শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তালাকের নোটিশ গ্রহণ করা না করার আইনগত গুরুত্ব কী?

অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন তালাকের কয়টি নোটিশ পাঠাতে হয়, একটি, দুটি না তিনটি। অনেকে বলেন তিন মাসে তিনটি নোটিশ পাঠাতে হয়। প্রকৃতপক্ষে তালাকের একটি নোটিশ একবারই উপরোক্ত নিয়ম মেনে পাঠাতে হয়। যে কোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, আপনি তালাক দিতে চাইলে, তালাকের নোটিশ নিজেই তৈরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাকে তালাক দিচ্ছেন তিনি যদি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাস করেন, তাহলে সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে ওই তালাকের নোটিশ দিতে হবে। আর তিনি যদি পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে। ওই একই নোটিশের কপি যাকে তালাক দিচ্ছেন অর্থাৎ তালাক গ্রহীতাকে পাঠাতে হবে। আর মনে রাখবেন, তালাকের নোটিশে দুজন উপযুক্ত সাক্ষীর কলাম রাখবেন এবং তাদের স্বাক্ষর নেবেন।
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

আপনি তালাক দিয়েছেন, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা মোতাবেক তালাক গ্রহীতাকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন কিন্তু তিনি নোটিশ গ্রহণ করেননি। দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আপনার দেয়া তালাক কার্যকর হবে। আপনার দায়িত্ব নিয়ম মেনে সঠিক ঠিকানায় তালাকের নোটিশ পাঠানো। বাকি কাজ আইন অনুযায়ী আপনা-আপনিই কার্যকর হয়ে যাবে।

আপনি দুটি উপায়ে স্ব-স্ব ব্যক্তির কাছে তালাকের নোটিশ পাঠাতে পারেন। ১। সরাসরি তালাকের নোটিশ সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান/ মেয়র এবং তালাক গ্রহীতার কাছে পৌঁছে দিয়ে আরেকটি রিসিভ কপিতে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে পারেন, ২। সরকারি ডাক যোগে অর্থাৎ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রাপ্তিস্বীকারসহ (এডি) সহযোগে রেজিস্ট্রি করে চিঠি সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পাঠাতে পারেন। এতে সুবিধা বেশি এবং আইনি জটিলতা কম। কারণ সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় চেয়ারম্যান বা মেয়র চিঠি গ্রহণের পর প্রাপ্তি স্বীকার (এডি) ডকুমেন্টস আপনার ঠিকানায় আপনার কাছে ফিরে আসে। মনে রাখবেন চেয়ারম্যান বা মেয়র মহোদয় সব ধরনের চিঠি গ্রহণ করে থাকে। আপনি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে নিয়ম মেনে তালাকের নোটিশ পাঠালে তালাক গ্রহীতা নোটিশ গ্রহণ না করলে তাহলে কেন গ্রহণ করেননি তা পোস্ট অফিসের মন্তব্য সংবলিত নোটিশটি আপনার কাছে ফেরত আসবে। যেমন চিঠির খামের উপর লেখা থাকে 'প্রাপক চিঠি গ্রহণ না করায় ফেরত' অথবা 'গ্রহণে অস্বীকৃতি' অথবা 'খুঁজে পাওয়া গেল না' কিংবা 'এ ঠিকানায় পাওয়া গেল না'- কৌশলে এমন মন্তব্য কথাগুলো লেখা থাকে। যেদিন চিঠিখানা আপনার নিকট ফিরে আসবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পার হলে তালাক আপনা আপনিই কার্যকর হয়ে যাবে। অনেকে নোটিশ গ্রহণ না করে চিঠি সম্পর্কে অবগত হয়েও মিথ্যা বলে থাকে যে তালাকের নোটিশ পায়নি কিংবা নোটিশ স্বাক্ষর করিনি। তারা নিছক বোকার মতো কাজ করে থাকে।

এবহবৎধষ ঈষধঁংবং অপঃ-১৮৯৭ এ খবমধষ ইবহবভরঃ ড়ভ জবমরংঃবৎবফ চড়ংঃ সম্পর্কে ২৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, রভ ধহু ঢ়বৎংড়হ ঁহফবৎ ধহু ধপঃ ংবৎাব ধহু ফড়পঁসবহঃ নু ৎবমরংঃবৎবফ ঢ়ড়ংঃ যিবৎব :যব ঢ়ৎড়ঢ়বৎ ঢ়ৎড়পবফঁৎব ধহফ ঢ়ৎড়পবংংবং রং সধরহঃধরহবফ, :যব ঢ়ড়ংঃ ংযধষষ ফববসবফ :ড় নব ংবৎাবফ ড়হ ফঁব :রসব. যার বাংলা অর্থ আপনি সঠিক ঠিকানায় রেজিস্টি ডাক যোগে সঠিক নিয়ম মেনে চিঠি পাঠালেই প্রাপকের ওপর ওই চিঠি যথাসময় জারি হয়েছে বলে গণ্য হবে।

অনেকে আবার প্রশ্ন করে থাকে তালাকের কয়টি নোটিশ পাঠাতে হয়, একটি, দুটি না তিনটি। অনেকে বলে তিন মাসে তিনটি নোটিশ পাঠাতে হয়। প্রকৃতপক্ষে তালাকের একটি নোটিশ একবারই উপরোক্ত নিয়ম মেনে পাঠাতে হয়। যে কোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, আপনি তালাক দিতে চাইলে, তালাকের নোটিশ নিজেই তৈরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাকে তালাক দিচ্ছেন তিনি যদি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাস করেন, তাহলে সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে ওই তালাকের নোটিশ দিতে হবে। আর তিনি যদি পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে।

\হওই একই নোটিশের কপি যাকে তালাক দিচ্ছেন অর্থাৎ তালাক গ্রহীতাকে পাঠাতে হবে। আর মনে রাখবেন, তালাকের নোটিশে দুজন উপযুক্ত সাক্ষীর কলাম রাখবেন এবং তাদের স্বাক্ষর নেবেন।

অনেকেই মনে করেন তালাকের নোটিশ কাজির মাধ্যমে না পাঠালে তা কার্যকর হয় না। এটি ভুল ধারণা। তালাকের নোটিশ স্বামী বা স্ত্রী নিজে লিখিত আকারে পাঠিয়ে দিলেই হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে তালাকের নোটিশ পাঠাতে কাজীর কাছে যেতে হবে- এমন কোনো কথা লেখা নেই। ফলে নোটিশ প্রাপ্তির ৯০ দিন পার হলেই তালাক কার্যকর হয়ে যায়। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।

এরপর আপনি ইচ্ছে করলে তালাক রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে পারেন। তবে আনন্দের সংবাদ এই যে, বিয়ে রেজিস্ট্রি না করলে যেমন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে, এক্ষেত্রে তালাক রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক কিংবা শাস্তির কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কাজেই নিয়ম মেনে তালাকের নোটিশ পাঠানো ও ওই ডকুমেন্টসগুলো সংগ্রহে রাখলেই তালাক কার্যকরে আইনত কোনো বাধা নেই।

আরেকটি বিষয় আপনাদের জানিয়ে রাখি, নোটিশ পাঠালেই কিন্তু তালাক কার্যকর হয়ে যায় না। নোটিশ পাঠানোর পরে ৯০ দিন পার হওয়ার আগেই যদি আপনাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়, তাহলে আপনি একই নিয়ম অনুসরণ করে তালাক প্রত্যাহার করে নিতে পারেন এবং একই স্ত্রীর সঙ্গে হিলস্না বিয়ে বাদেই ঘর সংসার করতে পারেন, এতে আইন ও ধর্মের কোথাও বাধা নেই। আর যদি ৯০ দিন অতিক্রান্ত এমনকি কয়েক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও আপস হয়ে যায়, তাতেও একই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘর সংসারে আইনে বাধা নেই। এক্ষেত্রে শুধু ব্যতিক্রম রয়েছে যে, পুনরায় বিয়ে করে নিতে হবে।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক।

ইমেইল :ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে