শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্রূণফুল হত্যাকারী

জেবুন্নেছা জোৎস্না
  ০১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

জো, পতিত পাতার মর্মরে তুমি উদাস আনমনে

হোয়াইট হাউসের দম্ভ তোমার বিন্যস্ত শুভ্র কেশে!

যদি তুমি প্যালেস্টাইনে যাও, পিস্নজ হাঁটবে সাবধানে!

মৃত ভ্রূণফুল, শিশুফুল, পূর্ণ চাঁদ- যৌবন আগুন

যত্রতত্র ছড়িয়ে সেখানে! ওদের বয়স থমকে গেছে

রক্ত-মাংস, অস্থির মূলেতে- ওরা গ্রোথিত মাটিতে!

জো, পবিত্র আত্মার অস্তিত্ব কোথাও আর কি নেই ?

তোমার ঠোঁটের কোণে দ্যাখো তো লেপ্টে আছে কি রক্ত?

ধারালো দাঁতের ফাঁকে আছে কি স্ব-প্রজাতির মাংস?

কোথা থেকে শুরু করব ভাবছি আমি তাই!

কলম দেখলে যে ভয় পাই! ক্ষেপণাস্ত্র হয়ে যদি

হাত ফস্কে কলম শিশুর বুক ফেঁড়ে যায়!

জো, এ শুধু যুদ্ধ নয়, অন্যকিছু! ওরা ভূমিদস্যূ!

পবিত্র জর্ডান নদী হতে ভূমধ্যসাগর হিব্রম্নদের.... তবু

স্যান্ডউইচ স্ট্রাইপ গাজা, ওয়েস্ট ব্যাংক দখল ওদের স্বপ্নে।

কিবুটজদের মিউজিক ফেস্টিভ্যালে হামাসের হত্যাযজ্ঞে

সে রাতে মুহূর্তে স্বর্গীয় সময় নরকে পর্যবসিত হলো-

পৃথিবীর খোলা কারাগার প্যালেস্টাইনে বদলা নিতে-

ইস্রাইলের রকেট-মিসাইল, ক্ষেপণাস্ত্র মুহুর্মুহু ঝরে!

বাস্তুভিটা ফেলে ফিলিস্তিনিরা জন্মাবধি ছোটে তাই

'আল-নাকবা'য়'; উত্তর হতে দক্ষিণে, অতঃপর

প্রাণ নিয়ে মধ্যভাগে- ইস্রাইলের শকুনী থাবাতে!

ইসরাইল আঘাত হানে প্যালেস্টাইনের প্রতি ইঞ্চি ভূমিতে!

কম্পিত শহরে শিশুরা ভয়ার্ত জান কবজের অপেক্ষাতে!

\হওরা স্থায়ী মার্কারে শরীরে নাম লিখে রাখে-

\হবোমায় বিধস্ত দেহ শনাক্তকরণে চেনা যায় যাতে!

মাগাজি রিফুজী ক্যাম্পে যখন উদ্বাস্তু মানুষ

রুটি আর একটু নোনতা জলে জীবনের খোঁজে,

পঞ্চাশ হাজার লোক মাত্র চারখানা টয়লেটে

দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকে জৈবিক বর্জ্য ত্যাগে-

মুহুর্মুহু মিসাইলের ফায়ার ওয়ার্ক সেখানেও চলে!

জো, আল-ফাখৌরা স্কুল কি হামাসের আস্তানা?

সেখানে ইস্রাইলি আজরাইলের বুলেট থাবায়

শিশুর বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খেলার মাঠে,

শ্রেণিকক্ষে ছটফটিয়ে লাফায় ! স্বজনরা বিকৃত লাশের পাশে

\হঅসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হামাগুঁড়িতে অসহায় কাতরায়!

জো, গাজায় মেঘ মৃতু্য কালো, মানুষের আয়ু ধোঁয়া!

তেলআল-হাওয়ায়, শৌক আইলা ঘুমাতে পারে না!

বিস্ফোরণ কেয়ামতে, মুহূর্তে স্বামীর হাত যায় ছুটে!

হঠাৎ পায়ের কাছে নরম শরীর ঠেকলে,

দুই হাতে সরায়ে চোখের ধুলো, পৃথিবী বিস্ময়ে তার ভাঙে-

তরুণ ফিল্ম মেকার, রোশদি সররাজ মেঝেয় আছে পড়ে....

মাথার গভীর ক্ষত হতে চকচক ঘিলু তার চেয়ে আছে!

শয়তানের ভ্রূণে জন্মানো দজ্জাল লোকালয়ে বোমা ফেলে-

পঁচাত্তরটি বছর ফিলিস্তানিরা ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, বুলেটে মরে!

লিখেছেন শহীদ কবি হেবা আবু নাদা,

'মৃত মানুষের জন্য, অক্সিজেন নয়'! তিনি দেখেছেন,

\হজীবন বাঁচাতে প্যালেস্টাইনে খাদ্য-পানি-পথ্য নাই!

গাজানের রক্ত ফোরাত নদীর পানির চেয়েও সহজলভ্য!

আজ ফিলিস্তিনে সেই কারবালার হাহাকার-

ইস্রাইল পানির অস্ত্রে তৃষ্ণার্ত মানুষ মারে..

আইসক্রিম ট্রাক ভরা লাশে ড্রাকুলা শিশুর রক্ত পিয়ে।

আলস্নাহর সৃষ্ট সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, অভিশপ্ত বনি ইসরাইল-

\হমানবতার চরম সে বিধ্বংসী, হাসপাতালে বোমা ফেলে-!

\হজ্বালানি ব্যতিরেকে জেনারেটর বন্ধ হলে

ফোনের চার্জারে অতি অল্প বা অ্যনেস্থেসিয়া ছাড়া

ডাক্তার অপারেশন করে! ফার্মেসি নেই যুদ্ধাহত শহরে-

ডাক্তারের কোট ক্ষতের ব্যান্ডেজে, সে ক্ষত সেলাই হয়

ঘরের সুইয়েতে! ভিনেগার ভরসা এন্টিসেপটিকে!

আহতের ক্ষতে জন্মে পোকা, তাজা দেহ ওরা আজ খাবে!

জো, তোমার নাসারন্ধ্রে আসে কি মৃতু্যর আগরবাতি ঘ্রাণ?

শ্রবণের ইথারে ভাসে কি অ্যামবুলেন্সের সাইরেন?

তোমার সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম কখনো কি

আলোড়িত হয় ফাইট-অর-ফ্লাইট মোশনের মৃতু্যকূপে?

জেনে রেখো, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের সঙ্গে

\হপ্যালেস্টাইনিদের বাঁচার অধিকার আলবৎ আছে!

সে জলপাই বাগান ঘেরা ঘেঁটোতে

শুনেছো কি তুমি শব্দ হতে সদ্য শিশু জন্মে?

আর শব্দেই মানুষ অণু থেকে বিশ্লেষিত পরমাণু হয়?

অথবা ফিটাস মায়ের গর্ভকে কবরস্থান জেনে যায়?

জো, নেতানিয়াহু' ভ্রূণফুল হত্যাকারী!

গাজায় জন্মের আগে যে শিশু জন্মায়-

বিদু্যৎ বিহীন হাসপাতালের ইনকিউবিটরে তার মৃতু্য হয়!

মৃতু্যকূপে মা'র জীবনবসান হলেও, সন্তান জন্মে বাঁচে-

রাফায় বোমার ধ্বংসে মৃতপ্রায় দারিনের কন্যা-মক্কা

যেন যীশুর আবতার হয়ে ধ্বংসস্তূপে জন্মে!

এ শিশুর না আছে আশ্রয়, উষ্ণতা, পথ্য, খাবার-

দশ মিনিট অন্তর এখানে শিশু স্বর্গের পাখি হয়ে উড়ে যায়!

আমি তো কোনো শিশুর দিকে আর তাকাতে পারি না!

জো, মুছে যাক তাহলে লিখিত কবিতা!

গাজায় আগামী বসন্তের স্বপ্ন দেখার কেউ থাকবে না!

ইসরাইল এ জেনোসাইডকে মুক্তির লড়াই বলে

পবিত্র বাইবেল বুকে আদিম শিকারে নিরীহ আদম মারে-

ফিলিস্তানিরা কেবল অপেক্ষায় থাকে, মৃতু্য আসবে বলে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে