রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মহননকারী নারী

নন্দিনী ডেস্ক
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সমাজে আত্মহত্যা করার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। শুধু আমাদের দেশেই নয় বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আত্মহত্যার প্রবণতা চোখে পড়ে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৮ লাখ মানুষ এই পথ বেছে নেয়। যদিও প্রচলিত আইনে আত্মহত্যা অপরাধ হিসেবে গণ্য। আত্মহত্যা জীবনের একটি অমীমাংসিত সমাধান। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, 'যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ/মরিবার হ'লো তার সাধ।' মরিবার সাধ- এই কথাটির মধ্যে অনেক তাৎপর্য বহন করে। স্বেচ্ছায় নিজের জীবন বিসর্জন দেয় ভীরুকাপুরুষ যারা তারা। এই কথাও সমাজে প্রচলিত রয়েছে। অথবা এটাও বলা যেতে পারে যে যারা জীবনকে ভালোবাসে না কেবল তারাই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যা মহাপাপ। ধর্ম এটাকে সমথর্ন করে না। বরং এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সমস্যা। ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মৃতু্যর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ এটি। প্রতি বছরই তা বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বে আট লাখ লোক আত্মহত্যায় মারা যায়। মৃতু্যর হার প্রতি লাখে ১৬ জন। স্থানীয় গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৬ থেকে ১০ জন, যা উন্নত দেশের কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদকসেবন বেড়ে যাওয়া, কমর্সংস্থানের অভাব, পারিবারিক কলহ, নিযার্তন, ভালোবাসায় ব্যথর্তা, পরীক্ষায় অকৃতকাযর্, বেকারত্ব, যৌন নিযার্তন, অপ্রত্যাশিত গভর্ধারণসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

নব্বই দশকের শুরুর দিকের কথা। ওই সময়ে বিশ্বে প্রতি বছর যত নারী আত্মহত্যা করেছিল, তার প্রতি ১০ জনের মধ্যে চারজনই ছিল ভারতীয় নারী। ভারত সরকার এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ল্যান্সেট বলছে, পৃথিবীর সব আত্মহত্যার প্রায় ২৫%ই করেছিলেন ভারতীয় নারীরা। অবশ্য ওই প্রবণতা অনেক কমেছে। আবার অন্যদিকে বলা হয়ে থাকে যে ভারতের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে খুব দ্রম্নত। এর একটা সুফল নারীরা পাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু অন্য দেশের নারী-পুরুষদের ভেদাভেদগুলো যত দ্রম্নত কমছে, আমাদের দেশে সেই গতিতে কমছে না। ফলে আমাদের দেশের নারীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা রয়েছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। নানা দুঃখ কষ্ট হতাশায় অপ্রাপ্তি আর বঞ্চনায় অনেকেই জীবনকে তুচ্ছভাবে। আত্মহননের মাধ্যমে জীবনের মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চলে যায়, ঘটাতে চায় জীবনের পরিসমাপ্তি। এটা কোনো সমাধান নয়। ভালোবাসাহীন জীবন কোনো জীবন নয়। ভালোবেসে বেঁচে থেকেই জীবনের সমাধান খুঁজতে হবে। জীবনের সমাধান জীবনের মধ্যেই নিহিত, আত্মহননের মধ্যে নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে