছিল যখন নদীর বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত জোয়ার-ভাটা হতো। মৎস্য চাষিসহ সব শ্রেণির কৃষকদের চাষবাসে খুব সুবিধা হতো। পানির কোনো অভাব হতো না। সবাই চাষের জন্য পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু বর্তমানে নদীর উৎসমুখ শুকিয়ে যাওয়া। নদী ভরাট হয়ে যাওয়া। নদীতে পানি না থাকা প্রভৃতি কারণে মানুষ আর আগের মতো পানি ব্যবহার করতে পারছে না। নদীতেও আর জোয়ার-ভাটার প্রভাব দেখা যায় না।

আমরা প্রকৃতির ওপর অত্যাচার করি তাই প্রকৃতিও প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হয়। তারপরও মানুষের স্বেচ্ছাচারী থেমে নেই। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই নদীর করুণ দশা প্রত্যক্ষ করেও দীর্ঘদিন পুনর্খনন বা সংস্কার করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। নদী তদারকি বাড়াতে হবে। কালবিলম্ব না করে নদী খনন করা দরকার। নদীকে নষ্ট করে যারা প্রকারান্তরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও প্রকৃতির ক্ষতি করছেন, সেই সব শুভবোধহীনদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। মনে রাখতে হবে। নদী বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে