রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

চোখের পানি দেখেও যেভাবে বিগলিত না হয়ে থাকতে শিখছি

এস এম তাসমিরুল ইসলাম উদয়
  ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

নকল কান্নায় চোখের পানি ঝরতে পারে নাহলে 'মায়া কান্না' শব্দ যুগলের উদ্ভব হতো না। প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীকে তাদের নিজ সন্তান পরকীয়ায় আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় নিজ সন্তানকে হত্যা করে খড়ের গাদায় ঢুকিয়ে রেখে হত্যাকারী মায়ের চরম কান্নার ঘটনায় জেনেছি। সেই কান্নার করুণ সুরে ফেঁসে যায় পাশের বাড়ির কলিমউদ্দিন। খুনের দায় নিয়ে জেল খাটা কলিমউদ্দিনের পক্ষে কাজ করতে যেয়ে জানলাম সে নির্দোষ ছিল! বুঝলাম সেই করুণ সুরের কান্না, মায়া কান্না ছিল। 

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করে সেখানে কাটাকুটি করে গুরুতর জখমের মামলা দায়েরের ঘটনা দেখেছি। স্বাভাবিক মিস ক্যারেজ কে অপরাধমূলক গর্ভপাতের অভিযোগে স্বামী-শাশুড়ি কে ফাঁসানোর মামলায় নিরপরাধ মা ও ছেলেকে খালাস করিয়ে মিথ্যা মামলা দায়েরকারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি। 

নিজের উন্মাদ মেয়ে আত্মহত্যা করেছে কিন্তু সেই মেয়ের স্বামী কেন মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াব? কেন নতুন করে জীবন শুরু করবে? তাই আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় ছেলেকে ফাঁসানো হলো! ছেলের বিরুদ্ধে আনতে হবে যৌতুকের অভিযোগ। মারধরের অভিযোগ। জেরার সময় সাক্ষী বলে গেল মৃত মেয়ের শরীরে প্রচুর মারের চিহ্ন রয়েছে অথচ সুরতহাল এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট একদম পরিষ্কার! কেবল ফাঁসি নেওয়ার অর্ধচন্দ্রাকৃতির দাগ বাদে আর কিছুই নেই। সেদিন অবাক হয়ে দেখেছি এবং নির্বাক চিত্তে ভেবছি এই মহিলা কেন মিথ্যা বলল। এর ব্যাখ্যা সাইকিয়াট্রিস্টরা ভালো দিতে পারবেন।  তবে মানুষ চোখের পানি ছেড়ে দিয়েও গড়গড় করে মিথ্যা বলতে পারে তা দেখেছি। 

যে পুরুষ বিয়ের আগে একজন নারীকে দান-ভিক্ষা দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিল। সেই নারীকে অসহায় ভেবে বিয়ে করে আশ্রয় প্রদান করল, সেই নারীকেই দেখেছি ভিক্ষা প্রদান করা সেই স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের অভিযোগ এনে মামলা করতে। সেই নারী বিয়ের পরে কি এমন কাজ করত যে, রাতারাতি স্বচ্ছল হয়ে গেল সেই রহস্য আমরা জানতে পারিনি। 

এরকম হাজারখানেক কেইস স্টাডি সূত্রসহ উলেস্নখ করা সম্ভব। গত কয় বছরে ছোট-বড় মিলে দুই/আড়াই হাজারের মতো ফৌজদারি মামলায় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছি। মামলার সঙ্গে সঙ্গে মানুষগুলোকেও স্টাডি করার সুযোগ হয়েছে। প্রতিহিংসা, লোভ কিংবা উন্মাদনার কোনো বয়স নেই, লিঙ্গ নেই, নেই ধর্ম! মিথ্যা কারো পোশাকে লিখা থাকে না তাই আদালত হয়ে উঠে প্রথম ও প্রাথমিক আশ্রয়স্থল। প্রতিহিংসাপরায়ণ চরিত্রের কাছে সত্য-মিথ্যা একটি আপেক্ষিক বিষয়। পছন্দের পোষা পাখিকে হাতের মুঠোয় থাকা লাগবে নতুবা পিশে ফেলতে হবে তা যে কোনো উপায়েই হোক। 

চোখের পানি দেখে এখন আর বিগলিত হয়ে যাই না- কিংবা কারো উন্মত্ততা দেখলে উত্তপ্ত হয়ে উঠি না। কারো প্রশংসা আমাকে উচ্ছ্বসিত করতে পারে না কিংবা নিন্দুকের মিথ্যাচার আমাকে স্পর্শ করতে পারে না। আমার সব আগ্রহ কেবল মামলার বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে।

এস এম তাসমিরুল ইসলাম উদয়, তরুণ আইনজীবী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে