মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় পুরুষদের বিবাহ হরতালের কারণ কী?

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ভারত বিশ্বের ৩০টি দেশের একটি- যেখানে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত নয়। কিন্তু ধর্ষণ আইন নিয়ে দিলিস্নর আদালতের এক শুনানি ঘিরে বিতর্ক চলছে গোটা ভারতে। পুরুষদের একটি অংশ মনে করছে 'বৈবাহিক ধর্ষণ' অপরাধ হিসেবে গণ্য হলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অপব্যবহার হতে পারে।

ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনে 'বৈবাহিক ধর্ষণে'র বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে নতুন দিলিস্নর আদালতে এক পিটিশনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে এই বিতর্কটি শুরু হয়েছে। আবেদনকারীরা বলছেন, স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলন স্বামীর অধিকার নয়, এজন্য স্বামী কখনো স্ত্রীকে জোর করতে পারেন না। বিদ্যমান আইনে স্বামীকে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়ার বিষয়টিকে তারা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, এটি অসাংবিধানিক ও নারীদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

গত এক দশকে ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে ভারত। তবে বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। বিশ্বে ত্রিশটির মতো দেশ রয়েছে যেখানে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ ধরা হয় না। সেই তালিকায় রয়েছে ভারতের নাম। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া কোনো নারীর সঙ্গে এবং অপ্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে ধর্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এর কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। আঠারো বছরের ঊর্ধ্বে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্ত্রীর অনুমতিবিহীন হলেও তা ধর্ষণের আওতায় পড়ে না। অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক উইমেন অ্যাসোসিয়েশন এবং রিট ফাউন্ডেশন এই বিষয়টি নিয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিল। তাদের আইনজীবী করুণা নুন্দির মত, 'একজন ধর্ষক সব সময়ই ধর্ষক, ভুক্তভোগীর সঙ্গে বিয়ে তাকে এই অপরাধ থেকে রেহাই দিতে পারে না।' আদালতের শুনানির সময় থেকে টুইটারে এ নিয়ে শোরগোল চলছে। বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত হলে বিবাহ বয়কটের হুমকি দিয়েছেন অনেকে। 'হ্যাশট্যাগ ম্যারেজ স্ট্রাইক' দিয়ে এই নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ চলছে। অনেকেই দাবি করছেন, পণ কিংবা শারীরিক নিগ্রহের মতো এই বিষয়টি নিয়ে ভুয়া মামলা হতে পারে, বিপদে পড়তে পারেন পুরুষরা। ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনে 'পুরুষদের প্রজাতন্ত্র নেই' হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে টুইটার। সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের দাবি, ভারতের পুরুষরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এই দেশে পুরুষের কোনো স্থান নেই। নারী ক্ষমতায়নের নামে সমাজের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটছে, এমন দাবি করছেন তারা। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬০ সালে ভারতীয় দন্ডবিধি তৈরি হয়। সেই সময় একজন নারীর আইনি অধিকার বিবাহের পরে তার স্বামীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। নারীরা সেই সময় তাদের স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সম্পত্তি কেনা বা চুক্তিতে অংশ নিতে পারতেন না।

বিশেষজ্ঞদের মত, বৈবাহিক ধর্ষণের শিকড় লুকিয়ে রয়েছে ঔপনিবেশিক আমলে। সিনিয়র আইনজীবী রেবেকা জন আদালতকে বলেন, বিবাহে যৌন সম্পর্কের প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু কোনো স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন না। ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার জানিয়েছিল, বৈবাহিক ধর্ষণ ফৌজদারি অপরাধ হলে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানে আঘাত লাগবে, স্বামীরা হেনস্তার শিকার হতে পারেন।

আবেদনকারীদের যুক্তি, ২০১৫-১৬ সালের ভারতের জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ১৫-৪৯ বছর বয়সি ৮৩ শতাংশেরও বেশি যৌন সহিংসতার শিকার বিবাহিত নারীরা তাদের স্বামীকে এই অপরাধ জন্য দায়ী করেছেন। নয় শতাংশের ক্ষেত্রে অপরাধী সাবেক স্বামী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে