রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বখ্যাত নারী শাসক রানী আরওয়া আল সালিহ্‌

রানী মারওয়া দেশ চালানোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করেন। তিনি নিজে এসব নীতি মেনে চলতেন এবং প্রজা সাধারণও সানন্দচিত্তে এসব নীতিমালা মেনে চলত। আরওয়া প্রজাদের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন এবং এ জন্য তিনি ছিলেন সবার কাছেই শ্রদ্ধাভাজন।
তপন কুমার দাশ
  ২২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

এক বিশ্ব বিখ্যাত নারী শাসক আরওয়া আল সালিহ্‌। এখন থেকে প্রায় বারো শত বছর আগে দাপটের সঙ্গে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ইয়েমেন শাসন করেছেন এই নারী রাষ্ট্রনায়ক। তিনি দৃঢ় চিত্তে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে সব ধরনের বিদ্রোহ দমন করে রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হন। তার অপরিসীম দুরদর্শিতা এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে সুখসমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যে ঝলমল করে উঠে ইয়েমেন। তার এই পঞ্চাশ বছরের শাসনকালকে ইয়েমেনের স্বর্ণযুগ বলেও অভিহিত করা হয়।

মরক্কোর লেখক ফাতেমা মেরনিসির লেখা 'ফরগটেন্‌ কুইন অব্‌ ইসলাম' বইতে এ নারী শাসকের সম্পর্কে বিশদভাবে লেখা হয়েছে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন সমাজ গবেষকের লেখায়ও সাহস ও বিচক্ষণতা এবং শাসনকার্যে পারদর্শিতার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন মারওয়া আল সালিহ্‌। গবেষকদের মতে তিনিই ছিলেন ইয়েমেনের সালিহ্‌ রাজবংশের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।

১০৪৮ সালে ইয়মেনের হারাজ নামক স্থানে আরওয়া আল সালিহ্‌ জন্মগ্রহণ করেন। ইয়েমেনের সে সময়ের শাসক আলী আল সালিহ্‌ ছিলেন তার মামা। ১৭ বছর বয়সে আহমদ আল মুকাররম বিন আলীর সঙ্গে মারওয়ার বিবাহ হয়।

১০৬৭ সালে ইয়েমেনের শাসক আলী ইবনে আল সালিহ্‌ মারা যাওয়ায় মারওয়ার স্বামী আহমদ ইয়েমেনের রাজ সিংহাসনে বসেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ ও রাজকার্যে অক্ষম হয়ে পড়ায় আরওয়ার হাতেই শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেই আরওয়া এডেন, সানা-সহ নানা অঞ্চলে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দক্ষতা ও শক্তিমত্তার ব্যবহার করে বিবাদমান নানা মতাবলম্বী দলগুলোকে নিজ পক্ষে নিয়ে আসতে সমর্থ হন। এ জন্য তিনি তার বিশ্বস্ত লোকদের মধ্য থেকে সেনানায়ক নিয়োগ দেন। উজির পদেও যথাযোগ্য ও আস্থাভাজন ব্যক্তিদের নিয়োগ দান করেন।

ইতিহাসবিদরা মনে করেন, আরওয়া আল-সালেহির নামে মসজিদে খুৎবা পাঠ এবং তার নামাঙ্কিত মুদ্রা প্রচলন তাঁকে ইতিহাসে নারী শাসকদের মধ্যে নিসঃন্দেহে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছে। ইতিহাসবিদ আবদুলস্না আল খাওর লিখেছেন, ইয়েমেনের ইতিহাসে মারওয়ার রাজত্বকাল ছিল সমৃদ্ধির, জাঁকজমকপূর্ণ এবং শান্তিময়। তার মতে, রানী মারওয়া দেশ চালানোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করেন। তিনি নিজে এসব নীতি মেনে চলতেন এবং প্রজা সাধারণও সানন্দচিত্তে এসব নীতিমালা মেনে চলত। আরওয়া প্রজাদের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন এবং এ জন্য তিনি ছিলেন সবার কাছেই শ্রদ্ধাভাজন।

ইয়েমেনের রাজধানী সানা'য় নির্মিত মসজিদটি তিনি সম্প্রসারণ করেন এবং আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত করেন। জিবলাতে রাজধানী স্থানান্তরের পর সেখানে তিনি ৩৬৫ কক্ষবিশিষ্ট বিশাল এক রাজপ্রাসাদ তৈরি করেন। তিনি সেখানে একটি বিশাল মসজিদও নির্মাণ করেন। এ মসজিদটি এখন ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়াও রানী আরওয়া নানা স্মৃতিস্তম্ভ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও মসজিদ নির্মাণ করেন। যার কিছু কিছু অদ্যাবধি ইয়েমেনে বিদ্যমান।

১১৩৮ সালে এ বীর নারী, শাসক ইন্তেকাল করেন। জিবলায় তার প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশেই তাকে কবর দেয়া হয়।

তার স্মরণে সানার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় কুইন আরওয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরও নানা প্রতিষ্ঠান। আর এসব কিছু প্রতিনিয়ত উদ্দীপ্ত করে বর্তমান প্রজন্মকে মারওয়ার মতো দেশপ্রেমিক, সাহসী, কীর্তিমান আর খ্যাতিসম্পন্ন হতে। আর এসব কিছুর ফলেই রানী আরওয়া অমর হয়ে রয়েছেন মানুষের হৃদয়ে, ইতিহাসের পাতায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে