প্রধান বিচারপতি পদকের জন্য অধস্তন আদালতের বিচারকদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে জেলা জজশিপে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। ৩০ নভেম্বর মধ্যে আবেদন দাখিল করতে হবে।
আর জেলা কমিটিকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদনসমূহ চূড়ান্ত করে সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ করতে হবে। প্রধান বিচারপতি পদকের আবেদন ফরম সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে গত ১৪ নভেম্বর জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা-২০২২-এর বিধান ৯(গ) অনুসারে জেলা ও মহানগর বাছাই কমিটি গঠন সম্পর্কিত কমিটির সদস্যদের নাম ও পদবিসহ তালিকা সরাসরি অথবা ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর প্রেরণ করতে হবে। এছাড়া কমিটি গঠন সম্পর্কিত তথ্যের সফট কপি নির্ধারিত ই-মেইলে প্রেরণ করতে হবে।
গত বছর বিচার বিভাগের সব স্তরে দক্ষ ও সেরা কর্মকর্তাদের প্রধান বিচারপতি পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট। এ লক্ষ্যে 'প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা-২০২২' প্রণয়ন করা হয় এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ২০২২ সালের ১০ আগস্ট জারি করা বিজ্ঞপ্তিমূলে 'প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা-২০২২' এবং প্রধান বিচারপতি পদকের আবেদন ফরম সংশ্লিষ্ট সবার অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়।
বিচার বিভাগে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের ও বিচার প্রতিষ্ঠানসমূহের বিচারিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকল্পে এবং বিচারিক সেবার উৎকর্ষ অর্জন, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি, শুদ্ধাচার, সক্ষমতা, দক্ষতার উন্নয়ন ও বিকাশে এবং বিদ্যমান মামলা জট নিরসনকল্পে মামলা-মোকদ্দমার নিষ্পত্তিতে অধিকতর গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট প্রতি বছর 'প্রধান বিচারপতি পদক' দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে লক্ষ্যে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা-২০২২ এর অনুমোদন দেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, বিচারিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিচার কাজে সরাসরি নিয়োজিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মোট ৬টি পদক দেওয়া হবে। এর মধ্যে জেলা ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি, অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি, যুগ্ম জেলা জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি, সিনিয়র সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি, সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক ১টি এবং সব জেলার মধ্য থেকে একটি জেলা জজশিপ বা মহানগর দায়রা জজশিপ (দলগত) ১টি পদক দেওয়া হবে।
স্বর্ণপদক ও আর্থিক প্রণোদনা
নীতিমালা অনুযায়ী মনোনীত প্রতিটি পদের জন্য ২১ ক্যারেট মানের ১৬ গ্রাম ওজনের ১টি করে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রাম সংবলিত সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ২ লাখ টাকা এবং দলগত অবদানের জন্য ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হবে।
দলগত অবদানের ক্ষেত্রে একটি জেলা জজশিপ বা মহানগর দায়রা জজশিপে কর্মরত বিচারকরা ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার দলের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। দলের প্রত্যেক সদস্যকে পৃথকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হবে। আর দলগতভাবে ১টি পদক ও একটি ক্রেস্ট এবং নগদ ৫ লাখ টাকা সদস্যদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করা হবে।
গতবছর পাঁচ ক্যাটাগরিতে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা তথা অধস্তন আদালতের পাঁচজন বিচারককে প্রধান বিচারপতি পদক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলগতভাবে একটি পদক প্রদান করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে স্বর্ণপদক নেন পদকপ্রাপ্তরা।
ব্যক্তিগতভাবে পদক পাওয়া পাঁচজন বিচারক হলেন- জেলা ও দায়রা জজ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছা, অতিরিক্ত জেলা জজ ক্যাটাগরিতে টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাউদ হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ক্যাটাগরিতে নওগাঁ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিচারক মো. খোরশেদ আলম, সিনিয়র সহকারী জজ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ মোসা. রেশমা খাতুন এবং সহকারী জজ ক্যাটাগরিতে রংপুরের সহকারী জজ মো. হাসিনুর রহমান মিলন।
এছাড়া, দলগতভাবে পদক পেয়েছে ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ। এ জেলার পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিন পদক নেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, 'প্রধান বিচারপতি পদক' বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নসহ বাছাই কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সমন্বয়ে জাজেস কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি নীতিমালা প্রণয়নসহ বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের ছয় বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত জাজেস কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতি বোরহান উদ্দিনকে। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী, বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর এবং বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।