সাধারণত একজন বিচারক হতে চাইলে তাকে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষায় তিনি যেন বেশ ভালো নম্বর পান। তাকে 'ক্লার্কশিপ' করতে হবে। এরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করা যায়। একজন ব্যক্তির তিন থেকে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বিবেচনা করা হয় তাকে শুরুতেই স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে নাকি তিনি আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
জার্মানির সংবিধান, যেটি 'বেসিক ল' হিসেবে পরিচিত, সেখানে একজন বিচারক শুধু সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ এবং রায় প্রদানের ক্ষেত্রে তাকে অন্য কেউ প্রভাবিত করতে পারবে না বলে উলেস্নখ রয়েছে। একজন বিচারক যেখানে কাজ শুরু করেন, পুরোটা সময় সেখানেই কাজ করবেন বলেও নিয়ম রয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে এই প্রক্রিয়া পানির মতো স্বচ্ছ মনে হলেও আসলে পুরোপুরি নিখুঁত বলে কিছু নেই। যেমন 'বেসিক ল'-তে যা উলেস্নখ আছে তার ব্যাখ্যা একেকজন একেক রকম দিতে পারেন। বিচারকদের সেরকম কোনো ব্যাখ্যা যদি প্রকৃত অর্থে সংগতিপূর্ণ মনে না হয় কিংবা যদি মনে হয় তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করছেন সে ক্ষেত্রে করণীয় কী?
বিচারকদের জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য জার্মানির বিচার বিভাগের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ কাঠামো রয়েছে। সেখানে একজন রাজ্যপর্যায়ের বিচারকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করা হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। কাঠামোটি এমন যে তাতে বাইরের কোনো পক্ষের অর্থাৎ আইনপ্রণেতাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
বরং যে বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি যাতে সুবিচার পান তা নিশ্চিত করা হয় বিভিন্ন ধাপে। বিষয়টি জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত, যেটিকে সাংবিধানিক আদালত বলা হয়, সেখানেও গড়াতে পারে। সাংবিধানিক আদালত শুধু সংবিধানের আলোকে রায় দিয়ে থাকে।
সেই আদালতের রায়ও যদি কারও পছন্দ না হয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিচার আদালত এবং মানবাধিকার আদালতেও বিষয়টি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। জার্মানি যেহেতু ইইউর সদস্য, তাই এই দুই আদালত চাইলে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের রায় রিভিউ করতে পারে এবং সেই রায় বাতিলও করতে পারে।
বিচারক নিয়োগের দু'টি পর্যায়ে সুনির্দিষ্টভাবে আইনপ্রণেতা, অর্থাৎ জনগণের প্রতিনিধিদের অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রথমত, রাজ্যপর্যায়ে বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে জুডিশিয়ারি কাউন্সিল। এই কাউন্সিলগুলো নির্ধারণ করে কাকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে কিংবা কাকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। অধিকাংশ কাউন্সিলে সদস্যদের মধ্যে রাজ্য সংসদের সাংসদরা রয়েছেন। অর্থাৎ তারা একজন বিচারকের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, জার্মানিতে প্রধান বিচারপতি বলে কেউ নেই, বরং জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত সাংবিধানিক আদালতের বাইরে আরও পাঁচটি কেন্দ্রীয় আদালত রয়েছে যেগুলো সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের বিচার করে। এ সব আদালতের বিচারক নির্বাচিত হয় ৩২ সদস্যের কমিটির মধ্যে গোপন ভোটাভুটির মাধ্যমে। এই ৩২ সদস্যের মধ্যে ১৬ জন হচ্ছেন ১৬টি রাজ্যের বিচারমন্ত্রী এবং অন্য ১৬ জন জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগের নির্ধারিত প্রতিনিধি। এই প্রতিনিধিরা আইনপ্রণেতা নাও হতে পারেন তবে তাদের আইন বিশেষজ্ঞ হতে হবে।
সর্বোচ্চ আদালতে একজন বিচারককে ১২ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। আর জার্মান সংসদের মেয়াদ হয় চার বছরের। তাই সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বিচারক বদলানো যায় না। আর একজন বিচারকের অভিশংসন সংসদের পক্ষে করা দৃশ্যত সম্ভব হলেও কার্যত প্রায় অসম্ভব। -ডয়েচে ভেলে