সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু জ্বরে কখন কী ধরনের টেস্ট করাতে হয়?

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে সরকারি হিসাবেই প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বুধবার পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হয়েছেন আর মোট মারা গেছে ৫৬৯ জন। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে একজন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারলে এ রোগে মৃতু্য ঝুঁকি খুব একটা থাকে না। কিন্তু রোগটিকে অবহেলা করলে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি অবশ্য বলছে, প্রতি চারজনে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে এবং মারাত্মক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন দ্রম্নতই হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।

সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সাধারণত জ্বরই এ রোগের লক্ষণ। সঙ্গে বমি, র?্যাশ ওঠা, চুলকানি বা মাথাব্যথার উপসর্গও থাকতে পারে। তবে লক্ষণগুলো সাধারণত দুই থেকে সাতদিন পর্যন্ত থাকে এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই বেশির ভাগ রোগী সুস্থতার দিকে চলে আসেন।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন যে, জ্বর কমলে বা রোগী ভালো হয়ে যাওয়ার পর রোগীর রক্তের পস্নাটিলেট কাউন্ট কমে যেতে পারে এবং তখনি রক্তক্ষরণসহ নানা জটিলতা দেখা দিত পারে। এ কারণে জ্বর চলে যাওয়ার পর রোগীকে সতর্ক থেকে নিয়ম অনুযায়ী চলতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। সিডিসি বলছেন, ডেঙ্গু রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। বরং এর লক্ষণগুলো দেখে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। (যেমন জ্বর হলে জ্বরের ওষুধ)।

ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সাধারণত ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, সিবিসি (পস্নাটিলেট কাউন্টসহ) পরীক্ষা করাই যথেষ্ট হয়ে থাকে। তবে রোগীর অবস্থা জটিল হলে বা রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দিলে তখন আরও কিছু টেস্ট করানো দরকার হয়ে থাকে।

কোন টেস্ট করাতে হবে

বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায় এবং ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছরেই এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সিডিসি বলছে, ডেঙ্গু হয়েছে কিনা সেটি বোঝার একমাত্র উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তের বেশ কিছু পরীক্ষা আছে যেগুলোর এক বা একাধিক অনেক সময় করাতে হয় রোগীর অবস্থা বুঝে। সাধারণত যেসব পরীক্ষা করাতে হয় তার কয়েকটি সম্পর্কে কিছু তথ্য নিচে দেয়া হলো:

ডেঙ্গু এনএস-১

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে, এই টেস্টের মাধ্যমে কেউ ডেঙ্গু পজিটিভ কিনা সেটি দেখা যায়। ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার শুরুর দিকেই এ পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটিকে শনাক্ত করা যায়। ঢাকায় চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বরের প্রথম দিন থেকেই ডেঙ্গু এনএস-১ টেস্টের ফল পজিটিভ হওয়ার কথা। চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে হলে এটি নেগেটিভ হয়ে যায়। কিন্তু এর বেশি দিন হয়ে গেলে তখন আর এই পরীক্ষা করে খুব একটা লাভ হয় না।

আবার শুরুতেই পরীক্ষা করে নেগেটিভ হলেই যে ডেঙ্গু জ্বর হয়নি এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সাধারণত চিকিৎসকরা টেস্টের ফলাফলের সঙ্গে অন্য উপসর্গ ও লক্ষণ মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কারণ অনেক সময় এনএস-১ একদিন পজিটিভ হলে পরদিনই আবার নেগেটিভ হতে পারে।

সাজ্জাদ হোসেন বলছেন, সাধারণত জ্বর আসার প্রথম দিনই এই টেস্ট করাতে পারলে ফলাফল ঠিকঠাক মেলার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।

ডেঙ্গু আইজিএম

সিডিসি বলছে, এই টেস্টের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস আরও ভালোভাবে শনাক্ত করা যায়।

সাধারণত জ্বর হয়ে যাওয়ার ৪/৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে এবং এর মধ্যে কোনো পরীক্ষা না হয়ে থাকলে এই পরীক্ষার মাধ্যমে পজিটিভ কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই সাধারণভাবে জ্বর আসার পাঁচ দিন পর এই টেস্ট করতে দেন চিকিৎসকরা।

কিন্তু যদি জ্বর আসার পর ৯/১০ দিন পার হয়ে যায় তখন আবার এই পরীক্ষাও শুধু নেগেটিভ দেখাতে পারে। কারো জ্বর হওয়ার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ষষ্ঠ দিনের মাথায় এই পরীক্ষাটি করানো- যা ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত করা যায়। রক্তে আইজিএম পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে বর্তমানে রোগীর সংক্রমণ রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে একটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মো. রায়হান বলছেন, এনএস-১ এর সময়সীমা পার হয়ে গেলে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমেই ডেঙ্গু পজিটিভ কিনা তা দেখা যায় এবং এজন্য প্রথমে আইজিএম ও এরপর আইজিজি টেস্ট করে দেখার দরকার হতে পারে।

আইজিজি

ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলছেন, শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা আছে সেটা বোঝার জন্য চিকিৎসার এ পরীক্ষাটি দিয়ে থাকেন।

এই রোগ প্রতিরোধী সক্ষমতাই শরীরের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসসহ বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। অ্যান্টিবডিগুলো হলো প্রোটিন যা ইমিউন সিস্টেম তৈরি করে জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য।

আইজিজি সূচক স্বাভাবিকের চেয়ে কম মানে হলো শরীর যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করতে অক্ষম এবং সেক্ষেত্রে সংক্রমণে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রক্তে আইজিজি পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে আগে রোগীর সংক্রমণ ছিল এবং বর্তমানে সে দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আর দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া মানে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং তখন বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে