রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যঞ্জনা গুণ :কবিতার শব্দরা অজেয়

আবু আফজাল সালেহ
  ১৬ জুন ২০২৩, ০০:০০

আমরা বলি কবিতা বা গানে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়েছে। অথবা আমরা বলি অমুক কবিতার দ্যোতনা গুণ চমৎকার! আসলে ব্যঞ্জনা বা দ্যোতনা কী তার আলোচনা করব। দ্যোতনা শব্দের অর্থ ইঙ্গিত, ব্যঞ্জনা, প্রকাশ। কবিতায় শব্দ ব্যবহারে কবির গুণ বিচার করা হয় না। এতে কবির কৃতিত্ব নেই। কবির কৃতিত্ব হচ্ছে বা কবিত্ব হচ্ছে শব্দের ব্যবহারে, শব্দের যোজনায়। শব্দগুলো দ্যোতনা বা ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করছে কি না, বা কতটুকু করতে পারছে তার ওপরই কবিত্বগুণ নির্ভর করে থাকে।

আসলে, শব্দের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। কবিতায় শব্দের ব্যবহার ও বাছাই শব্দের ক্ষমতা বা পাঠক টানার সক্ষমতা অর্জন করে। এটাকে কৌশলও বলা যেতে পারে। শব্দ প্রয়োগের কৌশলের নতুনত্ব, সম্মোহনী ক্ষমতা, ওজন ইত্যাদির ওপর কবিতার শৈলী বা শক্তিমত্তা নির্ভর করে। আর কবিতার শক্তির ওপর কবির সমীহ-করার পরিমাণ নির্ভর করে। পাঠক-সমালোচকের কাছে স্থায়িত্ব পেতে শব্দ ব্যবহার/বাছাইয়ে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করতে হবে। শব্দরা যে অজেয় তা কবিতা ভেদে তা বোঝা যায়। শব্দ চিত্র হয়ে গিয়ে রাজার প্রতীক হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কবির কৌশলের ওপর নির্ভর করে। কবিতায় অখন্ডতা বজায় রাখার জন্য যথোপযুক্ত শব্দের ব্যবহার করতে হয়। যথার্থ শব্দ/শব্দশ্রেণি ব্যবহার করে কবিতায় শক্তি প্রদান করা হয়। শব্দরা হচ্ছে কবিতার রসদ। শব্দ/শব্দশ্রেণির বহুমাত্রিক অর্থ প্রদান বা দ্যোতনা সৃষ্টি করা যায় উপযুক্ত ব্যবহারে। অভিজ্ঞতা হোক বা আবেগই হোক তার প্রকাশ করতে উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করতে হবে।

স্মৃতি যা অভিজ্ঞতা থেকে সঞ্চিত তা থেকে আবেগ ঢেলে দেওয়ার একটি নাম কবিতা। এখন আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার ক্ষমতার ওপর কবিতার শৈলী বা সার্থকতা নির্ভর করে। আবেগের বাড়াবাড়ি বা আবেগে কৃপণতা করা যাবে না। এই নিয়ন্ত্রণ করার ওপরই কবিত্বশক্তি নির্ভর করে। আবেগ, স্বগোত্র, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি নেতিবাচক বাহুল্য নিরপেক্ষতা হারায় বলে মনে করি। প্রয়োগের ক্ষেত্রে কবিকে এগুলো সজাগ থাকতে হয়। সজাগ থাকার ক্ষমতা (যে কোনো ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা) কবি ও কবিতাকে মহৎ করে তোলে। কবিতার প্রাণ চিত্রকল্প নির্মাণেও উপযুক্ত শব্দ/শব্দশ্রেণি ব্যবহার করার ক্ষমতা অর্জন করতে হয়। এ-ক্ষমতা অভিজ্ঞতা, জ্ঞ্যান আর অনুশীলনের মাধ্যমে কবিকে অর্জন করতে হয়। প্রয়োগে সক্ষমতার পরিমাণের ওপর কবিতার শৈলী নির্ভর করে থাকে। কবিতায় আধুনিক ব্যক্তির জটিল অনুভূতির প্রতিফলন। অভিজ্ঞতার স্মৃতির স্মারক হচ্ছে কবিতা। শাব্দবিন্যাসে ফুটে ওঠে নানা রকম রেখা, রঙ-গাঢ় হয়ে ফুটে ওঠে কবিতার লাবণ্য। শব্দের শক্তি/জোর কম-বেশি হয় না। প্রয়োগ ও ব্যবহারের ওপর শব্দের শক্তি নির্ভর করে। ধ্বনি, ছন্দ, চিত্র, চিত্রকল্প, প্রতীক ইত্যাদিতে স্বর বা ভাষা উচ্চারিত হয়। এসব নিয়ে একটি অখন্ডতা নির্মাণ হয়। এসবই আসলে কবিতার আত্মা ও ভাষা। কবিতায় শব্দরা অজেয়। শব্দ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কিন্তু ব্যবহারে শক্তির তারতম্য হয়। জুতসই ব্যবহার না-হলে শব্দগুলো নিছকই শব্দ হয়। কবিতাকে অসফল করে দেয়। আবার দক্ষ ব্যবহারে শব্দে ব্যঞ্জনা বা দ্যোতনার সৃষ্টি হয়। কাব্যিক চমৎকারিত্বে শব্দ বহুমাত্রিকতাও পায়, কখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, কবিতাকে শিল্পমানে উন্নীত করে।

'চৈত্র মাসে শুক্ল নিশা/জুঁহি বেলির গন্ধ/জলের ধ্বনি তটের কোলে কোলে' কবিতায় 'জুঁহি' শব্দের জুতসই ব্যবহার হয়েছে। হিন্দি এ শব্দের প্রতিশব্দ জুঁই বা অন্যকিছু বসালে কবিতায় ব্যঞ্জনা কমে যাবে, প্রকাশের অর্থের সীমানা কমে যাবে। জুঁহি শব্দে দোলা দেয়, বিচিত্র আভাস দেয়। 'রূপ লাগি আঁখি ঝুরে/ গুণে মন ভোর।/প্রতি অঙ্গ কান্দে/প্রতি অঙ্গ মোর (জ্ঞ্যানদাস)'-এ পংক্তিতে 'ঝুরে' ও 'কান্দে' একই রকম শব্দ, প্রায় একই রকম অর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু শব্দদুটির প্রতিস্থাপন করলে কবিতার মান ও অর্থ ব্যাঘাত ঘটে যাবে, অর্থ অক্ষুণ্ন থাকবে না। 'আমি সেই সুন্দরীরে দেখে লই-নুয়ে আছে নদীর এপারে।/বিয়োবার দেরি নাই-রূপ ঝরে পড়ে তার (জীবনানন্দ দাশ)' কবিতাংশে ক্রিয়াপদ 'বিয়োবার' বা 'দেখে লই' ব্যঞ্জনার সৃষ্টি হয়েছে, সময়ের নষ্ট হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শব্দ/পদ দুটিকে পরিবর্তন করে অন্য শব্দ বা প্রতিশব্দ বসালে চোখে বা শুনতে অশালীন বলে মনে হবে অথবা কবিতার শক্তি কমে যেতে পারে। 'মাঝে মাঝেই বুকের মধ্যে ঝনকে ওঠে/ এখন এই পড়ন্ত বেলায় (আজ বিকেলে/নীরেন্দ্র চক্রবর্তী)' কবিতাংশে 'ঝনকে' শব্দ বহুমাত্রিকতা পেয়েছে, জুতসই ব্যবহার হয়েছে। ঝনকে শব্দ অন্যরকম দোলা দেয়। আতঙ্ক বা যন্ত্রণার বিষয়টি ওঠে এসেছে ঝনকে শব্দ প্রয়োগে। আবার কেউ কেউ 'ঝনকে' শব্দকে রোগের কথা বলে দিতে পারেন। অন্য কোনো শব্দ বসালে কবিতার শক্তি কমে যেত, ব্যঞ্জনা সৃষ্টি নাও হতে পারত।

ব্যঞ্জনাকে আমরা কবিতায় অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কবিতার রূপ ও সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য ব্যঞ্জনার অর্থ তাৎপর্যপূর্ণ হয়। ব্যঞ্জনার নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। বৈচিত্র্য কবিতার রূপই বদলে দেয়। সৌন্দর্যের বহুমাত্রিকতা দেয়, চৈতন্যকে প্রসারিত করে। কবিতায় রহস্যময়তা সৃষ্টি করতে পারে। দক্ষ ও যথার্থ শব্দ ব্যবহার বক্তব্যের গভীরতা বোধকে জাগ্রত করে। পদ্য, গদ্য ও কবিতাকে পার্থক্য করে দেয় ব্যঞ্জনা বা দ্যোতনা গুণ। ফলে কবির শব্দ-ব্যবহারে কবিত্ব নির্ভর করে। শব্দ শালীন বা অশালীন নয়। শব্দের নিজে ভালো বা মন্দ হতে পারে না। ব্যবহারের ওপর শব্দের চরিত্র প্রকাশ পায়। কখনো পুরনো শব্দ নতুন শব্দের মধ্যে বসে বহুমাত্রিকতা বা ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাই, পুরনো শব্দ, নতুন শব্দ বা শব্দগুচ্ছের সমাবেশের মাধ্যমে গড়ে ওঠে কবিতা, কবিতার শৈল্পিকতাকে অটুট বা উন্নীত করে। আধুনিক জীবনের জটিলতা ও সংশয়ে আঘাত আনতে গিয়েই আধুনিক কবিতার প্রকাশভঙ্গির বা ভাষারীতির পরিবর্তন হয়েছে। কবি তার সময়ের মুখপাত্র। সব ধরনের অসঙ্গতিতে সাড়া দেন কবি। তিনিই সবচেয়ে সমাজের সজাগ ও সচেতন ব্যক্তি। রাজকবি বাদে প্রায় সব কবিই আদিকাল থেকেই যুগ-যুগ ধরে এ নীতি অক্ষুণ্ন রেখেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'শব্দ' কবিতার অংশবিশেষ, 'দ্রিদিম জ্যোৎস্না/অমনি আমার বুকের মধ্যে ভয়ের ঘণ্টা, দ্রিদিম জ্যোৎস্না /লিখে ভয় হয়/দ্রিদিম না স্মৃতি? জ্যোৎস্না না জল? অথবা সাগর?/ দ্রিদিম সাগর? ঠিক ঠিক ঠিক...'। বিষম-সমন্বয়ে 'দ্রিদিম জ্যোৎস্না' রহস্য সৃষ্টি করেছে। অন্য রকম দোলা দেয়। দুটি শব্দের সমন্বয়ে নতুন এই শব্দজোট ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।

'প্রতীকী' কবিতায় ব্যঞ্জনা বা দ্যোতনা সৃষ্টি সাধারণ একটা বিষয়। প্রতীকী কবিতায় সাধারণ শব্দ ব্যবহার করা হলেও সামগ্রিকভাবে চিত্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত কবিতায় রূপান্তর হয়। বহুমাত্রিকতা চরিত্র পেয়ে অনেক 'প্রতীকী' কবিতায় ব্যঞ্জনা বা দ্যোতনা সৃষ্টি হয়। কবি অর্থকে গৌণ করে শব্দের কাছে যান না। বরং কবি সীমানাকে ছাড়িয়ে শব্দকে অর্থ প্রদান করেন। এক্ষেত্রে যে কবি যত সফল বা শব্দকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তিনি ততটাই কবিতায় শব্দকে ব্যঞ্জনা দিতে পারবেন, শব্দের অর্থে বহুমাত্রিকতা আনতে পারবেন। আর এ সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে কবির কবিত্বশক্তি, কবির কণ্ঠস্বর, নতুন নতুন ভাষাশৈলী। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় 'আসাদের শার্ট'। কবিতায় কী আসাদের শার্টই থাকল। না কি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের ও ইতিহাস মনে করিয়ে দিচ্ছে। কেবলমাত্র মূলভাবনায় গ্রোথিত শিল্পরূপটির স্বল্প পরিচয় এখানে দেওয়া চলে। অন্তর্ভাবিত সেই রূপটি অতি সুক্ষ্ণ অনিন্দিত মূর্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে; এলিয়টের কাব্যের গড়ন অপূর্ব ভাষায় সমন্বিত সেই কথাই, বলতে চায়। ঐবৎড়রপ উরংপরঢ়ষরহব-এর শিল্পদক্ষতায় কবি এলিয়ট সময়ের ভাবনাকে কাব্যে চিরকালীন রূপ দিতে পেরেছেন তার তুলনা পশ্চিম দেশের কোনো কাব্যেই পাওয়া যাবে না। কবি বুদ্ধদেব বসু শুধু বড় কবিই নন, তিনি বড় শিল্পী-ও, বড় ভাষাশিল্পী, বড় ছন্দঃশিল্পী। শব্দচয়নের শিল্পিক সুষমা প্রথমেই আমাদের চোখে পড়ে। শুধু তাই নয়, আটপ্রৌড়ে শব্দগুলো সাজানোর গুণে অপরূপ হয়ে উঠেছে। জীবনানন্দ দাশের নিম্নলিখিত তিনটি কবিতায় মেয়েমানুষ, মহিলা ও নারী তিনটি অনুষঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে নারীরূপের অন্য প্রতিশব্দ বা অন্যরূপ ব্যবহার/প্রয়োগ করলে শব্দের শক্তি কমে যেত বলে মনে করি :

(১) ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে (জীবনানন্দ দাশ)

(২) কোথাকার মহিলা সে? কবেকার? ভারতীয় নর্ডিক গ্রীক মুস্লিম মার্কিন?

(৩) নারী তুমি সকালের জল উজ্জ্বলতা ছাড়া পৃথিবীর কোনো নদীকেই/বিকেলে অপর ঢেউয়ে খরশান হতে।

শব্দকে শক্তি দিতে হবে। এক্ষেত্রে শব্দ-বাছাই ও প্রয়োগ হতে পারে প্রধান সূত্র। ব্যবহারে শব্দের শক্তিকে প্রসারিত না-করতে পারলে কবিতা ভালো হবে না। শব্দ ও বাক্যের দ্যোতনা বা ব্যঞ্জনার ওপর নির্ভর করে কবিতার শক্তি। খন্ড খন্ড শক্তি নিয়ে কবিতার কাঠামোয় শক্তির সামগ্রিকতা দিতে পারলে কবিতা সার্থক ও সফল হবে। শব্দ সংযোগে চিত্র গড়ে ওঠে যেখানে কবির আবেগ, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির সার্থক মিল ঘটে। যিনি যত পারেন তিনি তত চিত্র নির্মাণ করতে পারবেন। চিত্র না-হয়ে যদি চেতনালোকের সামগ্রী হয়ে ওঠে তখনই তা সার্থক চিত্রকল্প বলে। শব্দচিত্র আমাদের মনের কল্পনাকে জাগিয়ে তোলে এবং যার ফলে বিদ্যমান থাকে বা ৎবভষবপঃরড়হ ধহ বীঃবৎহধষ ৎবধষরঃু্তসৃষ্টি হয় যথার্থ ইমেজ বা চিত্র। কবিতাকে আসলে অনুবাদ করা যায় না। এ নিয়ে বিভিন্ন তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। এজন্য ভাবানুবাদ জনপ্রিয়। কবিতায় শব্দ রূপকের মতো কাজ করে। আভিধানিক অর্থ ব্যতীত কবিতার ছত্রে অন্য অর্থ প্রকাশ করে। অনেক সময় বহুমাত্রিক অর্থ প্রকাশ করে। কবিতার বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ যদি অর্থপূর্ণ করে তোলে বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে তাকে ব্যঞ্জনা বলে। বর্তমান অর্থকে ছাড়িয়ে অন্য অর্থ। শব্দ ও বাক্যের অন্য অর্থ হওয়ার এ বিশিষ্ট গুণকে আমরা দ্যোতনা বলতে পারি। কবির আবেগ বা শব্দ-প্রয়োগ অনুবাদকের আবেগ বা পরিবেশ একই রকম হবে না। ফলে কবিতা অনুবাদ করে নতুন এক কবিতা সৃষ্টি হতে পারে মাত্র। গদ্যে অনুবাদ কিছুটা হলেও কবিতায় জুতসই অনুবাদ সম্ভব নয়। দেশ ও কালের ব্যবধান কবিতার ক্ষেত্রে প্রধান ভাষা। অনুবাদিত কবিতার ভাষা বা জাতির সংস্কৃতি, পরিবেশ অন্য ভাষায় রূপান্তর করলে মান ঠিক থাকে না। এমনকি একই ভাষায় প্রতিশব্দের ব্যবহারে শব্দের ওজন বা গুরুত্ব নির্ভর করে। কবিতায় কোনো শব্দের প্রতিশব্দ বসিয়ে দিলে সেই কবিতার শক্তি বেড়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে। শব্দের নিজস্ব কোনো ওজন নেই। শিল্পীর যথাযথ প্রয়োগ বা ব্যবহারের ওপর শব্দের ওজন নির্ভর করে। অনেক সময় অন্ত্যমিল বা মাত্রা ঠিক রাখতে গিয়ে কোনো শব্দের বিকল্প/প্রতিশব্দ বসাতে হয়। এতে কবিতার ভাব, ভাষা বা গভীরতা কমে যায়। ফলে প্রথম থেকে চলে আসা অন্ত্যমিলের কবিতা কিংবা মাত্রাশাসিত কবিতা কিংবা পয়ার ছন্দে কবিতা লিখতে গিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। ফলে চাহিদার ভিত্তিতে মুক্তক ছন্দ বা গদ্যকবিতা আধুনিক কালের আরাধ্য। গদ্য বা মুক্তক ছন্দের কবিতায় বক্তব্যকে ইচ্ছেমতো ওজন দেওয়া যায়। চিত্রকল্প নির্মাণ বা অলংকার প্রয়োগে অনেক গভীরে নিয়ে যাওয়া যায় কিংবা বৈচিত্র্য আনা সহজতর হয়। কিছু নিয়ম মেনে মুক্তক ছন্দ বা গদ্য কবিতা লেখা যায়।

পরিচিত শব্দকে অন্তর, মস্তিষ্ক বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করে বিশিষ্টতা অর্জন করে তা-ই ব্যঞ্জনা বা দ্যোতনা গুণের কারণে। ব্যঞ্জনা কবিতার বিশেষ এক গুণ। এ গুণের কারণে কবিতার উৎকর্ষতা বা কম-মান নির্ভর করে। কবিতার শব্দ বা বাক্যে ব্যঞ্জনা-গুণ না-থাকলে তা শুধু কাহিনি বা একটি কাঠামোই থেকে যায়, কবিতা হয়ে ওঠে না। রস হচ্ছে কবিতার প্রাণ। এখানেও সৌন্দর্য ভোগ করার শক্তি দেয় এ গুণটি। শব্দের আভিধানিক বা প্রতিষ্ঠিত অর্থকে বহুমাত্রিকতা দান করে, নিজস্ব গুণ থেকে অন্য মাত্রা দান করে ব্যঞ্জনা বা দ্যোতনা। শব্দকে নতুন অর্থে সৃষ্টি করাই হচ্ছে কবির গুণ। যিনি যত দক্ষ হবেন শব্দের অর্থে বহুমাত্রিকতা প্রদান করতে পারবেন তিনি ও সে-কবিতা ততই হৃদয়গ্রাহী, সার্থক বা শক্তিশালী হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে