শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ইউরোপীয় ইউনিয়ন

নতুন ডিজিটাল আইন কি অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে?

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ইনেস মরিনিও পর্তুগালের লিসবনে নিজের দিনের কাজ গুছিয়ে অফিস থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সংবলিত একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে, এমন একটি ম্যাসেজ আসে তার ফোনে।

ঘটনাটি যখন ঘটে তখন তার বয়স কেবল ২১। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'আমি অসাড় বোধ করতে শুরু করি এবং পরিবারের কাছে ছুটে যাই। যাকে আমি বিশ্বাস করতাম এমন একজন আমার নাম উলেস্নখ করে ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে। পর্নো পস্ন্যাটফর্মে এবং টুইটার ও টেলিগ্রামেও এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। ঘটনাটা আমাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। '

মরিনিওর মতো অনেক নারীই ছবি-ভিত্তিক এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এদের সাবেক প্রেমিকরা বিচ্ছেদের পর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিনা সম্মতিতে এমন পর্নোগ্রাফি আইনত দন্ডনীয়।

তিনি বলেন, অনলাইনে ভিডিওটি দেখার পরপরই আমি পুলিশের কাছে যাই। তারা আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে এমন একই ধরনের আরও ঘটনার সন্ধান পান। ২০২২ সালেও এই মামলা চলছে।'

মরিনিওর বয়স এখন ২৪ এবং এমন যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের সহায়তার জন্য 'নো পারচিলিস' নামের একটি সংগঠন চালান।

তিনি বলেন, 'রাস্তায় যখন হাঁটছি, তখনও মাঝেমধ্যে মনে হয় যে কেউ হয়তো আমাকে ভিডিও করছে। আমি ক্যানসার থেকে সেরে উঠেছি এবং নিজেকে সবসময় মনে করিয়ে দিই যে এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছি, মামলাটিতেও জিতব।'

ইউরোপে নতুন আইন

জীবনযাপনের নানা দিকই এখন ক্রমেই ডিজিটাল হয়ে উঠছে। অনলাইনে রিভেঞ্জ পর্নোর মতো ঘটনাও বেড়ে চলেছে। পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান হেইটএইড এবং ল্যান্ডেকার ডিজিটাল জাস্টিস মুভমেন্টের জরিপে দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ নারীই অনলাইনে আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয় পান। এদের অন্তত ৩০ শতাংশ ভুয়া নগ্ন ছবি বা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার ভয় পান।

ডারহাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লেয়ার ম্যাকগিস্নন ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'অনেক নারী জানতেও পারেন না যে তারা অনলাইনে এমন অপরাধের শিকার হচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশে টয়লেটে বা কাপড় বদলানোর স্থানে তাদের অজ্ঞাতে তোলা ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে অজানা একটি ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করে।'

অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপের অইনপ্রণেতারা ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট নামে একটি আইন পাসে সম্মত হয়েছেন। অনলাইনে অবৈধভাবে থাকা যে কোনো কিছুর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণে অনলাইন পস্ন্যাটফর্মগুলোকে বাধ্য করাটাই এর লক্ষ্য।

ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য আলেক্সান্দ্রা গিজ এই আইন পাসের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, 'এই আইনের ফলে হয়রানির শিকার নারীরা অনলাইনে থাকা এসব ছবি সহজে সরিয়ে ফেলতে পারবেন। কারণ নাম প্রকাশ না করে পরিচয় নিশ্চিত করার একটি পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে রয়েছে। এর ফলে অনলাইনে গিয়ে কেবল নিজেদের চেহারা দেখিয়েই এই সব সরিয়ে ফেলার দাবি জানানো যাবে।'

তিনি জানান, বড় পর্নো পস্ন্যাটফর্মগুলোর জন্যও ফোন নাম্বার নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং কনটেন্ট ব্যবস্থাপনা টিমকেও সম্ভাব্য অবৈধ ছবি চিহ্নিত করার

প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ইউরোপের যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ইউরোপিয়ান সেক্স ওয়ার্কার্স রাইটস অ্যালায়েন্স অবশ্য ফোন নাম্বার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলে তা তাদের অধিকারের পরিপন্থি হবে বলে আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক ম্যাকগিস্নন মনে করেন, এই আইনের ফলে আদতে তাদের লাভই হবে।

তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, 'যৌনকর্মীদের সম্মতি ছাড়াই তাদের নানাভাবে ব্যবহার করে আসছিল বড় পর্নো ওয়েবসাইটগুলো। এ সব থেকে তারা লাভবানও হচ্ছিলেন না। বরং এখন পস্ন্যাটফর্মগুলো যৌনকর্মীরা নিজেদের আয় ও নিরাপত্তা বজায়

রেখেই কাজ করতে পারবেন।'

ম ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে