শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় জাতীয় ক্যাম্পাস থিয়েটার উৎসব

অপূর্ব কুমার কুন্ডু
  ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

গত ৯ থেকে ১৩ মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী 'তৃতীয় জাতীয় ক্যাম্পাস থিয়েটার উৎসব-২০২৩'। উৎসবের উদ্বোধন হয় ৯ মার্চ বিকাল ৪টায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী, এমপি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাম্পাস থিয়েটার আন্দোলনের সভাপতি ড. কামাল উদ্দিন শামিম। সভাপতিত্ব করেন সরকারি বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী খান। উদ্বোধনী পর্বে একাডেমির সাংস্কৃতিক দল এবং ক্যাম্পাস থিয়েটারের সাংস্কৃতিক দলের অংশগ্রহণে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশন। তারপরই মঞ্চায়ন হয় নাটক মুজিব মানে মুক্তি, কবর এবং দ্য ম্যান ফ্রম আর্থ।

 উদ্বোধনী আয়োজনে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, 'আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে এক সময় আমাদের সংস্কৃতিকে চেপে ধরা হয়েছিল। এখন আর সে সময় নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্য সবকিছুর মতো সাংস্কৃতিক কর্মমান্ড এগিয়ে চলছে। সাংস্কৃতিক বিপস্নবকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সংস্কৃতিচর্চা ও খেলাধুলার মধ্যে থাকতে হবে। ইতিহাসসমৃদ্ধ সংস্কৃতিচর্চার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সরকার আপনাদের সঙ্গে আছে; যুবকদের সঙ্গে আছে। পৃথিবীর সঙ্গে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। উৎসব উদ্বোধক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, 'তরুণদের মহায়োজনে, শিল্পের সুন্দরকে স্বাগত জানাতে আমি বরাবর যেমন সঙ্গে ছিলাম তেমনি সঙ্গে থাকব আজীবন'। উদ্বোধনী অনুষ্ঠা?নের সভাপ?তি অধ?্যাপক ড. ফের?দৌসী খান ব?লেন, 'তারুণ্যের সব?চে?য়ে বড় উৎস?বে থাক?তে পে?রে নি?জে?কে তরুণ মনে হয়। ৩টি উৎস?বেই আ?মি ছিলাম, স?ত্যি এটি আনন্দের ও গ?র্বের'। ক্যাম্পাস থিয়েটার আন্দোলন, বাংলাদেশের সভাপতি ড. কামাল উদ্দিন সা?মিম ব?লেন, 'থি?য়েটারের এ নবধারার প্রচলন, ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে'।

সাধারণত জানি, জাতীয় এবং প্রান্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন নাট্যদল তাদের প্রযোজিত নাটকগুলো মঞ্চের প্রসেনিয়াম আঙ্গিকে কিংবা পথে পথনাটক হিসেবে নান্দনিকভাবে তুলে ধরে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে নাটক সামগ্রিক মঞ্চায়নের রূপরীতি আয়ত্ব করে, অনুশীলন করে, নান্দনিকভাবে তুলে ধরে ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন পরিমন্ডলে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও শিল্পের আলোয় সৃজনশীল মানবিক করে তোলার প্রত্যয়ে ক্যাম্পাসভিত্তিক সুষ্ঠু সংস্কৃতিও নাট্যচর্চা কেন্দ্রই ক্যাম্পাস থিয়েটার। ১৭টি ক্যাম্পাস থিয়েটার নিয়ে প্রথম জাতীয় ক্যাম্পাস থিয়েটার উৎসব হয় ২০১৮তে। একইভাবে ৩০টি ক্যাম্পাস থিয়েটার নিয়ে দ্বিতীয়বার উৎসব হয় ২০২০-এ। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মোট ৫০টি ক্যাম্পাস থিয়েটারের মঞ্চায়ন এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আলোকে ৯ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত উদযাপিত হয় তৃতীয় জাতীয় ক্যাম্পাস থিয়েটার উৎসব-২০২৩।

 একজন মানুষের মুখ যেমন সেই মানুষটির মনের আয়না- তেমনি উৎসব স্স্নোগান নির্ধারণ সেই উৎসবের ভাবও আদর্শের প্রতিফলিত দৃশ্যমালা। উৎসবের নাটকের বিষয়বস্তুর আলোকে উৎসব স্স্নোগান নির্ধারণ হয়। যেমন প্রথমবারের উৎসব স্স্নোগান ছিল, 'শিক্ষা ও শিল্পের আলোয় ২০৪১-এ পৌঁছে যাব আমরা উন্নতির শিখরে'। দ্বিতীয়বারের উৎসব স্স্নোগান ছিল, 'শিক্ষা ও শিল্পের আলো ছড়াব আমরা তারুণ্যের জয়গানে'। এভাবেই ধারাবাহিকতায় এবারের তৃতীয়বারের উৎসবের স্স্নোগান, 'শিল্পে মননে মুক্তিযুদ্ধ'।

সাংস্কৃতিক সেবীরা তো মানবিক হবে এটাই স্বাভাবিক। সংকটে এবং সম্ভাবনায় ক্যাম্পাস থিয়েটার পরিবার একে অপরের পরিপূরক। তবে করোনার ক্রান্তিকালে ক্যাম্পাস থিয়েটার পরিবার ২০০ জনের অধিক শিক্ষার্থীকে উৎসাহ উপহার দিতে পেরেছে। সিলেটের বন্যা দুর্গতদের মাঝে ৩০০টির অধিক পরিবারকে বস্ত্র, ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছে। পাশাপাশি তাদের ইউনিটে রয়েছে 'বস্নাড আর্কাইভ' যেখান থেকে তারা রক্তের প্রয়োজন হলে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও প্রতি বছর ২০ জন অসমর্থ শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মীদের অর্থসহায়তা প্রদান এবং নাট্যকর্মীদের একাডেমিক অধ্যায়ন কালে সাময়িক আবাসন ও উপার্জনের বন্দোবস্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে ক্যাম্পাস থিয়েটার আন্দোলন।

 এবারের নাটকগুলোতে বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, পাঠ্য সাহিত্য এবং সমকালীন বিশ্ব। উৎসব বাস্তবতা এবং আগামী কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে ক্যাম্পাস থিয়েটার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক এবং উৎসব আহ্বায়ক হাবীব তাড়াশি বলেন, 'যেহেতু এই আন্দোলনের উৎসাহের জায়গাটা হলো পরতে পরতে নাটক করা আবার নাটকে নাটকে পড়া। সেহেতু শিক্ষা, বিনোদন ও সংস্কৃতির বিচ্ছুরণ এসব নিয়েই আমাদের সকালের আয়োজন। এবারে আমরা ৫০টি ক্যাম্পাস থিয়েটারের পরিবেশনায় সফলভাবে সম্পন্ন করেছি তৃতীয় জাতীয় ক্যাম্পাস থিয়েটার উৎসব-২০২৩। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০ কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস থিয়েটার প্রতিষ্ঠায় আমরা নিমগ্ন। আমাদের লক্ষ্য আগামীতে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পাস থিয়েটার উৎসব আয়োজন এবং উদযাপন করা।' যে কারণে উৎসব সমাপনী অনুষ্ঠা?নের প্রধান অতিথি বীরমুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ এমপি বলেন, 'হাবীব তাড়াশীর মতো তরুণ্যরাই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সন্তান। ওরাই সোনার বাংলা গড়ার বর্তমান মু?ক্তিযোদ্ধা'। ক্যাম্পাস থিয়েটার আন্দোলন বাংলাদেশ তারুণ্য ও চেতনার নবতরঙ্গের প্রবাহমান

বলিষ্ঠ স্রোতধারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে