রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অনুভবের ঋতু-হেমন্ত

মনিরা মিতা
  ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

তুমি অনুভবের, খানিকটা মস্নান, ধূসর, অস্পষ্ট। তোমাকে অনুভব করা যায় কিন্তু সেভাবে দেখা যায় না, গায়ে মাখা যায় না। নেই তোমার তীব্র প্রখর অথবা উন্মোচিত রূপ। অন্যদের মতো তোমার বর্ণ, গন্ধ, গরিমা নেই। তাইতো তুমি মৌন, শীতল, অন্তর্মুখী। তোমার পরিচয় খচিত থাকে শিশিরে ভেজানো কচুপাতায় অথবা দূর্বাঘাসের কচি ডগায়।

শিউলি বোঁটায় চুপিচুপি রং মাখ আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়। প্রভাতে কাঁচা হলুদের রঙ মেখে সূর্যকে ডেকে আন তারপর ধুয়ে দাও কুয়াশার চাদর। মাঠজুড়ে সাজাও ধানের প্রাচুর্য, যেন সবুজ স্বপ্ন দুলে ওঠে। হলুদে-সবুজে একাকার নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। চারদিকে ধূসর আবহ ঘিরে রাখ। তোমার মায়াজালে বন্দি হয়ে হিম হিম, স্বল্পায়ু দিন ক্রমে মিলিয়ে যায়, শেষ বিকালে কুয়াশার আবছা চাদর প্রকৃতিকে ঢেকে শিশিরের শব্দের মতো নামে সন্ধ্যা। তুমি সমহিমায় উজ্জ্বল হেমন্ত। ভোরের আলো ফুটতেই গাছে গাছে পাতায় পাতায় মুক্তাদানার মতো শিশিরের ফোঁটায় ঝলমলিয়ে ওঠো তুমি।

পাখ-পাখালির দল মহা কলরবে ডানা মেলে উড়ে যায় নীল আকাশে, নীলিমার প্রান্ত ছুঁয়ে মালার মতো উড়ে যায় পাখির ঝাঁক। শিমুল তুলোর মতো ভেসে চলে সাদা মেঘের খেয়া। চারদিকে সবুজ গাছপালার ওপর বয়ে যায় মিষ্টি গন্ধে ভরা ফুরফুরে হাওয়া। শিউলি তলায় হালকা শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসের ওপর চাদরের মতো বিছিয়ে থাকে সাদা জাফরং মেশানো রাশি রাশি শিউলি ফুল।

কৃষাণ-কৃষাণীর আশায় বুকবাঁধা স্বপ্ন রচনা নিয়ে যাত্রা হয় হেমন্তের। দূরে গ্রামের গাঢ় সবুজ রেখার ওপর জমে থাকে হেঁসেল থেকে উঠে আসা ধোঁয়ার কুন্ডলী।

সিদ্ধ ডিম আর ভাঁপা পিঠার সঙ্গে ধনেপাতা ভর্তা খাওয়ার লাইন জমে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে। প্রকৃতির রূপ-বদলের চিত্র, সকালের সোনা রোদ মন ভরিয়ে দেয়।

হেমন্তের এমন মন মাতানো রূপের সাক্ষী হিসেবে কবি তার কবিতায় গেঁথে রাখে অনবদ্য, গায়ক আদিম সুর তোলে তার একতারায়।

'রাত্রি যদি কেঁদে মরে শিশির তাকে বলি

রোজ প্রভাতে আনমনে পা ভিজিয়ে চলি।

নানা রঙের উদাম পাখি মন সুখেতে খেলে

নরম ঘাসের চাদর মোড়া সদ্য ভেজা জলে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে