শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মীর মশাররফ হোসেন :তার সাহিত্যকৃতি

আহমদ মতিউর রহমান
  ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মীর মশাররফ হোসেন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ- উভয় বাংলা সেই সঙ্গে ত্রিপুরা আসামের বাঙালি মুসলিম পাঠকদের মধ্যে তার রয়েছে একটি বিশেষ সম্মানের স্থান। কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত বিষাদ সিন্ধু তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম। অন্য কিছু না লিখে তিনি যদি এই একটি মাত্র গ্রন্থই লিখতেন তবুও তিনি সমভাবে বরিত হতেন। আমাদের সৌভাগ্য তিনি আরো অনেক সাহিত্য রচনা করে পাঠকের মন জয় করতে পেরেছেন। মুসলিম লেখক হিসেবে তিনি সেই সময়কার হিন্দু লেখক ও কথাকারদের পাশাপাশি নিজ মুসলিম জাতির কণ্ঠস্বর হয়ে পূর্ব বাংলার নিরন্ন মানুষের একজন প্রতিনিধি হয়ে সাহিত্য জগতে স্থান করে নেয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছেন যা কালিক বিচারে তার মূল্য অপরিসীম। মীর মশাররফ হোসেনের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হচ্ছে 'বিষাদ সিন্ধু'। বাংলার মুসলমান সমাজে শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও পঠিত হয় এই বই। কারবালার করুণ ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। মীর মশাররফ হোসেনের অপর গ্রন্থগুলো বাদ দিলেও মাত্র এই একখানি গ্রন্থ রচনার জন্য তাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক আখ্যায়িত করা যায়। তিনিই প্রথম মুসলমানদের জন্য সার্থক সাহিত্য রচনা করেছিলেন এ কথা অস্বীকার করা যায় না। বাংলা সাহিত্যে মুসলিম কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেনের নাম অম্স্নান হয়ে আছে।

২.

তার পুরো নাম সৈয়দ মীর মশাররফ হোসেন। গাজী মিয়াঁ তার ছদ্ম নাম। তার জন্ম ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর। তার পিতার নাম নবাব সৈয়দ মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাতার নাম দৌলতুন্নেছা। মীর মোয়াজ্জেম তৎকালীন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনী পাড়ার জমিদার ছিলেন। মীর মশাররফ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকন্দি উপজেলার পদমদি গ্রামে। তার লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে বর্তমান রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদী গ্রামে ও শেষে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করেছেন তিনি। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। মীর মশাররফ হোসেন তার বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। মীর মশাররফ হোসেনের স্কুল জীবন কেটেছে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে পদমদী এবং শেষে কৃষ্ণনগর শহরে। জগমোহন নন্দীর পাঠশালা, কুমারখালীর ইংলিশ স্কুল, পদমদী নবাব স্কুল ও কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার কথা লেখকের আত্মজীবনীতে লেখা আছে।

৩.

মীর মশাররফ হোসেনের প্রথম গদ্য গ্রন্থ রত্নবতী। এটি একটি উপন্যাস। ১৮৬৯ সালে এটি প্রকাশিত হয়। এর ভূমিকায় তিনি লেখেন- 'কৌতুকাবহ গল্প অবলম্বন করিয়া ইহার রচনা কার্য সম্পন্ন করা হইয়াছে- ভাষা সঙ্গতি ও গল্পের বন্ধন যতদূর পারিয়াছি, সামঞ্জস্য রাখিতে ত্রম্নটি করি নাই।' এসব কথা বলার কারণ সে সময়ে অনুবাদের প্রচলন ছিল বেশি। মীর মশাররফ সে দিকে না গিয়ে মৌলিক রচনা উপহার দিয়েছেন। এটি ৬১ পৃষ্ঠার একটি রূপকথা ধরনের কাহিনী। এখানে একটি নীতি শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা আছে।

বিষাদ সিন্ধু তিন পর্বে রচিত একটি বিশাল গ্রন্থ। পর্বগুলো হচ্ছে- মহরম পর্ব, উদ্ধার পর্ব ও এজিদ-বধ পর্ব। ডক্টর মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল তার লেখা মীর মশাররফ হোসেন বইতে বলেছেন- 'এর বিষয় গাম্ভীর্য, বর্ণনা নৈপুণ্য, কাহিনীর নাটকীয়তা সবকিছু মিলিয়ে এটি বাংলা সাহিত্যের একটি উলেস্নখযোগ্য গ্রন্থ।' বছরের পর বছর ধরে বইটির পুনমুদ্রণ তার সেই কথারই সাক্ষ্য দেয়। বইটির তিনটি পর্ব আলাদা আলাদাভাবে বই আকারে যথাক্রমে ১৮৮৫, ১৮৮৭ ও ১৮৯১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে এটি এক খন্ডে প্রকাশিত হয় এবং বইটির নবতর সংস্করণগুলোতেই সেই ধারাটি অব্যাহত রয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। ইতিহাসের কথা যেমন আছে কিছু অতিপ্রাকৃত বিবরণও আছে- যা ইতিহাসনিষ্ঠ নয় বলে সমালোচকরা মত দিয়েছেন। এর প্রধান চরিত্রগুলো সবই ঐতিহাসিক। বইতে কিছু উপকাহিনী আছে যেগুলো ঐতিহাসিক বা ইতিহাস নির্ভর নয় বলে তারা মত দিয়েছেন। কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেনের মৃতু্যর পর আরব দেশগুলোতে নানা কিংবদন্তি ছড়িয়ে পড়ে। মীর মশাররফ সে সব কাহিনীর থেকে কিছু কিছু নিয়েছেন বলে উলেস্নখ করেছেন। কারবালার কাহিনী নিয়ে বাংলা সাহিত্যে এটিই প্রথম রচনা। কোনো কোনো সমালোচক এটিকে মহাকাব্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিষাদ সিন্ধু বিষয়ে উইকিপিডিয়া বলছে : "বিষাদ সিন্ধু হলো মীর মশাররফ হোসেন রচিত একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ও প্রাচীনতম উপন্যাসগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। হিজরি ৬১ সালে সংঘটিত কারবালার যুদ্ধ ও এর পূর্বাপর ঘটনাবলি এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয়। এটি যথাক্রমে ১৮৮৫, ১৮৮৭ ও ১৮৯১ সালে তিন ভাগে প্রকাশিত হয়; পরবর্তী সময়ে সেগুলো একখন্ডে মুদ্রিত হয় ১৮৯১ সালে।' এ নিয়ে বাংলাপিডিয়ার বিবরণ একটু দীর্ঘ, তবে মূল কথা আমরা যা আলোচনা করেছি তার মতোই।

এখন পর্যন্ত মীর মশাররফ হোসেনের মোট ৩৬টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম উপন্যাসিক তিনি। তার বইয়ের মধ্যে আছে গোরাই-ব্রিজ অথবা গৌরী সেতু কবিতা (জানুয়ারি, ১৮৭৩-এ রচিত), বসন্তকুমারী নাটক, ( ১৮৭৩, এটি বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাহিত্যিক রচিত প্রথম নাটক। নাটকটি তিনি নওয়াব আবদুল লতিফকে উৎসর্গ করেন।), জমিদার দর্পণ নাটক (১৮৭৩), এর উপায় কি?- প্রহসন (১৮৭৫), বিষাদ সিন্ধু মহরম পর্ব (উপন্যাস, ১৮৮৫), বিষাদ সিন্ধু উদ্ধার পর্ব (১৮৮৭), বিষাদ সিন্ধু এজিদ-বধ পর্ব (১৮৯১), সঙ্গীত লহরী, ১ম খন্ড (গান, ১৮৮৭), গো-জীবন (প্রবন্ধ, ১৯৮৯), এই গ্রন্থ রচনার দায়ে তাকে মামলায় জড়িয়ে পড়তে হয়। বেহুলা গীতাভিনয় (১৮৯৫, নাটক, গদ্যে পদ্যে রচিত), উদাসীন পথিকের মনের কথা (১৮৯০, আত্মজৈবনিক উপন্যাস, নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী এতে সুন্দরভাবে রূপায়িত হয়েছে), গাজী মিয়াঁর বস্তানী-( নক্সা ১৮৮৯), তহমিনা- (উপন্যাস, ১৮৯৭), মৌলুদ শরীফ (১৯০৩), মুসলমানের বাংলা শিক্ষা, ১ম ভাগ (১৯০৩), বিবি খোদেজার বিবাহ-কাব্য (১৯০৫) হযরত ওমরের ধর্ম্মজীবন লাভ-কাব্য (১৯০৫) হযরত বেলালের জীবনী কাব্য (১৯০৫), হয়রত আমীর হামজার ধর্মজীবন লাভ কাব্য (১৯০৫), মদিনার গৌরব কাব্য, (১৯০৬), মোসলেম বীরত্ব কাব্য (১৯০৭), ইসলামের জয় (গদ্য রচনা, ১৯০৮), মুসলমানের বাংলা শিক্ষা, ২য় ভাগ স্কুল পাঠ্য (১৯০৮), বাজিমাৎ-নক্সা (১৯০৮), আমার জীবনী, ১ম খন্ড-আত্মজীবনী (১৯১০), আমার জীবনীর জীবনী কুলসুম-জীবনী (১৯১০)। বিবি কুলসুমের সঙ্গেও তার বিয়ে হয়। এই বইতে তার স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে মাত্র আঠারো বছর বয়সে তার পিতার বন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সঙ্গে মীর মশাররফের বিয়ে হয়।

৪.

মীর মশাররফ হোসেনের প্রধান কৃতিত্ব এই যে, তিনি দোভাষী পুঁথির মিশ্র ভাষারীতি থেকে বেরিয়ে এসে এক ধরনের বিশেষ শালীন সাধুগদ্যের চর্চা শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন যেমন কবিতায় রামায়ণের কাহিনী নিয়ে এক অপরূপ ট্র্যাজেডি 'মেঘনাদ বধ' রচনার মধ্য দিয়ে পুরাণের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছিলেন- তেমনি মীর মশাররফ গদ্যে কারবালার ঐতিহাসিক বিয়োগান্ত ঘটনা নিয়ে 'বিষাদ সিন্ধু' ট্র্যাজেডি রচনার মাধ্যমে ইতিহাসের নবজন্ম দান করলেন।

পাশ্চাত্য ভাবধারাপুষ্ট সমসাময়িক সাহিত্যিকরা যে সময়ে রস-সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে চলেছেন, সে সময়ে মীর মশাররফ হোসেন ছাড়া আর কোনো মুসলিম গদ্য লেখককে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি, পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে তার রচনার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলিম ঐতিহ্য-ইতিহাস এবং পুঁথি সাহিত্যকে প্রাধান্য দান করলেও তার সৃষ্ট সাহিত্যে প্রচারধর্মিতার কোনো ছাপ নেই। ইসলামী ভাবধারার উজ্জীবন অপেক্ষা সমাজের দোষত্রম্নটি উদ্ঘাটন এবং জীবন চিত্র তুলে ধরাতেই তার মগ্নতা ছিল বেশি। এ কারণে তার সাহিত্য মুসলমান-হিন্দু সবার কাছে ছিল জনপ্রিয়। তার মতো একজন হৃদয়বান এবং মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন সাহিত্যিকের আবির্ভাব নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর।

তিনি প্রথম জীবনে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের 'গ্রামবার্তা প্রকাশিত' (১৮৬৩) ও কবি ঈশ্বরগুপ্তের 'সংবাদ প্রভাকর' (১৮৩১) পত্রিকায় সংবাদ প্রেরণ করতেন। এই সুবাদে কাঙাল হরিনাথের সঙ্গে তার হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল যা আমৃতু্য বহাল থাকে। মীর মশাররফ হোসেন বিয়ের পর লাহিনীপাড়া থেকে প্রথম স্ত্রীর নামে 'আজিজন নেহার' নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন ১৮৭৪ সালে। সামান্য কয়েক মাস পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৯০ সালে তিনি পুনরায় লাহিনীপাড়া থেকে 'হিতকরী' নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এ পত্রিকার কোথাও সম্পাদকের নাম ছিল না। 'হিতকরীর' কয়েকটি সংখ্যা টাঙ্গাইল থেকেও প্রকাশিত হয়েছিল। এ পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন কুষ্টিয়ার বিখ্যাত উকিল রাইচরণ দাস। মীর একটি (রবে না সুদিন কুদিন কয়দিন গেলে) বাউল গান লিখে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের 'ফিকিরচাঁদ ফকিরের' বাউল দলের সদস্য হন। 'মশা বাউল' ভণিতায় তিনি কয়েকটি উৎকৃষ্ট বাউল সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। সঙ্গীত সম্বন্ধে তার বেশ ভালো জ্ঞান ছিল। তার 'সঙ্গীত লহরীতে' বিভিন্ন তালের অনেক উৎকৃষ্ট সঙ্গীত আছে।

মোশাররফের সাহিত্য ও গদ্যরীতি নিয়ে কোনো কোনো গবেষক গবেষণা করেছেন। তবে খুব বেশি কাজ হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। সমালোচকরা, গবেষকরা বলতে চেয়েছেন, মীর মশাররফের গদ্যরীতি ছিল বিশুদ্ধ বাংলা। এই বাংলা মুসলিম লেখক হিসেবে তিনিই চর্চা শুরু করেন। তাই তাকে মুসলিম কথা সাহিত্যের পথিকৃতের আসন দেয়া হয়। ডক্টর মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল মীর মশাররফের গদ্যরীতি নিয়ে বলেন : 'তার রত্নবতী সাধু ভাষায় লিখিত। বস্তুত সে যুগে সাধু ভাষায় লিখার রীতিই প্রচলিত ছিল। চলিত ভাষা বা 'আলালী ভাষা' তখনো সর্বগ্রাহ্য হয়নি। এর একটি বিশেষ গুণ লক্ষণীয় যে, এ পুস্তকে (রত্নাবতী) সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ দোষ ঘটেনি।' - [ মীর মশাররফ হোসেন : ডক্টর মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল, বাংলা একাডেমি, ২য় সংস্করণ আগস্ট, ১৯৭৮] পৃষ্ঠা -২৪

পদ্য রচনায় মীর মশাররফ গদ্যের মতো মুনশিয়ানা দেখাতে পারেননি। ফলে সেগুলো তুলনামূলক কম সমাদৃত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে- 'তবে তার পদ্যনীতি প্রায় সবই অনুকৃতি ও কষ্টকল্প রচনা বলে কোনো সমাদর পায়নি।' [ওই, পৃষ্ঠা ২৪]

নাট্য সাহিত্যে মীর মশাররফের কাজ পদ্যের চেয়ে উন্নত মানের। জমিদার দর্পণ তার লেখা উলেস্নখযোগ্য নাটক। বলা হয়ে থাকে

\হতিনি 'জমিদার দর্পণ' নাটক লিখে তদানীন্তনকালে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের মর্যাদা লাভ করেন। তার আরও কিছু নাটক ও নকশা রয়েছে।

মীর মশাররফ হোসেনের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ 'বিষাদ সিন্ধু' বাংলার মুসলমান সমাজে শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও পঠিত হয়। কারবালার করুণ ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাসখানি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। মীর মশাররফ হোসেনের অপর গ্রন্থগুলো বাদ দিলেও মাত্র এই একখানি গ্রন্থ রচনার জন্য তাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক আখ্যায়িত করা যায়। তার সাহিত্যের প্রায় অর্ধেকই কাব্য হলেও তিনি কবিখ্যাতি লাভ করতে পারেননি। তবু তিনিই প্রথম মুসলমানদের জন্য সার্থক সাহিত্য রচনা করেছিলেন এ কথা অস্বীকার করা যায় না।

৫.

এটা স্মরণে রাখতে হবে যে মীর মশাররফ যখন বই লিখেছেন, সাহিত্য কর্ম করেছেন সেই সময়টা বাঙালি মুসলমানের জন্য একটু কঠিনই ছিল। কবি নজরুলের জন্মের অর্ধশত বছর পূর্বে মীর মশারফের জন্ম। চারদিকে যত সাহিত্যিক সবাই হিন্দু। সেই কঠিন পরিবেশে পায়োনিয়ারের মতো করে তাকে অগ্রসর হতে হয়েছে। তার অসামান্য লেখক প্রতিভা ও অদম্য মন তাকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়ে থাকবে। তিনি সমসাময়িক ঘটনাবলি ছুঁয়ে গেছেন, পাঠক কি চায় সে দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন। ফলে তার রচিত অনেক বই পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার মধ্যে বিষাদ সিন্ধু ঘরে ঘরে পঠিত একটি বই। এর গদ্যভঙ্গি পাঠককে আপস্নুত করে, শোক সাগরেও ভাসায়। তিনি কারবালার ঘটনাকে নিজস্ব ভাষাভঙ্গিতে এমনভাবে উপস্থাপনা করেছেন পাঠক তার সঙ্গে একাত্ম না হয়ে পারে না। ১৯ ডিসেম্বর, ১৯১১ সালে দেলদুয়ার জমিদার এস্টেটে নায়েব বা ম্যানেজার থাকাকালে মীর মশাররফ হোসেন ইন্তেকাল করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়। এখানেই 'মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কমপেস্নক্স' অবস্থিত। তার সমাধিস্থল ও স্মৃতি কমপেস্নক্স পরিদর্শন করতে প্রতি দিনই বহু মানুষের সমাগম ঘটে। কুষ্টিয়ায় কবি রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ির সন্নিকটেই এর অবস্থান। এই গুণী সাহিত্যিকের নামে বাংলাদেশের সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৮ সালে একটি আবাসিক হল নির্মাণ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে