বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে বিয়েবিচ্ছেদ

মাহমুদুল হক আনসারী
  ২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

বর্তমান সমাজে বিয়েবিচ্ছেদ একটি সামাজিক অপরাধে পরিণত হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর বৈধ জীবনের নাম হলো বিয়ে। একে অপরকে নিজ নিজ ধর্মমতে এবং রাষ্ট্রীয় শঙ্খলা মেনে দাম্পত্য জীবনে মেনে নেওয়ার নামাই বিয়ে। বিয়ে অনুষ্ঠান উপরের দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা দেখাদেখি বোঝাবুঝির পর উভয়পক্ষের সর্বসম্মতিতে দুই নারী-পুরুষের মধ্যে দাম্পত্য জীবন শুরু। আমাদের সমাজে প্রধানত একটি দাম্পত্য জীবন প্রতিষ্ঠা করতে উভয়েরপক্ষ থেকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয় এবং সম্মতির মাধ্যমে এ অর্থ তাদের সুখী দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য দুইজনের অভিভাবক খরচ করে। বিশেষ করে মেয়ে পক্ষকে প্রচুর অর্থ তথা যৌতুক প্রদান করতে হয়। অলিখিত অঘোষিতভাবে মেয়ে পক্ষকে ঘরের প্রায় সমস্ত ধরনের ব্যাবহৃত জিনিসপত্র বর পক্ষকে দিতে হয়, এর বাইরে কনে পক্ষকে সাধ্যমতো বরযাত্রী আপ্যায়নের বড় ধরনের খরচ করতে হয়।

বর পক্ষ মেয়ে পক্ষের আলাপ-আলোচনার সম্মতিতে মোহরানা ধার্য করেন। বর্তমান সমাজে মোহরানা বা কাবিনের অঙ্কটির মূল্য বেশি রাখার সংস্কৃতি প্রচলন হয়েছে। সামর্থ্য আছে কি নেই বিবেচনার বাইরে গিয়ে মেয়েকে কাবিন দেওয়া হয়। সে কাবিন অনেক ক্ষেত্রে আদায় করে না বলে অভিযোগ শুনা যায়। উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য জীবন চলতে থাকে। কাবিনের অর্থ নিয়ে মেয়ে পক্ষ চুপচাপ থাকে। স্বামীর সঙ্গে সংসার করে। পরিবারের অন্য সদস্য থাকলে তাদের সঙ্গে মন রক্ষা করে সংসার জীবন চালাতে থাকে। তবুও দাম্পত্য জীবন সুখী করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কখনো কখনো ঝগড়া-ঝাটি হয়। পাওয়া না পাওয়া, সুখ-শান্তি, একে অপরের অধিকার পূরণ করতে গিয়ে ঝামেলা লেগে যায়। ঝামেলা কোনো সময় স্বামীর পক্ষ থেকে অথবা শাশুড়ির মাধ্যমে, অথবা পরিবারের অন্য যে কেউ এর মাধ্যমে হতে পারে। যৌতুক আদায়ের জন্য হতে পারে। হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর দৈনন্দিন কর্মজীবনের অশান্তি আসতে পারে। যে ভাবেই হউক যখন উভয়ের মধ্যে অশান্তি শুরু হয় তখন একে অপরকে বিচ্ছেদ করার চিন্তা করে। বিচ্ছেদ পুরুষ-নারী দুজনেই দিতে পারে। মুসলিম সমাজে তার একটা বিধান আছে। সামাজিক আইন আর পারিবারিক বিধান রক্ষা করে পুরুষ পক্ষ অথবা নারী পক্ষ তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে উদ্ভব সমস্যা যদি নব্বই দিনের মধ্যে সমঝোতা না হয়, তাহলে তালাক কার্যকর হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে পারিবারিক আইনে আছে। সবকটি দফায় স্বামী বা স্ত্রী যার কাছে পাঠানো হবে তার ঠিকানার সঙ্গে স্বামী বা স্ত্রী যাকে সেটি পাঠানো হবে তার ঠিকানার সঙ্গে স্বামী বা স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশের কপি প্রদান করতে হয়।

বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্রমাগত হার বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য আইনঅনুযায়ী মীমাংসার সময় নব্বই দিন রাখা হয়েছে। এর অর্থ হলো এ সময়ের মধ্যে তারা যদি চান সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে পারেন। তবে বেশির ভাগ দাম্পত্য জীবন তালাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। মামলা আর বিচারের পর ক্ষতিপূরণের অর্থ গুণতে হয়। আজকের সমাজে বিয়ের অনুষ্ঠান কঠিন হয়ে পড়ছে। বাস্তবে বিয়ে নামক কাজটি এক সময় সহজভাবে সম্পন্ন হতো। এখন সেটি সম্পন্ন করতে উভয়পক্ষকে কাড়িকাড়ি অর্থ খরচ করতে হয়। একশ্রেণির কতিপয় নারীকে দেখা যায় তারা বিভিন্ন প্রকারের ছলচাতুরী প্রকাশ করে পুরুষদের আকৃষ্ট করে। পুরুষ যথাসময়ে বুঝতে না পারলেও পরবর্তী সময়ে সেটি টের পায়। তখন আর কিছুই করার থাকে না। সে কারণে বৈধ স্বামীকে তালাক বা বিচ্ছেদের নোটিশ দিয়ে বৈধ স্বামীর সম্পত্তির অর্থ মেরে খাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। আমাদের দেশে অসংখ্য বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ ও যে পরকীয়া করছে না তা কিন্ুত্ম নয়। তবে নারীর পক্ষ থেকে সেটি বেশি হিসেবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া যায়। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনে বিচ্ছেদ কর্মকান্ডে বেশি হচ্ছে বলে সমাজ চিন্তকরা মনে করেন।

নারীদের ব্যাপকভাবে স্বাধীনতা, চাকরি, ব্যবসা, উদ্যোক্তা নানা সামাজিক পরিবেশে তাদের ক্ষমতার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমাজ গবেষকরা মনে করছেন, ব্যাপকভাবে নারী সমাজ নানাভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে এখন তারা নিজ স্বামীকে বেশি গুরুত্ব দিতে চায় না। প্রয়োজন অপ্রয়োজনে স্বামীর ওপর ক্ষমতার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। স্ত্রী তার যুক্তি এবং ক্ষমতার সক্ষমতা বাড়াতে চায়। স্বামী পক্ষের লোকজনের অধিকার বা দায়িত্ব সে পালন করতে চায় না। নানা বিষয় আরও গভীরভাবে জড়িত হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদের মধ্যে চট্টগ্রাম কাজী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ কাজী জাহাঙ্গীর আলম হেলালী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারী-পুরুষ একে অপরকে ভালোবেসে তড়িগড়ি করে পরিবারের অজান্তে একে অপরকে বিয়ে করে। সেখানে মেয়ে পক্ষ কু-মতলবে বড় অংকের কাবিন বসায়। বাস্তবে ছেলের ওই পরিমাণ কাবিন প্রদানের সামর্থ্য নেই। তবুও মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিরাট অংকের কাবিন ঘোষণা করে। দেখা যায়, কয়েক মাস অথবা অল্প সময়ের ব্যবধানে সেই বিবাহ ভেঙে যায়। ওই নারী আরেক পুরুষকে ভালোবাসে। তার সঙ্গে চলে যায়। আর আগের স্বামীকে তালাক নোটিশ দেয় এবং আদালতে তার কাবিনসহ অন্যান্য অধিকারের জন্য মামলা তুলে। বছরের পর বছর মামলা চলে ওই পুরুষ সামর্থ্য না থাকলে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, একশ্রেণির নারী এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে অবাধে মেলামেশা হচ্ছে। ফলে বৈধ স্বামীর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে অথবা ষড়যন্ত্র মূলকভবে পর পুরুষের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় নব্বই দিনের বেঁধে দেওয়া বিধান পর্যন্ত মেনে নিচ্ছে না। দেখা যায় তালাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরেক জনকে বিয়ে করে তার সঙ্গে সংসার জীবন শুরু করছে। কতিপয় নারী অতিলোভ-লালসা পরকীয়ায় পরিণতি এ অবস্থার সৃষ্টি। ফলে এসব নারী পুরুষের আগের সংসারের সন্তান মাতা-পিতার আদর যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের জীবনে নেমে আসে অসহনীয় দুঃখ দুর্দশা। না পাওয়ার অনেক কষ্ট। এ বিষয়ে নারী-পুরুষ উভয়কে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অহেতুক অপ্রয়োজনীয় অথবা লোভ-লালসার পরে দাম্পত্য জীবন শান্তি ও সুখকর করতে উভয়ের মধ্যে সমঝোতার মনোভাব থাকতে হবে। যার যার অবদানের পারিবারিক সম্মান ও স্বীকৃতি থাকা চায়। যে কোনো ধরনের প্ররোচনা আর পরকীয়া থেকে উভয়কে রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, আদর্শ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সুখী সুন্দর দাম্পত্য জীবনের বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে