রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার অপরাধের শিকার নারী

একজন নারীও যখন অন্য নারীকে সাইবার হেনস্তা করে তখন তার মাথায় দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা সামাজিক উচ্চক্রমের পুনরুৎপাদন ঘটে। যেমন, সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাকে নিয়ে যারা আপত্তিকর মন্তব্য করলেন তাদের ব্যাপারে সাকিবের স্ত্রী শিশির যখন জানালেন যে তারা বিষয়টি নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছেন না। অনেকেই ক্ষেপে গিয়ে মন্তব্য করলেন, শিশির স্বার্থপর, অকর্মণ্য গৃহিণী, ঘিলুহীন নারী বা স্বামীর আলোয় আলোকিত ইত্যাদি। অথচ এসব মন্তব্যের মাধ্যমে তারাও তাদেরই মতো আচরণ করলেন যারা সাকিবকন্যার প্রতি আজেবাজে মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছিল। দুই পক্ষের কেউই কোনো অংশে কম নেতিবাচকতা প্রকাশ করলেন না। প্রকৃতপক্ষে ঘৃণা যে রূপেই প্রকাশিত হোক না কেন তা ঘৃণাই।
সাদিয়া আফরিন
  ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রীর সঙ্গে ক্যাম্পাসে এক সহপাঠীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরে তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। কথোপকথন ও ভিডিও অ্যাপ 'ইমু'তে চলতে থাকে তাদের যোগাযোগ। সম্পর্কে অন্তরঙ্গতা হলেও সেই প্রেম টেকেনি। তবে এই ফাঁকে প্রেমিক তার কিছু ছবি তোলেন। পরে সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে নানা কুপ্রস্তাব দেন। এরপরও ছাত্রীটি লোকলজ্জার ভয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

এ ধরনের সাইবার ক্রিমিনালদের ঠেকাতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরাপদে বিচরণের কৌশল, সংশ্লিষ্ট আইনের ব্যাখ্যা, আক্রান্ত হলে তা থেকে রক্ষার উপায়, অভিযোগ জানানোর সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিসহ সাইবার অপরাধের নানা বিষয়ে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

বেসরকারি সংস্থা 'সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন)' প্রকাশিত ২০২২ সালের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ১৯৯ জনের মধ্যে চালানো জরিপের ফলাফলে চলতি বছর ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ মানুষ সাইবার বুলিংয়ের শিকার, যার মধ্যে নারী ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও (পর্নোগ্রাফি) ব্যবহার করে হয়রানি ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ফটোশপে ছবি বিকৃত করে হয়রানি ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি আরও বলছে, ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের ৭৩ দশমিক ৪ শতাংশই আইনের আশ্রয় নেন না। লোকলজ্জার ভয়সহ বিভিন্ন কারণে অপরাধের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক কাজী মুহায়মিন আস সাকিব বলেন, 'বর্তমান সময়ে আমাদের মেয়েরা অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছে বেশি। আমরা তাদের যত বেশি সচেতন করতে পারব, অপরাধগুলো ততই কমে আসবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাসওয়ার্ড বা কোড একান্ত ব্যক্তিগত। এটি কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। এই একটি বিষয়ে সচেতন করা গেলেই তারা হ্যাকিং থেকে বেঁচে যাবে।'

এই আধিপত্যবাদী চিন্তায় মানুষের লৈঙ্গিক পরিচয়ই মুখ্য, এমনকি একজন শিশুরও। অনলাইনে কোনো ব্যক্তিকে জানার সুযোগ বাস্তবের চেয়ে কম, সেহেতু নারীর লৈঙ্গিক পরিচয়ই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এই সামান্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একজন অচেনা-অজানা নারীকে তার ব্যক্তি জীবন পরিচালনা করার ব্যবস্থাপত্র (কী করতে পারবে বা পারবে না) দিতে থাকেন আধিপত্যবাদীরা।

যারা এই ব্যবস্থাপত্রের বাইরে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরতে চান তাদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে অনলাইনের পরিবেশ সাফসুতরো রাখাই থাকে অধিকাংশ অনলাইন পুলিশি তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য। যার ফলে ছড়িয়ে পড়ে নারীর প্রতি ঘৃণা।

নারীর বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং শুধু যে আধিপত্যের ধারণা থেকেই আসে এমন নয়। যেহেতু অনলাইন এক ধরনের সামাজিক সমাগমস্থলে পরিণত হয়েছে সেহেতু আমরা আমাদের স্বর ছড়িয়ে দিতে চাই।

ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রাম মাধ্যম যাই হোক না কেন, এগুলো একজন ব্যক্তির জন্য ভার্চুয়াল স্পেস তৈরি করে। এই স্পেসের মাধ্যমে ব্যক্তি তার চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা প্রভৃতি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। ফলে আশপাশের সবাই যখন ভার্চুয়ালি নিজেকে তুলে ধরতে থাকে তখন স্বভাবতই ব্যক্তি এতে এক ধরনের চাপ বোধ করেন। অংশগ্রহণ করতে না পারলে বিচ্ছিন্নতাবোধ করেন এবং এ থেকে নিজের স্বতন্ত্র সত্তা তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ হন।

এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তি এক ধরনের সামাজিক স্তরায়নে যুক্ত হয়। ব্যক্তি মনে করতে থাকে আমিও তো কিছু না কিছু করছি, আমি কেন এই সামাজিকতায় অংশগ্রহণ করব না? আমারও তো প্রতিভা আছে। এই স্তরায়নের ক্ষেত্রে ব্যক্তি আকর্ষণীয় অথবা আক্রমণাত্মক এ দুই ধরনের কৌশল অবলম্বন করে।

ব্যক্তি ক্রমাগত এটা করতে থাকে 'নিজ'কে নির্মাণের তাগিদ থেকে। অনেক সময় অনলাইনে ব্যক্তি এমন এক ধরনের 'নিজ' তৈরি করে, যে 'নিজ' অফলাইন ব্যক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিকও হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপারটি অনেকটা ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইডের কাহিনীর বাস্তবতার মতো। অর্থাৎ ব্যক্তিচরিত্র পরিপ্রেক্ষিতভেদে একেবারে বিপরীতমুখী বৈশিষ্ট্যকেও ধারণ করতে সক্ষম। যা মোটা দাগে ভালো-মন্দ বনাম অনলাইন-অফলাইন এ রকম বৈপরীত্যকে হাজির করে।

বেশিরভাগ সময় অনলাইন বাস্তবতা আমাদের মধ্যে এক ধরনের মুহূর্তের অনুভূতি প্রকাশের চাপ তৈরি করে। সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়। অনলাইনে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হওয়ায় ব্যক্তি নিজের ভিতরের অস্থিরতা কমাতেও সেখানে প্রশান্তি খোঁজে।

অনলাইন কর্মকান্ডের জন্য ব্যক্তির কারও কাছে জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে অনলাইন আচরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির দায়দায়িত্ব নেই বললেই চলে। মানুষ এমন কিছু হয়তো করে বা বলে যা অফলাইনে চট করে করতে বা বলতে চাইবে না। কারণ ব্যক্তির মাথায় থাকে যে একটি পোস্ট দিয়ে বা কমেন্ট করে সেটি মুছে ফেলা যায়। এভাবে ব্যক্তিগত অস্থিরতা কমাতে গিয়ে মানুষ এমন অনলাইন ব্যবহারকারীকেও আঘাত করে যার সঙ্গে তার পরিচয় নেই।

অনলাইনে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি একটি জনপ্রিয় প্রবণতা হলো নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণা উগড়ে দেওয়া। এটি করা হয় দীর্ঘদিনের লৈঙ্গিক ভিন্নতা ও সামাজিক নির্মিতি এবং পুরুষতান্ত্রিক ভাবাদর্শকে পুঁজি করে। সচেতনভাবে অথবা অসচেতনভাবে হোক আমরা অনেকেই এটা করে থাকি।

ফলে একজন নারীও যখন অন্য নারীকে সাইবার হেনস্তা করে তখন তার মাথায় দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা সামাজিক উচ্চক্রমের পুনরুৎপাদন ঘটে। যেমন, সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাকে নিয়ে যারা আপত্তিকর মন্তব্য করলেন তাদের ব্যাপারে সাকিবের স্ত্রী শিশির যখন জানালেন যে তারা বিষয়টি নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছেন না। অনেকেই ক্ষেপে গিয়ে মন্তব্য করলেন, শিশির স্বার্থপর, অকর্মণ্য গৃহিণী, ঘিলুহীন নারী বা স্বামীর আলোয় আলোকিত ইত্যাদি।

অথচ এসব মন্তব্যের মাধ্যমে তারাও তাদেরই মতো আচরণ করলেন যারা সাকিবকন্যার প্রতি আজেবাজে মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছিল। দুই পক্ষের কেউই কোনো অংশে কম নেতিবাচকতা প্রকাশ করলেন না। প্রকৃতপক্ষে ঘৃণা যে রূপেই প্রকাশিত হোক না কেন তা ঘৃণাই।

অনলাইন ব্যবহারকারীরা সাধারণত এক ধরনের ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গিকে মান ধরে নিয়ে এই ঘৃণা প্রকাশ করে। কোনো দৃষ্টিভঙ্গি পছন্দ না হলে সঙ্গে সঙ্গে আঘাত করে, ঘৃণাযুক্ত মেসেজ, হুমকিযুক্ত ইমেল, মিথ্যা তথ্য সাজিয়ে গুজব ছড়িয়ে দিয়ে, আপত্তিকর ছবি, ভিডিও তৈরি ও প্রচার করে সাইবার হেনস্তা ঘটায়। এটি মূলত আন্তঃব্যক্তিক হেনস্তার এক সাম্প্রতিক ধরন।

নারীর প্রতি অনলাইন হেনস্তার চিত্র তুলে ধরতে কিছু শব্দমালা ব্যবহার করা হয়, যেমন, 'কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য,' 'বিকৃত রুচির পোস্ট,' 'নোংরা মানসিকতার ফেসবুক ব্যবহারকারী,' 'যেনতেন লোকজন ব্যবহারের ফলে অনলাইন পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে' ইত্যাদি।

লক্ষ্যণীয়, এসব শব্দমালা ব্যবহার করা মূলত অনলাইনকে অফলাইন বাস্তবতা থেকে আলাদা করে দেখতে চাওয়ার প্রবণতা। এতে আমরা বোঝাতে চাই যে অনলাইন হবে 'ভালো', 'সুন্দর' ও 'সুশীল' মননধারীদের জায়গা। কিন্তু আদতে অনলাইন কুরুচি, বিকৃতি, নোংরামি এসব বিষয়কে অফলাইন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। প্রতিদিনই এটা ঘটছে।

বিশেষ করে নারীর প্রতি কুরুচি বা বিকৃতি বা ঘৃণা যেভাবে পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজে নানাভাবে ছড়িয়ে আছে, চর্চিত হচ্ছে, তার অনলাইন সংস্করণ হচ্ছে সাইবার হেনস্তা বা হয়রানি। অফলাইন বাস্তবতার চাইতে অনলাইনে বরং এসব আচরণ অনেক সহজ। কেননা অনলাইনে সহজে নামহীন হওয়া যায়, পরিচয় লুকিয়ে ফেলা যায়, চাইলে আইডিও মুছে ফেলা যায়। এই যে নাম-পরিচয়হীন হয়ে যাওয়ার সুযোগ এটিও ব্যক্তিকে নারীর বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করে।

ঘটনা অনলাইনে ঘটলেও তার প্রভাব অফলাইন বা বাস্তব জীবনেও পড়ে। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা গেছে, সাইবার হেনস্তার শিকার নারীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনেও ভয়ংকর চাপ তৈরি হয়। বয়ে আনে হতাশা, বিষণ্নতা, অনিদ্রা ইত্যাদি। একটি মিথ্যা গুজব ডেকে আনে অসহনীয় বিপর্যয়।

বিশেষ করে শিশু-কিশোরীরা, যারা ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অনলাইনে পড়াশোনা, গেইমিং, চ্যাট করতে গিয়ে তারা নানা ধরনের অনুপযুক্ত ভাষা ও বিষয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। যেমন গালাগালি, বর্ণবাদ বা যৌনতা, যা তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সামনে ফেলছে।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় তারা তা জানে না। বাবা-মা-অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করতে ভয় পায়। কারও কাছে বলতে না পেরে, চাপ সামলাতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা করে বা আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালায়।

এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪৬ শতাংশ অভিভাবক সন্তানের সঙ্গে অনলাইন ব্যবহার ও আচরণ নিয়ে আলোচনা করেন। তবে অনেক অভিভাবকই জানেন না যে তার সন্তানরা অনলাইনে কী করে।

করোনা পরিস্থিতিতে স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা অনলাইন ক্লাসের জন্য দিনের বেশিরভাগ সময়ই কম্পিউটারে কাটাচ্ছে। জেনে, না জেনে অথবা কৌতূহলের বশে তারা অনলাইন প্রতারণা, হেনস্তা, নির্যাতনের শিকার হতে পারে। খুব সচেতনতার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে।

পিতামাতা এবং অভিভাবকদের সবসময় নজর রাখতে হবে ছেলেমেয়ে কম্পিউটারে কী করছে। সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। 'বাবা-মা জানলে বকা দেবে বা কষ্ট পাবে' এসব ভেবে তারা যেন বিষয়টিকে নিজেদের মধ্যে চেপে না রাখে। এ বিষয়ে বাবা-মাকেই এগিয়ে আসতে হবে।

সাইবার হেনস্তা-অপরাধ কী বা এ থেকে কিভাবে মুক্ত থাকা যায়, এ বিষয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে হবে অভিভাবকদের। সন্তানদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে। তারা যেন একা একা কোনো সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করতে না যায়। শিশু-কিশোরী বা নারী প্রত্যেককেই ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে অনলাইন আচরণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

অনলাইন যে একটি আলাদা জগৎ সেটি বুঝতে হবে। এখানে হেয়ালি করার সুযোগ নেই। এখানেও ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা, আচরণ জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়। ফলে নিজের আচরণের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।

কিছু একটা লিখলে বা করলে একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী দেখতে পায়, সেটি রেফারেন্স হিসেবে থেকে যায়, কোনো পোস্ট বা কমেন্ট মুছে ফেললেও তা যে চিরতরে মুছে যায় না বরং রেকর্ড থেকে যায় সেটিও বুঝতে হবে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের অনেকেই হয়তো জানে না যে সাইবার হয়রানির ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে রিপোর্ট করা যায়। সাইবার হয়রানির শিকার যে কেউ সরাসরি কথা বলতে পারেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে। এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হটলাইন ১০৯২১ নম্বরে নারীর প্রতি যে কোনো নির্যাতন-সহিংসতার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা যায়। অথবা সরকারের ৯৯৯ ইমার্জেন্সি হেল্পলাইন নম্বরেও সেবা পাওয়া যাবে।

আশার কথা বাংলাদেশে সাইবার হয়রানি প্রতিরোধে বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে নারীর প্রতি পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আচরণের বদল না আসা পর্যন্ত অনলাইন বা অফলাইনে হয়রানি বা নির্যাতন বন্ধ হবে না। এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে