শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুনসুটি নাকি প্রেম

আজহারুল ইসলাম আল আজাদ
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ছোট মানুষ যখন স্বাস্থ্যে একটু লম্বা ও স্বাভাবিক গঠনের হয় তখন তাকে খুব সুন্দর লাগে। অজানা অচেনা লোক তাকে দেখলে মনে করে যে, সে শেয়ানা হয়েছে। স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পেলে কিন্তু তার জ্ঞানের বিস্তরণ ঘটে না। যে বয়সে যা হওয়ার তাই হয়ে থাকে। পিতৃ-মাতৃহীন মৌ এ বয়সে তেমন কিছু বুঝে না। সংসারতো দূরের কথা সে ভাত রান্নাই জানে না। আবেদা তাকে আজ দুপুরে ভাত রাঁধতে দিল। সে ভাত রাঁধতে গিয়ে হাত পুড়ল। সে ভাতের মারি (ফেন) ছেঁকছিল আর অমনি গরমভাত হাতে পড়ে হাত পুড়ে গেল। সে চিৎকার করে বলল, আবেদা ফুপু তুমি কোথায় গেলে এদিকে এসো? আমি পুড়ে গেলাম। আবেদা তখন ওয়াশরুমে ছিল। তার চিৎকার শুনে আবেদা ছুটে এলো। ভাগ্যিস ঘরে বার্নাল ছিল। সঙ্গে সঙ্গে আবেদা ঘর থেকে বার্নাল এনে মেখে দেওয়ায় তেমন জ্বালা পোড়া হলো না, কিন্তু ফোসকা পড়ল। চাচা পলক তার বাড়ির বারান্দায় বসে ছিল। মৌলদার চিৎকার তার কানে পৌঁছিল। তিনি ছুটে এলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, মৌ কি হলো তোমার, চিৎকার করলে কেন? মৌ বলল, না ছোটবাবা তেমন সমস্যা হয়নি। পলক বলল, না মা আমি জানি কিছু একটা হয়েছে। না হলে তুমি চিৎকার করলে কেন? মৌ বলল, ছোটবাবা আমি শখ করে আজ ভাত রাঁধতে গেছি। ভাতের ফেন গালানোর সময় গরমভাত হাতে পড়ে হাত পুড়ে গেছে। পলক আবেদাকে লক্ষ্য করে বলল, শোন আবেদা, মৌলদারতো ভাত রান্নার কথা নয়। তুমি হয়তো নিজে একটু আরাম নেয়ার জন্য ওকে দিয়ে ওই কাজটি করালে আর ওর হাতটি অমনি পুড়ে গেল! এটি কি তোমার করা উচিত হলো। আবেদা বলল, না ভাইয়া আমি ওকে ভাত রান্না করতে বলিনি। ও স্বইচ্ছায় এই কাজটি করছে। মৌ বলল, না ছোটবাবা আমি নিজেই এ কাজটি করছি- শেখার জন্য। তবে হাঁটিতে পারে না কেহ না খেলে আছাড়। আমি হাত পুড়ে এ কাজটি শিখলাম, ছোট বাবা। পলক মৌয়ের কথা শুনে হেসে উঠল। সত্যি মা তুমি পারবে। তোমার মাঝে শেখার আগ্রহ আছে। মৌ বলল, তোমার দোয়া চাই- ছোটবাবা। পলক মৌয়ের মাথায় হাত রেখে বলল, দোয়া থাকল বড় হও মা, বড় হও- বলে পলক হাসতে হাসতে চলে গেল। আবেদা মনটা খারাপ করে মৌলদাকে বলল, তোমার আঁকুপাঁকুতে আমি তোমাকে ভাত রাঁধতে বলে আমি হলাম অপরাধী। আমি আর কোনো দিন তোমাকে ভাত রাঁধার সুযোগ দেব না। তুমি এত বড় হলে কিছুই করতে পার না। মেয়ে মানুষকে অনেক কাজ শিখতে হয়। সংসার দেখাশোনা করা, কাপড় কাচা, থালাবাসন মাজা, ছেলেমেয়েকে মানুষ করা- কত কি? মৌ আবেদাকে মায়ের আসনে রেখেছে, তাই তার সব উপদেশ মেনে নিয়ে বলল, ফুপু তুমি দেখে নিও আমি সবগুলো শিখব। তা ছাড়া তুমিতো আছই! মৌয়ের কথায় আবেদার মন ভরে গেল। আবেদার মনটা অনেকটা ফুর ফুরে হয়ে গেল। মৌলদা জানে, কোন কথা বললে ফুপুর মন ভালো হবে- সেই কথাটি-ই তাকে বলতে হবে।

আজ বাড়ির বাহিরে মৌ একবারও যায়নি। চাচির মুখখানা দেখার জন্য একবার না একবার চাচির কাছে তাকে যেতে হবে। তাছাড়া চাচির ব্যবহার ঠিক যেন মায়ের মতো। মা যেমন মেয়েকে আদর করে তেমনি চাচিও। চাচির মুখখানা যেন তার মায়ের মতো। চাচিকে দেখলে তার প্রাণটা ভরে যায়। মৌ মায়ের ছবি খুঁজে পায় চাচির মাঝে। চাচিই তার মা। মৌয়ের চিন্তাচেতনার তেমন উন্মেষ ঘটেনি। তার ছোট মানুষি চিন্তাচেতনা এ রকমই হবে। মা এবং চাচি যে এক নয় সেটি সে জানে না। মায়ের মতো হতে পারবে কেউ মায়ের জায়গা দখল করে মা হতে পারে না।

চাচি নাহার খুবই ভালো মানুষ। সে বেশ শিক্ষিত। নাহারের মনে কোনো আপন পর নেই। সে ভাবে মৌ যদি তার মেয়ে হতো তাহলে কি কি করত? এই চিন্তাচেতনা থেকে সে মৌকে ভালোবাসে। মৌ এর জন্য তার ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। পৃথিবীতে মানুষের বাস; মানুষ বলতে নারী ও পুরুষ। সে নারী হয়ে পুরুষ জন্ম দিয়েছে। সে পারল না কোনো নারীর মা হতে- সেদিক থেকেও মৌকে ভালোবাসে। সে দিন সে বলল, হঁ্যা গো অলকের বাপ আমাদেরতো মেয়ে নেই মৌ-ই আমাদের মেয়ে হয়ে থাক। তার বড় শখ মৌলদা অনেক লেখাপড়া করবে। তাকে ধুমধাম করে বিয়ে দেবে। তারা মৌয়ের স্বামীর বাড়িতে সেজেগুজে যাবে। মৌয়ের স্বামী তাদের শ্বশুর-শাশুড়ি তাদের বিয়াই-বিয়ানি হিসেবে ডাকবে। তাদের জামাতা আব্বা -আম্মা বলে ডাকবে। নাহার চায় না অলকের সঙ্গে মৌয়ের ভাইবোন ব্যতীত অন্য কোনো সম্পর্ক থাক। কিন্তু ছেলে অলক মৌলদাকে ভালোবাসে। মৌ যেন একদিন তার জীবনসঙ্গী হতে পারে। মৌ অলককে ভাই হিসেবেই ভালোবাসে। ভাইবোনের মতো তাদের খুনশুটি চলে। অলক মৌয়ের সঙ্গে যে খুনশুটি করে সেটি সে ভালোবাসার দিক থেকেই করে। মৌলদা করে ভাই হিসেবে।

মৌ বাড়ির বাইরে গেল। অলকের সঙ্গে তার দেখা হলো। অলক মৌয়ের কাছে এগিয়ে এসে জাপটে ধরে গালে একটা চুমু দিল। মৌ ভাবল অলক তার ভাই তাই সে তাকে আদর করল। মৌয়ের গালে অলকের চুমু দেয়াটা নাহার দেখে ফেলল। সে ভাবল ভাইবোনের বেশ মধুর সম্পর্ক। এভাবেই যেন তাদের দিন চলে যায়। পরক্ষণেই তার মাথায় এলো এটিতো ভালো লক্ষণ নয়- এভাবেই তাদের মধ্যে প্রেম হতে পারে। এটি মেনে নেয়া যাবে না। মৌকে সে নিষেধ করবে। সে যেন অলকের সঙ্গে কখনও এরূপ না করে। নাহার আরও ভাবল, শুধু মৌকে বললেতো হবে না- অলককেও বলতে হবে। তা না হলে এক সময় তাদের প্রেম হয়ে যাবে- তখন তাদের ঠেকানো যাবে না। মৌ এসে চাচির কপালে চুমু দিয়ে বলল, আজ সারাদিন আসিনি তাই চুমু দিলাম। ভাইয়া আমাকে দিল। আমি তোমাকে দিলাম; আমার কাছে কিছুই থাকল না বলে হাতে তালি দিয়ে হাসা শুরু করল। নাহারের বুঝতে বাকি রইল না যে, সে চুমুকে ভাইয়ার চুমুই ভেবে নিয়েছে। তারপরও তাকে বসতে বলল। মৌ একটা বসার টুল নিয়ে চাচির গায়ের কাছে বসে মাথা রাখল নাহারের কোলে। নাহার বলল, মা শোন বলি- তুমি বড় হয়েছ, এখন আর কোনো ছেলেপুলের সঙ্গে তোমার গায়ে গা লাগান যাবে না। তোমার শরীরে কেউ হাত দিক এটা করতে দেবে না। মেয়েদের পান থেকে চুন খসলেই ইজ্জতের ক্ষতি হয়। এ সমাজে যত দোস সব হলো মেয়েদের। মৌ বলল, ভাইয়া আমাকে মাঝে মাঝে ধরে গালে চুমু দেয়, কখনো শুরশুরি দেয়। তুমি আমাকে কেন বলছ, যা বলার ভাইয়াকে বলবে? আমিতো ভাইয়ার কাছে যাই না। ভাইয়াই আমার কাছে এখন বসে। মৌয়ের কথা শুনে নাহারের মনটা খুব খারাপ হলো। অলকতো হলো শেয়ানা ছেলে- তাকে কীভাবে বলবে এসব কথা। তারপরও নাহার অলককে ডাকল, অলক বাইরে ছিল সে ছুটে এলো। ঘরের দুয়ারে দাঁড় হয়ে বলল, মা বল, কিছু বলবা? মা বলল, এদিকে এসো। বড় হয়েছ ঠিকই কিন্তু হুঁশ হয়নি এখনো। অলক ফিস ফিস করে বলল, এই কাম সারছে! আজ মৌকে চুমু দেয়া দেখে ফেলেছ। নাহার বলল, আমার কাছে এসো! অলক কাছে গেলে দুজনকে দুপাশে বসিয়ে বলল, ও তোমার ছোট বোন ওকে তুমি আদর করতেই পার- তবে একটা বয়স আছে, এখন মৌ সেই বয়সটি পেরিয়ে এসেছে। কেউ যদি দেখে ফেলে তুমি মৌলদার গায়ে হাত দিয়েছ তারা কিন্তু ছেড়ে দেবে না। ওর গায়ে আর কোনো দিন হাত দেবে না! অলক মাথা হেট করে সব কথা শুনল, কিন্তু মাকে সে কিছুই বলতে পারল না। সব কথা শুনে একটি কথা বলল, ঠিক আছে মা!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে