রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধী নিজের অজান্তেই রেখে যায় অপরাধের আলামত

সাইফুল ইসলাম পলাশ
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

যৌন নিপীড়নের শিকার শিশু বা তার পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। কারো কাছে কোনো তথ্য নেই, আলামত নেই বা কোনো সাক্ষ্যও নেই। তথ্য আছে ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগল ভাইয়ের কাছে। আর সেই গুগলের দেওয়া তথ্যমতে অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এই ঘটনাটি আমাদের বাংলাদেশেই ঘটেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইনে নিউজটা চোখে পড়ল। নিউজের তথ্যানুসারে আসামি অ নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুরের ১০ বছর বয়সি একাধিক শিশুকে যৌন নিপীড়ন করেছে। আসামি যৌন নিপীড়নের সেই দৃশ্যগুলো নিজের মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে সেগুলো তার মোবাইলের স্টোরেজ ও গুগল ড্রাইভে সংরক্ষণ করে রাখত।

গুগল সেই তথ্য পৌঁছে দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপস্নয়টেড চিল্ড্রেনের কাছে। তারা সেই তথ্য পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স, ঢাকাকে জানিয়ে দেয়। তৎপ্রেক্ষিতে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স সিআইডি পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। সিআইডি সেই অপরাধীকে শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তার করে।

তবে এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে এটাই প্রথম নয়। ইতোপূর্বে ২০২১ সালেও গুগলের দেওয়া তথ্যমতে সিআইডি পুলিশ বরিশাল থেকে ই নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছিলেন।

আরেকটি ঘটনা একজন সিনিয়র বিচারক মহোদয়ের কাছে প্রায় একযুগ আগে শুনেছিলাম। যতটুকু মনে পড়ে, আসামি ঢ এক ব্যক্তি (ত)কে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছিল। ত মৃতু্যর পূর্বে বলেছিল, এই ঘটনার বিচার হবে। হত্যাকারী হাসতে হাসতে বলেছিল, কীভাবে বিচার হবে? এই ঘটনার তো কোনো সাক্ষী নেই!

সে সময় বারবার পানিতে চুবানোর কারণে পানিতে বুদবুদ উঠছিল। আমাদের গ্রামে এগুলোকে ভুরভুরি বলে। সেই বুদবুদ দেখিয়ে হত্যাকারীকে সে বলেছিল, এই বুদবুদ ঘটনার সাক্ষী থাকলো। বিচার হবেই।

হত্যাকারী সেই কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে তাকে পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

ঘটনার কয়েক বছর পর কোনো এক বর্ষায় হত্যাকারী জানালা দিয়ে সেই পুকুর দেখে হাসছিল। তার স্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল- একা একা হাসছ কেন?

- বুদবুদ দেখে হাসছি।

বুদবুদ দেখে হাসার কি আছে?

- আজ থেকে কয়েক বছর আগে আমি ত কে পানিতে চুবিয়ে মেরেছিলাম।

তারপর?

- মরার আগে সে বলেছিল, এই ঘটনার বিচার হবে।

সেই ঘটনা কেউ দেখেনি?

- নাহ! কেউ দেখেনি। কিন্তু ত বলেছিল, ঘটনার সময় পানিতে ওঠা সেই বুদবুদ নাকি ঘটনার সাক্ষ্য দেবে। আজ সেই বুদবুদ দেখে হাসি পেল।

সেদিন কথা বলে স্বামী-স্ত্রী (ঢ, ণ) শুয়ে পড়ল। স্বামী ঘুমিয়ে পড়লেও ণ ঘুমাতে পারে না। ভাবতে থাকে কীভাবে ঢ তার আপন ভাইকে হত্যা করতে পারে?

সারা রাত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে থাকে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। সে ভাবতেই পারে না একজন হত্যাকারীর সঙ্গে সে এতদিন সংসার করেছে। সকালে উঠে সে নিকটস্থ থানায় গিয়ে পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঢ কে গ্রেপ্তার করে। ঢ তার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় এবং স্বীকারোক্তি অনুসারে লাশের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

ফরেনসিক বিজ্ঞানের পথ প্রদর্শক ডক্টর এডমন্ড লকার্ডের বিখ্যাত থিউরিটা আবারও প্রমাণিত হলো। তিনি বলেছেন, 'ঊাবৎু পড়হঃধপঃ ষবধাবং ধ :ৎধপব'. অপরাধী যতই বুদ্ধিমান হোক না কেন অপরাধ করার সময় তার অজ্ঞাতসারেই বিভিন্ন ধরনের আলামত রেখে যায়।

দুটো পৃথক পৃথক ঘটনায় অ, ই ও ঢ কেউই ভাবেনি তারা কখনও বিচারের মুখোমুখি হবে। কারণ তারা অপরাধগুলো অতি গোপনে করেছিল। কিন্তু তারা জানে না যে, পাপ ম্যাচিউরড হলে অর্থাৎ পাপের ঘড়া পূর্ণ হলে তা উপচে পড়বেই। বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।

সাইফুল ইসলাম পলাশ, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, রাজশাহী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে