শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতিতে গাঁথা প্রিয় আষাঢ়

সুমন আহমেদ
  ০১ জুলাই ২০২২, ০০:০০

মনে পড়ে সেই দিনগুলো। মনে পড়ে ফেলে আসা শৈশব আর কৈশোর জীবনের গল্প ও কবিতায় রাতজাগা প্রহর; বৃষ্টিবাদলের প্রিয় আষাঢ়ের স্মৃতি। মনে পড়ে স্কুল ছুটিরপর টানা বর্ষণে বইগুলো শার্টের ভেতর বুকে জড়িয়ে কাদামাখা মেঠোপথে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফেরা। স্কুল মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা। আর আমাদের গ্রামের ঐতিহ্যবাহী দীঘির জলে সুখের উচ্ছ্বাসে ঝাঁপিয়ে পড়া ডুবসাঁতার। দুষ্ট ছেলের দল মিলে গ্রামের সব বাগান থেকে, আম, কাঁঠাল আর লিচু চুরি করে খাওয়া। আষাঢ় এলে নতুন পানিতে বাবার সঙ্গে জালি নিয়ে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কতইনা মজা করে মাছ ধরা। কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে সবাই মিলে নতুন পানিতে ভেসে বেড়ানো। আহা! কোথায় হারিয়ে গেল আমার শৈশবের আষাঢ়ের দিনগুলো। মনে পড়ে কলেজ লাইফে কোনো এক আষাঢ়ের বৃষ্টি ভেজা মেঘবালিকা প্রিয় অবন্তীর কথা। জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়ের মুখে শুনেছিলাম একগুচ্ছ কদম হাতে চিৎকার করে বলেছিল- ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি- কদম, কেয়া, কামিনী, জুঁই, গন্ধরাজ; ভালোবাসি প্রিয় আষাঢ়ের বৃষ্টি। সেদিন অবাধ্য নয়নে তাকিয়ে ছিলাম অপলক মায়াভরা তার চাঁদমুখ পানে। হঠাৎ আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিল এক পশলা বৃষ্টি এসে। এক দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই অচেনা-অজানা নাম না জানা সেই মেঘবালিকার। সেদিনের পর দুজনার মাঝে ধীরে-ধীরে তৈরি হয় সম্পর্কের বন্ধনের এক সেতু। হাতে-হাত রেখে, বর্ষার ভরা যৌবন জোয়ারে ভেসে যেতাম দুজন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া আমাদের বিলে-ঝিলে পাল তোলা নায়ে। দক্ষিণা মৃদু সমীরণে দুলতো কলমিলতা। আর হারিয়ে যেতাম দুজন শাপলা-শালুকের মিছিলে। ভালোবাসা আর ভালো-লাগায় কেটে গেল দীর্ঘ পাঁচ বছর। ধনী বাবা একমাত্র আদরের মেয়ে অবন্তী। আর আমি খেটে খাওয়া অতি দরিদ্র বাবার ছেলে। মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত মা। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না বাবা। সন্তান জন্ম দিতে না পারাই স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত বড় বোন। টানাপড়েনের সংসার আমাদের; নুন আনতে পান্তা ফুরায়। একজীবনে অবন্তীকে চাওয়া মানে- বামন হয়ে দূর আকাশের চাঁদ ধরা। মেয়ে বিয়ে দেওয়াতো দূরের কথা তার বাড়ির ত্রিসীমানায় যেন আমার ছায়া না পড়ে। এক ধনী বাবার রাজপুত্রের সঙ্গে খুব ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল অবন্তীর। চলে গেল অচেনাকে আপন করে নতুন এক গন্তব্যে। অবন্তী চলে যাওয়ার পর নিঃসঙ্গ জীবন থেকে গত হয়ে গেল ৬৫টি আষাঢ়। এখন আমি বৃদ্ধ; নিঃসঙ্গ, বড় ক্লান্ত। কেবল শুধু প্রহর গুনছি ভাগ্যবিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাওয়ার। নাম না জানা, অচেনা কোনো এক গন্তব্যে। যেখান থেকে চাইলেও ফেরা হবে না আর কোনো দিন। আজ কেন জানি আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে এককাপ চা হাতে; ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বারবার শুধু মনে পড়ছে অবন্তীর কথা। আর খুব জানতে ইচ্ছে করছে কেমন আছে আমার অবন্তী। হয়তো স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই আছে। হয়তো পৃথিবীর বৃহত্তম সুখের মাঝে ভুলেই গেছে, কেউ ছিল একদিন প্রতীক্ষার চাতক হয়ে তার জীবনে। হয়তো ভুলেই গেছে আমি নামের শব্দটা। কোথায় হারিয়ে গেল শৈশবের বন্ধু বান্ধব? কোথায় হারিয়ে গেল অবন্তী? শুধু একজীবনে রয়ে গেল স্মৃতিতে গাঁথা প্রিয় আষাঢ়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে